জীবনের অন্য ছবিও দেখে নিলেন লেম্যান

Darren Lehmann
ফাইল ছবি: এএফপি

‘ছেড়েছো তো অনেক কিছুই পুরনো অভ্যেস/ অসুখ বিসুখ হবার পরে জিলেপী সন্দেশ। ছেড়েছো তো অনেক কিছুই পুরনো বোলচাল/ পুরনো ঘর, পুরোনা ঘর, কুড়নো জঞ্জাল। হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে/ দেখা হবে তোমায় আমায় অন্য গানের ভোরে।’ কবির সুমনের গানটা শুনবার কথা নয় ড্যারেন লেম্যানের। অথচ কী আশ্চর্য, এই মুহূর্তে তার জীবনযাপনে যেন নিত্য বাজছে এই গানেরই সুর! 

বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধান কোচের পদ ছাড়তে হয়েছিল সাবেক তারকা ক্রিকেটার লেম্যানকে। এরপর দায়িত্ব নিয়েছিলেন ব্রিসবেন হিটের। জাতীয় দলের দায়িত্ব না থাকায় প্রতিদিন খবরের শিরোনাম থেকে আড়ালে পড়ে যাচ্ছিলেন একটু একটু করে। এর মধ্যেই জীবনে এলো দুর্দিন, পড়লেন ভীষণ দুর্বিপাকে। হৃদযন্ত্র বিগড়ে গেল। বাইপাস সার্জারি করে এখন অনেকটাই সীমাবদ্ধ তার জীবন। প্রিয় অনেক অভ্যাস ছেড়ে দেওয়ার তালিকাও তাই হয়েছে দীর্ঘ।

ক্যারিয়ারে অনেক ফিফটি, সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু জীবনের উইকেটে পঞ্চাশ পূরণের পর উদযাপনটা ঠিক প্রাণভরে করা হয়নি লেম্যানের। গত ফেব্রুয়ারিতে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বাড়িতে নিজের পঞ্চাশতম জন্মদিনে তাকে শোকেসে বন্দি করে রাখতে হয়েছে সব হুল্লোড়, সঙ্গী ছিলেন ছেলে জ্যাক (ক্রিকেটার জ্যাক লেম্যান)।

ভারী ওজন নিতে পারেন না, পানাহারে এসেছে কড়াকড়ি, খাওয়া-দাওয়ায় অনেক কিছুই বাছবিচার করতে হয়। আর নিত্যসঙ্গী ধূমপানটা একেবারেই ছাড়তে হয়েছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লেম্যানের কণ্ঠে বাঁচার তাগিদ, ‘যখন জানেন না কী হবে, তখন আপনি ভয় পাবেন। গত জন্মদিনের রাতটা তাই ছিল একদম নীরব। পিৎজা আর সামান্য বিয়ার।’

উপায় আর কী! জন্মদিনের কদিন আগেই যে লেম্যানের মনে হচ্ছিল, ৫১তম বছরটা আর হয়তো দেখতে পাবেন না, ‘আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল, কেউ বুকে চাপা দিয়েছে। হাসপাতালে কল দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আনিয়ে তাতে চড়লাম।’

এঞ্জিওগ্রামে ধরা পড়ে হৃদপিন্ডের রক্তনালীতে তিনটি ব্লক। অস্ত্রোপচার ছাড়া উপশমের অন্য কোনো পথ মেলেনি।

গত দুই বছরের মধ্যে যেন দুঃসহ সব অভিজ্ঞতাই হচ্ছিল লেম্যানের। শিষ্যদের বল টেম্পারিং ইস্যুতে অপদস্থ হওয়া, বিবাহবিচ্ছেদ আর শেষে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। দুঃসময় জাপটে ধরতে আর কী লাগে?

তবে এবার সেরে উঠে জীবনের এই কঠিন অধ্যায় থেকেই বড় প্রাপ্তি খুঁজছেন বাঁহাতি লেম্যান, তার কণ্ঠে এবার হাল না ছাড়ার গান, ‘সবকিছুরই অন্য দিক আছে। আমি এটা থেকে শিখেছি। অনুভব করেছি, এগিয়ে যেতে হবে।’

অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের প্রধান কোচ হওয়ার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এখন আর লেম্যানের নেই। কুইন্সল্যান্ড ও ব্রিসবেন হিটের সঙ্গেই আছেন। শরীর আগের মতো নেই, তবে সবকিছুর কেন্দ্রে থাকার তাড়না এখনো নাড়া দেয় তাকে।

‘একজন খেলোয়াড় হিসেবে ব্যাপারটা একদমই ব্যক্তিগত। কিন্তু একজন কোচের পথ একদম আলাদা। আপনাকে সবকিছুতে যুক্ত থাকতে হবে। খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফ সবাইকে নিয়ে।’

‘এটা এখনও উপভোগ্য। খেলা বা কোচিং বা খেলা নিয়ে পরিকল্পনা করা, ভীষণ উপভোগ্য। সবকিছু মিলিয়েই। খেলার রাজনীতি সামলানো, ভ্রমণ ও পরিবার থেকে দূরে থাকার চ্যালেঞ্জ। সবই।’

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

6h ago