করোনা মোকাবিলায় ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে অ্যান্টিবডি টেস্ট

করোনা মহামারি মোকাবিলায় অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, যারা করোনাভাইরাসে মৃদু আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন, তাদের শরীরে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে। ফলে তাদের দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারি মোকাবিলায় অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, যারা করোনাভাইরাসে মৃদু আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন, তাদের শরীরে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে। ফলে তাদের দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

‘কোভিড-১৯’ এ আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবারও আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষার প্রয়োজন। অ্যান্টিবডি পরীক্ষার বিস্তারিত নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন।

সিএনএন জানায়, জটিল অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলে মারাত্মক পরিণতির সম্ভাবনা আছে।

এপ্রিলের শুরুর দিকে হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডা. অ্যান্টনি ফওজি বলেন, ‘আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে হলে অ্যান্টিবডি টেস্ট দরকার। দেশে কত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, ভাইরাসটি কতখানি বিস্তার করছে অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমেও তা জানা যাবে।’

গত ৫ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এর এক দিন পর, ৬ এপ্রিল ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স (এনএএস) কমিটির সদস্যরা হোয়াইট হাউজকে জানান, এই মূহূর্তে অ্যান্টিবডি টেস্ট চালুর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। পরীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ আছে।

এনএএসের এমন ঘোষণার পরও গত ১০ এপ্রিল ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অ্যান্টিবডি টেস্ট চালুর কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই আমরা অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু করবো। কোনো নাগরিকের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে কিনা তা জানতে এই পরীক্ষা আমাদেরকে সাহায্য করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রে এখনই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা চালু হলে কয়েক ধরনের সমস্যা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রথমত, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) অ্যান্টিবডি টেস্টের ব্যাপারে কোনো নীতিমালা গ্রহণ করেনি। ফলে, কোম্পানিগুলো নিজেদের মতো করে অ্যান্টিবডি টেস্ট করাতে পারবে। সেক্ষেত্রে টেস্ট আসলেই কার্যকর কিনা, নিয়ম মেনে হচ্ছে কিনা সেসবের কোনো বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।

দ্য আমেরিকান পাবলিক হেলথ ল্যাব অ্যাসোসিয়েশন বলছে, নীতিমালা না থাকার কারণে ইতোমধ্যেই বাজারে নানা ধরনের নিম্নমানের, নকল টেস্ট কিট বিক্রি শুরু হয়েছে।

ডা. ডেভিড রেলমান জানান, কারো অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় করোনা নেভেটিভ আসলে সে তার শরীরে কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে ধরে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে শুরু করবে। তাই, কোনোভাবে যদি অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় ভুল ফলাফল আসে তাহলে তা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে।

কয়েকদিন আগে, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মান সম্পর্কে খোলামেলাভাবে হোয়াইট হাউসে চিঠি পাঠান এনএএসের বিজ্ঞানীরা। চিঠিতে তারা জানান, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফল ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ, জটিল পদ্ধতি। এগুলো না মানা হলে ফলাফল ভুল আসবে। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ ল্যাবেই জটিল অ্যান্টিবডি টেস্টের জন্য শতভাগ মানসম্পন্ন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ নেই বলে জানান তারা।

দ্বিতীয়ত, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য যে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ প্রয়োজন তা কয়েকটি ল্যাবে থাকলেও সেগুলো দিয়ে সারা দেশে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব না।

তৃতীয়ত, অ্যান্টিবডি টেস্টে কোভিড-১৯ নেগেটিভ আসলে ভবিষ্যতে আর কখনো ভাইরাসের সংক্রমণ না ঘটার বিষয়টি এখনো প্রমাণিত হয়নি। কারো অ্যান্টিবডি টেস্টে নেগেটিভ আসলেই যে তিনি ভাইরাস প্রতিরোধী হবেন সেটি এখনও নিশ্চিত না।

ডা. হার্ভি ফাইনবার্গ জানান, জাতীয় স্কেলে জনসংখ্যার অনুপাতে কতজন করোনা প্রতিরোধী তা জানতে এই টেস্টের প্রয়োজন। পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্যও এই টেস্টের প্রয়োজন আছে।

করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখের বেশি। সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ৫০ হাজার।

তিনি বলেন, ‘সুস্থ হয়ে ওঠার পর সবাই জানতে চায় তার করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে কিনা। মানুষ তার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে কিনা, নির্ভয়ে বের হতে পারবে কিনা, কাজে ফিরে যেতে পারবে কিনা— এগুলো কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে? যারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তাদেরকে কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে? বর্তমানে ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এটা নিয়ে আমাদেরকে এখন থেকেই ভাবতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago