উপার্জনহীনতায় মানসিক চাপে ৫৮ শতাংশ মানুষ: গবেষণা প্রতিবেদন

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সবচেয়ে মানসিক চাপে আছেন যাদের একেবারেই কোনো আয় উপার্জন নেই এমন মানুষেরা। প্রভাব মোকাবিলায় পোশাক শ্রমিক ও শহরের বস্তিগুলোতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রাত্যহিক জীবনে যুদ্ধ করছে।
ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নয়, সর্বজনীন সুন্দর একটা বাংলাদেশের কথা ভাবি। স্টার ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সবচেয়ে মানসিক চাপে আছেন যাদের একেবারেই কোনো আয় উপার্জন নেই এমন মানুষেরা। প্রভাব মোকাবিলায় পোশাক শ্রমিক ও শহরের বস্তিগুলোতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রাত্যহিক জীবনে যুদ্ধ করছে।

ব্র‍্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ (জেপিজিএসপিএস), ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের ছয়টি পৃথক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। আজ শনিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জিপিজিএসপিএসের ৫ থেকে ১৩ এপ্রিল, ১ হাজার ৩০৯ জনের ওপর চালানো জরিপে দেখা যায়, একেবারেই আয় উপার্জন নেই ৫৮ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপে আছেন। আংশিক আয় আছে ২৯ শতাংশ গৃহস্থালি মানুষের এবং আয়ের ওপর প্রভাব নেই ১৩ শতাংশের।

গবেষণায় দেশের পোশাকখাত শ্রমিকদের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে  করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ৪৭ শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।  এ পর্যন্ত কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ৩৫ শতাংশ পোশাক শ্রমিক। বেশিরভাগ শ্রমিকই জানেন না কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

সম্মুখভাগে কাজ করছেন এমন ৬০ জন চিকিৎসক ও নার্সের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় গবেষণায়। দেখা যায়, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ৭৫ শতাংশ চিকিৎসক ও নার্স এবং প্রায় ৪০ শতাংশ স্বাস্থ্য সহকারী পিপিই পেয়েছেন। তবে সেইসব পিপিইর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তারা সরকারের আর্থিক প্রণোদনার চেয়ে যথার্থ পিপিই চান বলে জানিয়েছেন।

প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও খাবারের অভাবে কেবল শারীরিকভাবেই ক্লান্ত নন, পাশাপাশি তাদের মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তীব্র মানসিক চাপে রয়েছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, সব ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ রোগ, এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় এবং পিপিই এর ব্যবহার সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ পাননি।

কেমন করে কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে সে সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে বেশি সচেতন শহরের মানুষ ও পুরুষেরা। এদিক দিয়ে গ্রামের প্রতি পাঁচ জন নারীর একজন জানেন বিষয়টি সম্পর্কে।

কেবলমাত্র ৩৮ শতাংশ মানুষের সামাজিক দূরত্বের তিন ফুট রীতি সম্পর্কে জানা আছে। ১৬ শতাংশ মানুষ জানেন হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় কনুই দিয়ে মুখ ঢাকার কথা।

গবেষণায় ঢাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও হিজড়াদের মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে উচ্চমাত্রার ভীতি ও আতঙ্ক দেখা গেছে। এই জনগোষ্ঠীগুলোতে ভৎর্সনা, নজরদারি, বৈষম্য ও হয়রানি বেড়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা দানকারী, দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও প্রান্তিক মানুষের ওপর মহামারীর প্রভাব কমাতে। এগুলো হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ও মানসম্মত পিপিই সরবরাহ, তাদের কর্মক্ষেত্রের কাছেই বাসস্থানের ব্যবস্থা এবং চীনের উহানের ৭/১৪ মডেল অনুসরণ করা। যেখানে ৭ দিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনের মতো করে দায়িত্ব বণ্টন।

সেইসঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষের খাবার ও আর্থিক সহায়তা বাড়াতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে প্রচার এবং এই প্রচার কার্যকরী করতে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীভিত্তিক প্রচারনা চালানোর কথা বলা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Independents all-time high

The number of independent aspirants submitting nomination papers for the upcoming national polls is at an all time high.

5h ago