নিঃস্বার্থ হওয়ার আহ্বান রুবেলের
কোভিড-১৯ রোগের মহামারির এই সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটার-ফুটবলার, সবার ভূমিকা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। সুপারস্টার সাকিব আল হাসান, জামাল ভূঁইয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের খেলোয়াড়রা নিজ নিজ জায়গা থেকে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জনসাধারণকে সচেতন তো করছেনই তারা, পাশাপাশি আর্থিক সহায়তাতেও এগিয়ে এসেছেন। এমনকি একজন খেলোয়াড় আরেকজন খেলোয়াড়ের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। সম্প্রতি এমনই একটি ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল।
তবে ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের কর্মকাণ্ড একটু বেশিই নজরে এসেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার শুরুর সময় থেকেই নিয়মিত সচেতনতামূলক পোস্ট করে যাচ্ছেন জাতীয় দলের এই পেসার। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারা যায় তার সর্বোচ্চটা দিয়ে আর্থিক সাহায্য তো করছেনই, নিজ এলাকা বাগেরহাটে থার্মাল স্ক্যানারও বসিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংকটের সময়েও ঘটা নানা অনিয়ম নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন। দেশের এমন ক্রান্তিকালে ক্রিকেটটাই যেন গৌণ হয়ে উঠেছে তার কাছে। রুবেল সারাক্ষণ ভাবছেন দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আর সবাইকে আহ্বান করছেন নিঃস্বার্থ হওয়ার জন্য।
বর্তমানে রুবেলের কাছে দুটি জিনিস প্রধান। সামনের মহাবিপদ থেকে বাঁচতে যেগুলো মাথায় রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি। প্রথমত, সাধারণ মানুষদের খাদ্য সহযোগিতা দিতে হবে; দ্বিতীয়ত, মানুষকে আরও বেশি সচেতন করতে হবে। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত আলাপে তারকা ফাস্ট বোলার বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে ভয়াবহ সময় চলছে। এখন কি বলব, সচেতন থাকা ছাড়া উপায় নাই। ঘরে থাকতে হবে, এর বাইরে কিছু নাই। পাশাপাশি বাসায় থেকে যতটুকু পারা যায়, সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে হবে।’
নিজের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়ে স্বার্থ ত্যাগের বিষয়টি বুঝিয়েছেন তিনি, ‘আমাদের এলাকায় করোনাভাইরাস খুব বেশি ধরা পড়েনি। কিন্তু আমাদের এলাকার মূল সমস্যা, গরীব মানুষ অনেক। আমার বাসার এলাকায় তো অনেক বেশি। আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বাগেরহাটে আমার তিনটা বাড়ি। সবগুলোতে বলে দিয়েছি, যতদিন করোনাভাইরাস থাকবে, ততদিন কোনো ভাড়া দিতে হবে না। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমার আশেপাশের সাধারণ মানুষদের সাহায্য করার। যেহেতু ফেসবুকে কিছু মানুষ আমাদের অনুসরণ করে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষজনকে চেষ্টা করছি সতর্ক করতে।’
কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপারও অবশ্য ঘুরছে রুবেলের মনে। এই সময়ে জনগণের সবচেয়ে কাছে থাকার কথা জনপ্রতিনিধিদের, অথচ তাদের নিয়ে শুনছেন নানা ধরনের অপ্রীতিকর সংবাদ। সরকারি ত্রাণের চাল, তেল চুরির ঘটনাগুলো খুবই ব্যথিত করছে তাকে। স্বার্থান্বেষী মহলের এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি, ‘যারা দেশের এই পরিস্থিতিতে চাল, ডাল, তেল চুরি করে, তাদের নিয়ে কী বলব! তাদের কাজ... এ সময়ে পারলে নিজের থেকে আরও সাহায্য করার কথা, তা না করে সরকারি সাহায্যও চুরি করলে আসলে কিছু বলার থাকে না। এই জঘন্যতম কাজে আমাদের মাথা নিচু করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
করোনাভাইরাসের কারণে সমগ্র দেশই এখন ঝুঁকিপূর্ণ, একরকম লকডাউনই চলছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক মানুষদের আয়ের পথ। এখনই এসব দিকে নজর না দিলে সামনে বিপদ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন রুবেল, ‘তবে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থাই খারাপ। বিশেষ করে, গরীবদের অবস্থা। তারা বলছে, আমরা করোনায় মরব কি-না জানি না, তবে না খেয়েই হয়তো মরব। তখন কিন্তু ভিন্ন কিছু চিন্তা করতেও পারে তারা।’
এত কিছুর পরও দেশের পথ প্রদর্শকদের উপর আস্থা হারাচ্ছেন না রুবেল। দেশের সবাইকে তাদের উপরই আস্থা রাখতে আহ্বান করেছেন তিনি, ‘প্রশাসন, ডাক্তার, নার্স, সেনাবাহিনী- তাদের উপরই আস্থা রাখতে হবে। কারণ, তারাই মাঠে থাকে। তারাই কাজ করে। আপনি-আমি ঘরে বসে বড় বড় কথা বলতে পারি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কিছুই করার নেই।’
Comments