হালদায় মা মাছের ডিম সংগ্রহে সোনালি দিনের আশা
বংশ পরম্পরায় হালদা নদী থেকে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেন হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাসমুন্সির হাট এলাকার মোহাম্মদ ইলিয়াছ (৫৫)। হালদা নদীর তীর ঘেঁষেই তার বাড়ি। হালদা নদীর গতি-প্রকৃতি তার চিরচেনা। দেশব্যাপী চলা প্রায় তিন সপ্তাহের লকডাউনে তিনি দেখেছেন কীভাবে এই নদীর রূপ বদলে যাচ্ছে।
মোহাম্মদ ইলিয়াছ আশা করছেন, যদি প্রকৃতির সব অনুঘটক ঠিক থাকে তাহলে এবার মা মাছের ডিম সংগ্রহে সোনালি দিন ফিরে আসবে।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি নদীর স্বাস্থ্য দেখে বুঝতে পারছি দূষণ কমে আসছে। হয়তো লকডাউনের প্রভাব পড়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে, পাহাড়ি ঢল নামলে আর বজ্রপাত হলে মা মাছের ডিম দেওয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। আশা করা যায়, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি পরিমাণে মাছের ডিম পাব। তবে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।’
হালদা নদীর প্রধান দুই দূষণের উৎস ছিল হাটহাজারীর ১ শ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট ও এশিয়ান পেপার মিল। গতবছর উপজেলা প্রশাসন দুটিই বন্ধ করে দিয়েছে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া দ্য ডেইলি স্টরকে বলেন, ‘পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার কয়েকদিন আগে ও পরে মা মাছ ডিম হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। এ সময় ঝড়ো হাওয়াসহ বর্ষণ, বজ্রপাত ও পাহাড়ি ঢল নামলে মা মাছের ডিম ছাড়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, ‘হালদা দূষণের জন্য জন্য অন্যতম দায়ী ছিল এশিয়ান পেপার মিল ও হাটহাজারীর ১ শ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট। এ দুটি প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া, লকডাউনের কারণে বায়েজিদ অঞ্চলের বেশ কিছু কারখানা বন্ধ আছে। তার ইতিবাচক প্রভাব হালদায় পড়েছে।’
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত দেড় বছরে হালদা নদী থেকে এক লাখ ১৩ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। সমপরিমাণ বালি জব্দ করা হয়েছে। আমি নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে হালদায় মা মাছের সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। লকডাউনেও যেন ডিম বিক্রিতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সে জন্য আমরা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে হাটের ব্যবস্থা করবো।’
Comments