ত্রাণের অপেক্ষায় দুর্গম অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী

ভাতের সঙ্গে লতাপাতা খেয়ে দিন কাটছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর। ছবি: স্টার

বান্দারবানের দুর্গম অঞ্চলে বাস করেন ইং চং ম্রো। তার ঘরে মাত্র ৫ কেজি চাল ছাড়া আর কোনো খাবার নেই। তাই তিনি এখনও জানেন না আগামী ২-৩ দিন পরে পরিবারকে কী খাওয়াবেন।

ইং চং লামার দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়ার একজন জুম কৃষক। আর তার পরিবারে আছে পাঁচ জন সদস্য।

তিনি বলেন, ‘গত আগস্টে জুম চাষ করে ১৫০ কেজি চাল পেয়েছিলাম। যা তিন মাস পরেই শেষ হয়ে যায়। তখন থেকেই বাগানের কলা এবং অন্যান্য ফল বিক্রি করে পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছি। তবে, গত এক মাস ধরে করোনার কারণে বাইরে যেতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দিন হয়ে গেল আমার দুই সন্তানকে ভাতের সঙ্গে মাংস দিতে পারিনি। গত এক মাস ধরে ভাতের সঙ্গে শুধু বুনো লতাপাতা খেয়ে বাঁচার জন্য সংগ্রাম করছি।’

লাংকম পাড়ার আরেক বাসিন্দা মেনরাও ম্রোও একই কষ্টের কথা জানালেন। মেনরাও বলেন, ‘দু দিন পর যখন ঘরে থাকা বাকি চাল শেষ হয়ে যাবে তখন কীভাবে আমার তিন শিশুসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখব।’

‘গত বছর জুমের ধান ভাল হইনি। কলা, আম, আনারস, যেগুলো উৎপাদন করেছি করোনার কারণে সেগুলোও বিক্রি করতে পারছি না,’ বলেন চং রাও ম্রো নামের আরও একজন।

লাংকম ম্রো পাড়ার কার্বারি (প্রধান) লাংকম ম্রো বলেন, ‘এ পাড়াতে ১৫ পরিবারের বসবাস। যাদের মধ্যে ১০ টি পরিবার মারাত্মক খাদ্য সংকটে আছেন। আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণের কথা শুনে খাসুর (গেট) দিয়ে ০৩ মার্চ আমাদের পাড়াটি নিজেরাই বন্ধ করে রেখেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘পাড়াবাসীরা খাবার সংকটে থাকলেও এখনও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন সংস্থা আমাদের পাড়ায় সহযোগিতা করতে আসেনি।’

ম্রো নেতা সিং ইয়ং ম্রো বলেন, ‘খাসুর দিয়ে পাহাড়ে কোনো পাড়া বন্ধ করা হলে সেই পাড়ার কেউ আর বাইরে যান না। আবার বাইরের কাউকেও পাড়ায় আসতে দেয়া হয় না।’

ডেকিছড়া নতুন পাড়ার কার্বারি রেং ইয়ান ম্রো বলেন, ‘আমাদের পাড়ার বেশিরভাগ পরিবার খাবারের সঙ্কটে আছেন। মহামারি থেকে বাঁচার জন্য মার্চের ০৭ তারিখ থেকে আমরা খাসুর দিয়ে আমাদের পাড়াটি বন্ধ করে রেখেছি।’

লামা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ-জান্নাত বলেন, ‘আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যন্ত পাড়ায় বসবাসরত ম্রো জনগণের যারা খাদ্য সংকটে আছেন তাদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’

লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদ-উল-আলম বলেন, ‘আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাবার বিতরণ করেছি। তবে, পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ায় সবাইকে খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যারা খুব অভাবী তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে ওয়ার্ড সদস্যদের বলব।’

এলাকার ওয়ার্ড সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ‘২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারের পর আমি লাংকম পাড়ায় আর যাইনি। আগামীকাল সেখানে যাব। আমার ওয়ার্ডে প্রায় ১৩০০ পরিবার বসবাস করে আর আমি কেবল ১৪২ টি পরিবারের জন্য ত্রাণ সহায়তা পেয়েছি।’

বান্দরবানের আলীকদম, থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকার সব পাড়াগুলোর একই অবস্থা বলে অধিকাংশ পাড়া প্রধানরা জানিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Private airlines caught in a bind

Bangladesh’s private airline industry is struggling to stay afloat, hobbled by soaring fuel prices, punitive surcharges, and what operators describe as unfavourable policies. Of the 10 private carriers that have entered the market over the past three decades, only two -- US-Bangla Airlines and A

9h ago