করোনায় লোকসানের মুখে তিস্তা পাড়ের কুমড়া চাষিরা

তিস্তা চরের এক কুমড়া চাষি। ছবি: স্টার

করোনা মহামারির কারণে লোকসানের মুখে পড়েছেন তিস্তা নদীর চরের কুমড়া চাষিরা। এবার কুমড়ার ফলন ভালো হলেও করোনাভাইরাসের কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন না তারা। কারণ, দেশে চলমান সাধারণ ছুটির জন্য বাইরের আড়তদাররা সেখান থেকে কুমড়া কিনতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়েই স্থানীয়দের কাছে কম দামে অথবা খেতেই ফেলে রাখতে হচ্ছে এসব কুমড়া।

তিস্তা নদীর চরের চাষি কোহিনুর বেগম (৪৭) আশায় বুক বেঁধে ছিলেন এবার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে নতুন একটি টিনের ঘর তুলবেন কিন্তু, তার আশায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাস। এখন তিনি আসল টাকা তুলতে পারবেন কি না তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন।

কোহিনুর বেগম বলেন, ‘তিস্তার বুকে জেগে উঠা ৫ বিঘা চর জমিতে মিষ্টি কুমড়া লাগিয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির আগে ২০-২৫ মার্চ খেতের মধ্যেই প্রতিকেজি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হয়েছে ১০-১২ টাকা দরে। ভেবেছিলেন দাম আরও বাড়বে। তাই সামান্য কিছু বিক্রি করে বেশিরভাগ খেতেই রেখেছিলেন। কিন্তু, দাম বাড়েনি বরং আসল টাকাই এখন তুলতে পারছি না। এখন ৫-৬ কেজি ওজনের একটি মিষ্টি কুমড়া ১৫ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছি না। আবার চুরির ভয়ে এগুলো খেতের মধ্যেও রাখতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করতে ৯০ হাজার টাকা খরচ করেছি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে টাকার ব্যবস্থা করি। আশা করেছিলাম আড়াই লাখ টাকার বেশি পাব। প্রথম দিকে মাত্র ২০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছিলাম। ৫ বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার কুমড়া হয়েছে।’

কোহিনুর বেগমের মতো হতাশ একই চরের চাষি নজরুল ইসলাম (৫৫)। তিনি তিস্তার বুকে চার বিঘা বালু জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করতে খরচ করেছেন ৭৫ হাজার টাকা। করোনা পরিস্থিতি শুরুর আগে মাত্র দশ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছেন আর বাকি কুমড়া এখনো খেতেই পড়ে আছে।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে ঢাকাসহ অনেক স্থান থেকে পাইকার না আসায় মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে পারছি না। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে তিন টাকার নিচে প্রতিকেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। ন্যায্যমূল্য না পেলে এবার পুঁজি হারাতে হবে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার চর কালমাটি গ্রামের চর চাষি খবির উদ্দিন (৬৪) জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার মিষ্টি কুমড়ার দাম একেবারেই পড়ে গেছে। খেতে পাইকার আসছেন না। ছয় বিঘা জমির কয়েক হাজার কুমড়া তুলে ঘরে রাখবো এমন জায়গাও নেই। চরের মিষ্টি কুমড়া নিয়ে বিপাকে পড়ে গেছি।

লালমনিরহাট শহরের সবজীর মহাজন কাদের শামসুল বলেন, ‘তিস্তা পাড়ের চরের চাষিদের কুমড়া চাষের জন্য অগ্রিম টাকা দিয়েছেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে মিষ্টি কুমড়া কিনতে পারছেন না। বাইরে থেকে মহাজনরা না আসলে কুমড়া কিনে কোন লাভ নেই। এছাড়া এত পরিমাণে কুমড়া সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থাও নেই।’

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় তিস্তা পাড়ে প্রায় ৫০০ চর চাষি তিন হাজারের বেশি বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিসার আলী নুর বলেন, ‘তিস্তার বুকে চরের বালু জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কুমড়ার ফলন ভালো হয়েছে, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দাম না পাওয়ায় তারা হতাশ। তবে, চরের চাষিরা যদি খেতের মিষ্টি কুমড়া যত্ন করে সংরক্ষণ করতে পারে তাহলে করোনা পরিস্থিতির পর ভালো দাম পাবেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে চরের চাষিদের মিষ্টি কুমড়া সংরক্ষণের পদ্ধতিও শিখিয়ে দিচ্ছি।’

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

14h ago