করোনা শনাক্ত রোগী খুঁজতে গেল এক রাত
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নয়নপুর গ্রামের সাত বছর বয়সী এক কন্যা শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে পৌঁছায়।
হাসপাতালের খাতায় নিবন্ধিত ঠিকানায় গ্রামের নাম ছিল বড় বাঁশগাড়া। সে অনুযায়ী শিশুটিকে খুঁজতে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেখানে দেখা যায়, ঠিকানা ভুল হয়েছে।
আশে পাশে খোঁজ করেও সন্ধান মেলে না। বিষয়টি রাণীশংকৈল থানায় জানানো হলে রাত ৮টার দিকে পুলিশ স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে বসে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে শুরু করে। তাতেও কোনো সমাধান পাওয়া যায় না।
আজ শনিবার সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মামিকে দেখতে এলে ল্যাবরেটরি অ্যাসিসট্যান্ট শিশুটিকে চিনতে পারেন। করোনা শনাক্ত রোগী এসেছে— এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ২৯ জন রোগী ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে যান।
বড় বাঁশগাড়া গ্রামবাসীরা বলেন, ‘পুরো ঘটনাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ছাড়া আর কিছু নয়। বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, এক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফিরোজ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে যে বয়স্ক নারী এসেছিলেন, তিনি ভুল ঠিকানা দেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আজ শিশুটিকে ও তার মাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে নেওয়া হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিশুটি কীভাবে আক্রান্ত হয়েছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৯ রোগী আতঙ্কিত হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন। বিকালে সংঘর্ষে আহত পাঁচ জন রোগী এলে তাদের ভর্তি নেওয়া হয়, তারাই শুধু চিকিৎসাধীন।’
হাটগাঁও গ্রামের মো. সুমন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের পাশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না— এ তথ্য জানার পরে গ্রামের ছেলেদের নিয়ে আমরা সারা রাত খুঁজেছি। স্বাস্থ্যকর্মীরা যেমন বর্ণনা দিয়েছিলেন, তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি।’
ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজুর রহমান সরকার বলেন, ‘গতকাল নমুনা পরীক্ষায় জানা গেছে, ২২ বছর বয়সী আরও এক যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার বাড়ি হরিপুর উপজেলার বীরগড় গ্রামে।’
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংবাদকর্মী খুরশীদ আলম শাওন বলেন, ‘এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা সবাইকে হতাশ করেছে।’
জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার সোহাগ চন্দ্র সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আক্রান্ত শিশুটির প্রতিবেশী ৩৫টি পরিবারকে আপাতত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। বাড়িগুলো লকডাউন করা হবে কি না তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
Comments