করোনায় আক্রান্ত নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন যেভাবে সুস্থ হলেন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় ঢাকার পরই নারায়ণগঞ্জের অবস্থান। ইতোমধ্যে জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা, ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
Coronavirus-2.jpg

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় ঢাকার পরই নারায়ণগঞ্জের অবস্থান। ইতোমধ্যে জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা, ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

তাদের মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ। তবে ইতোমধ্যে দুই বার তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের ফল নেগেটিভ এসেছে। তারপরও তিনি তৃতীয় ও চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন। সেই পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে আবারও কাজে যোগদানের আশা করছেন তিনি।

আজ শুক্রবার বিকালে সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানান। যিনি একইসঙ্গে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব। তবে ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১২ এপ্রিল থেকে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. চৌধুরী মোহাম্মদ ইকবাল বাহার।

উল্লেখ্য, অসুস্থতা বোধ করায় গত ৯ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষা করান ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ। এর দুই দিন পর ১১ এপ্রিল আইইডিসিআর থেকে পাঠানো তার রিপোর্টে কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে। এরপর থেকেই তিনি আইসোলেশনে ছিলেন।

ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগামী রোববার আবারও নমুনা পরীক্ষা করানো হবে। এ রিপোর্টে কোভিড-১৯ নেগেটিভ আসলেই আমি নিজের দায়িত্বে কাজ শুরু করবো। তবে এখনও মোবাইলে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি।’

দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাওয়ায় নমুনা পরীক্ষা করাই। সেই পরীক্ষায় আমার রিপোর্ট কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া যায়। তবে আমার জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট এমন কোনো উপসর্গ ছিল না। তারপর থেকেই আইসোলেশনে চলে যাই। নিজেই ৭ দিন বাসায় চিকিৎসা সেবা নেই। পরে ১৬ এপ্রিল আবারও প্রথম টেস্ট ও ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় টেস্টে আমার রিপোর্টে নেগেটিভ আসে। এতে করে আইইডিসিআর’র পক্ষ থেকে নিশ্চিত হই যে, আমি করোনাভাইরাস মুক্ত।’

ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘আইসোলেশনে থাকলেও আমি প্রতিদিন নিয়মিত ৪ থেকে ৫ বার গরম পানিতে গারগিল করতাম। আমি পানিতে ভিনেগার ও লবণ ব্যবহার করেছি। নিয়ম করে প্রতিদিন একাধিকবার গরম পানির ভাপ নিয়েছি। প্রতিদিন গোসল করেছি। আমার জামাকাপড় আমি নিজেই পরিষ্কার করেছি। এমনকি বিছানার চাদর, বাথরুমও আমি প্রতিদিন কিংবা একদিন পর পর পরিষ্কার করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তানরা চট্টগ্রাম থাকে। এখানে আমাকে যত্ন নেওয়ার তেমন কেউ নেই। তবে একজন খাবার তৈরি করাসহ অন্যান্য কাজে সহযোগিতা করেছেন। আমি নিজেকে তার থেকেও দূরে রেখেছি। প্রতিদিন আমার টেবিলে খাবার রেখে চলে গেলে আমি খেয়ে সেটি পরিষ্কার করেছি। আইইডিসিআর থেকে কিংবা অন্য কোনো ওষুধ নয়, শারীরিক অসুস্থতা অনুযায়ী সাধারণ ওষুধ খেয়েছি। কারণ এ রোগের কোনো ওষুধ নির্দিষ্ট নেই। এক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি অন্যান্য কাজগুলো সহায়তা করেছে। যেমন: ভিনেগার একটি এসিড, এটি জীবাণু মেরে ফেলে। একইভাবে গরম পানিতে লবণও কার্যকরী। এভাবেই আমি সুস্থ হয়েছি, এর বাইরে আমি আর কিছুই করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসময় আমি প্রচুর ভিটামিন সি জাতীয় খাবার ও ফল খেয়েছি। শাকসবজিও প্রচুর পরিমাণে খেয়েছি। যাতে আমি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকি। এসব কিছু আর আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়েছি।’

এদিকে, জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পারসন ও সদর উপজেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে চার জন সুস্থ হয়েছেন। তবে ১৮৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪২ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়েছে। আর আক্রান্ত দুই জন মারা গেছেন।

এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ১ হাজার ৭৫৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬২১ জনের ফলাফলে পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে জেলায় মোট মৃত্যু হলো ৩৭ জনের, আর সুস্থ হয়েছেন ২৫ জন।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago