‘আংশিক লকডাউনেই’ করোনামুক্তির প্রত্যাশা তুরস্কের

Turkey-1.jpg
জরুরি অবস্থা ঘোষণার আগে ইস্তাম্বুলের একটি সুপারশপের সামনে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই চলছে লকডাউন। বড় বড় শহরগুলোতে লোকজনকে ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। তবে লকডাউনের প্রচলিত নিয়মের বাইরে ব্যতিক্রমধর্মী নির্দেশনা নিয়ে এসেছে তুরস্ক।

সিএনএন জানিয়েছে, গত ১০ এপ্রিল তুরস্কের ৩১ প্রদেশে ৪৮ ঘণ্টার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি, ২০ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিকদের বাধ্যতামূলকভাবে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘সব নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়ার শক্তি তুরস্কের আছে। দয়া করে, সরকারি নির্দেশনা মেনে চলুন।’

২০ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বিবেচনা করে তাদেরকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুরো সপ্তাহ জুড়ে নতুন নিয়ম চালুর পর অনেকটাই বদলে গেছে তুরস্কের চিত্র।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নাগরিকরা বাইরে বের হতে পারছেন। তবে, ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হয়েছে। রেস্তোরাগুলোতে কেবল ‘হোম ডেলিভারি’ চালু করা হয়েছে। সীমিত সময়ের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থাও চালু রাখা হয়েছে।

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, আংশিক লকডাউন করোনা মহামারির অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ল্যানক্যাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট ডা. মুহাম্মদ মুনির বলেন, ‘এটা একটা বিকল্প ব্যবস্থা। করোনা আক্রান্ত ৮০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠে। তাই, যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভালো তারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারবেন। লকডাউনের একমাত্র সুবিধা হলো, রোগের বিস্তার কমানো যাতে হাসপাতালগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।’

কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজির অধ্যাপক ডা. জেরেমি রোজমেন জানান, এই ধরনের আংশিক লকডাউন সংক্রমণের প্রাথমিক স্তরে কার্যকর হয়। আবার কোনো দেশে যদি আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকে তাহলে সম্পূর্ণ লকডাউন কমিয়ে আংশিক লকডাউনের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আংশিক লকডাউনের জন্য করোনা নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। এটা নির্ভর করে, জনগণ নির্দেশনা মানছেন কী না তার ওপর। পাশাপাশি, বাড়ির বাইরে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহের উপরও নির্ভর করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তুরস্কে প্রতিদিন যত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তাতে অধিকাংশ দেশই পুরোপুরি লকডাউনের কথা বিবেচনা করতো। কারণ দেশটিতে যে হারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে আংশিক লকডাউন কার্যকর না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা ঝুঁকিপূর্ণ।’

অন্যদিকে, দেশটির স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইসিইউ’র ব্যবস্থা আছে বলে জানিয়েছে তুরস্ক সরকার। শুরু থেকেই প্রস্তুতি ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে আংশিক লকডাউন করে করোনা মোকাবিলা সম্ভব বলে জানিয়েছে দেশটি।

ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, স্পেনসহ ৩০টি দেশে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পাঠিয়েছে তুরস্ক।

দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইস্তাম্বুলসহ অন্যান্য অঞ্চলের স্কুলগুলোতে তৈরি হচ্ছে ফেস মাস্ক ও সুরক্ষা স্যুট। বাড়ির বাইরে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও দেশটিতে মাস্ক বিক্রি নিষিদ্ধ। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ফার্মেসিগুলোতে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। যারা বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না তাদের কাছে সরাসরি বাড়িতে মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও দেশটির স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশবাহিনীর সদস্যরা ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি বলছে, আজ শুক্রবার পর্যন্ত তুরস্কে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ হাজার ১৯৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৬৪৩ জন।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

41m ago