শ্রমিক সংকটে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারা নিয়ে শঙ্কায় যশোরের কৃষক
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারবে কি না সেই আশঙ্কায় রয়েছেন যশোরাঞ্চলের কৃষক। শ্রমিক সংকটের কারণে সময় মতো তারা ক্ষেতের ফসল কাটা নিয়ে তাদের মনে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জেলার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা সাতক্ষীরা থেকে শ্রমিক আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কৃষকদের মতে, চলতি মৌসুমে যশোরে এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু, করোনার কারণে পাওয়া যাচ্ছে না ধান কাটার শ্রমিক। সময়মতো এই ফসল ঘরে তুলতে না পারলে সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
আগামী ১৫ দিন পর থেকেই ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু, করোনার কারণে সরকারি নির্দেশে মানুষ ঘরবন্দি থাকায় ধান কাটতে শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যশোর সদর উপজেলার ইছালী গ্রামের কৃষক রবিউল্লাহ রবি বলেন, ‘আমি ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে ক্ষেতের ধান পেকে উঠতে শুরু করেছে। আর দেড়-দুই সপ্তাহ পরেই ধানকাটা শুরু হবে। কিন্তু, শ্রমিক পাবো কিনা সন্দেহ হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য বছরে জেলার বাইরের এলাকা থেকে আসা শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলতাম। কিন্তু, এবার করোনার কারণে তারা আসতে পারবে কি না জানি না।’
খাজুরার প্রেমচারা গ্রামের আকতার হোসেন বলেন, ‘এ বছর যদি সময়মতো ধান ঘরে তুলতে না পারি তাহলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বোরো আবাদই আমাদের একমাত্র ভরসা। এই ফসল যদি ঘরে তুলতে ব্যর্থ হই তাহলে না খেয়ে মরতে হবে।’
চলতি বোরো মৌসুমে যশোরে বোরো ধানের ফলন এবার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে উল্লেখ করে যশোর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ সাড়ে ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলনেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক ড. মো. আকতারুজ্জামান বলেন, ‘সার্বিক করোনা পরিস্থিতিতে আমরা খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশেষ করে বোরো ধান যাতে কৃষক নির্বিঘ্নে ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে। তাই এ বছর কৃষকের ধান হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কেটে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেশিনটি পরিচালনার তেল খরচ দিয়েই ধান কাটার সুবিধা নিতে পারবেন কৃষক।’
‘এ বছর ২৪টি হারভেস্টার মেশিন সরকারের পক্ষ থেকে যশোর জেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, জেলায় আরও মেশিন রয়েছে। মোট ৬২টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে জেলার কৃষকদের সব ধান কেটে দেওয়া হবে,’ যোগ করেন তিনি।
কৃষিবিদ ড. আকতারুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমি যশোরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে করোনা পরীক্ষা সম্পন্ন করে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক এনে কৃষকদের কাজে সহযোগিতা করা হবে।’
Comments