করোনাভাইরাস

সরকারের খাদ্য সহায়তা তালিকায় নেই কামার-কুমার-জেলে-তাঁতি-হরিজন-রবিদাস

করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে লালমনিরহাট জেলায় চলছে লকডাউন। এই অবস্থায় কর্মহীন শ্রমজীবী ও দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৪৫টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় বিভিন্ন পেশাজীবীর এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৯১টি পরিবারের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের তালিকাভুক্ত এসব পরিবারের মাঝে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করা হচ্ছে।
ছবি: স্টার

করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে লালমনিরহাট জেলায় চলছে লকডাউন। এই অবস্থায় কর্মহীন শ্রমজীবী ও দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৪৫টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় বিভিন্ন পেশাজীবীর এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৯১টি পরিবারের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের তালিকাভুক্ত এসব পরিবারের মাঝে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করা হচ্ছে।

কিন্তু, সেই তালিকায় নেই কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, নরসুন্দর, সুঁতার, হরিজন, রবিদাস, হস্তশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী ও যাত্রাশিল্পীসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের নাম। তাই ক্ষুদ্ধ হয়েছেন এসব পেশার মানুষজন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার ৪৮৩ পরিবহন শ্রমিক, ৩ হাজার ১৮৫ ভিক্ষুক, ৯ হাজার ২৬ গার্মেন্টস শ্রমিক, ১১ হাজার ৫৮৫ রিকশা-ভ্যানগাড়িচালক, ১৪৬ তৃতীয় লিঙ্গ, ১ হাজার ৬৯৩ হকার, ৫ হাজার ২৫৯ হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ও চায়ের দোকানদার, ১ হাজার ৬৭৩ ফেরিওয়ালা, ১ হাজার ৭৫৬ ভবঘুরে, ২৬ হাজার ৪০০ ওএমএস সুবিধাভোগী ও ৮৭ হাজার ১৮৫ দিনমজুর।

লালমনিরহাট জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার তালিকাভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য সহায়তা করতে যে তালিকার ফরমেট পাঠিয়েছে তাতে কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, নরসুন্দর, সুঁতার, হরিজন, রবিদাস, হস্তশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী ও যাত্রাশিল্পীর পৃথক কোন ছক ছিল না। তাই এসব পেশাজীবীর পরিবারগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হয়নি।’

’আপাতত তালিকাভুক্ত ৮৭ হাজার ১৮৫ দিনমজুর পরিবারের তালিকায় এসব পেশাজীবী পরিবারের নাম রয়েছে এবং তারাও সরকারি খাদ্য সহায়তা পাবেন,’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারি তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাওয়া এসব পেশার লোকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে দরিদ্রতার হার কমাতে নানা সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি নিয়েছেন। করোনা ঝুঁকিতে তারাও পড়েছেন। তারা সাধারণত কাজ করে খান। কখনও সরকারি ত্রাণ সহায়তার অপেক্ষা করেন না।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা সম্পূর্ণ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, উল্লেখ করে আরও জানান, বাধ্য হয়ে তারা এখন সাহায্য নির্ভর হয়ে পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা সরকারি সাহায্য ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। কিন্তু, তাদের নাম সরকারি তালিকায় না থাকায় তারা হতাশ ও চিন্তিত।

‘করোনায় আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। অনেক টাকার মাটির তৈষজপত্র তৈরি করেছি। কিন্তু, বিক্রি করতে পারিনি। ঋণ নিয়েছি। এখন ঋণ পরিশোধের জ্বালা তাড়া করছে। কাজ-কর্ম একেবারে বন্ধ রয়েছে,’ বললেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভাটিবাড়ি পালপাড়ার কুমার রনজিত চন্দ্র পাল।

‘কর্মহীন হয়ে বাড়িতে আছি। সরকারি সহায়তা ছাড়া পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য কষ্টের,’ যোগ করেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলার ভাদাই এলাকার নরসুন্দর জীবনচন্দ্র শীল আক্ষেপ করে বলেন, ‘দিন রোজগার করে দিন খাই। করোনা পরিস্থিতিতে এখন সম্পূর্ণ কর্মহীন। সরকারি সহায়তা তালিকায় আমাদের নাম নেই। সহায়তা না পেলে আমাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে।’

লালমনিরহাট শহরের আলোরূপা মোড় এলাকার রবিদাস পেশাজীবীর ধনেশচন্দ্র রবিদাস বলেন, ‘জুতা সেলাই করে সংসার চালাই। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেকার হয়ে গেছি। সংসার চলে না।’

সরকারি তালিকায় তাদের নাম না থাকায় আক্ষেপ করেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা কামারপাড়ার নারায়ন চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘সরকারি খাদ্য সহায়তা তালিকায় নাম নেই এটা কষ্টের ও বেদনার। অথচ আমরা এখন কর্মহীন পেশাজীবী। আমরা কর্ম করেই চলি। কখনো ত্রাণের জন্য ছুটাছুটি করি না। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতি আমাদেরকে ত্রাণের উপর নির্ভরশীল করেছে।’

করোনা পরিস্থিতিতে কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, নরসুন্দর, সুঁতার, হরিজন, রবিদাস, হস্তশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী ও যাত্রাশিল্পীসহ অন্যান্য পেশার সঠিক তালিকা প্রস্তত করে এসব পেশাজীবী পরিবারকে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দিয়ে তাদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago