হাওরাঞ্চলে কৃষকের সঙ্গে ধান কাটায় সর্বস্তরের মানুষ

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরের প্রধান ফসল বোরো ধান কাটায় কৃষকের সাথে সাথে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় হাওরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কৃষকের সঙ্গে ধান কাটায় অংশ নেন। ছবি: সংগৃহীত

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরের প্রধান ফসল বোরো ধান কাটায় কৃষকের সাথে সাথে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন।

করোনা আক্রান্ত সময়ে দেশব্যাপী স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় ধান কাটায় যখন দক্ষ কৃষি শ্রমিকের অভাবে কৃষক, তখন সংকট দূর করতে এগিয়ে এসেছেন সর্বস্তরের মানুষ।   

আগাম বন্যার পূর্বাভাস ও করোনার ভয় ভুলে হাওরাঞ্চলে এখন চলছে ফসল কাটার ধুম। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, পরিবহন শ্রমিক, বালু-পাথর শ্রমিক, দোকানদার, এনজিওকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এখন হাওরের ধান কাটছেন।

এছাড়াও হাওরাঞ্চলের ধান কাটতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়মিত আসা দক্ষ শ্রমিকদের একটি অংশকে সরকারি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় হাওরাঞ্চলে আনা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ৪২ জন কৃষি শ্রমিকের একটি দলকে সিলেটের হাওরাঞ্চলে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর।

তিনি জানান, লালমনিরহাট থেকে প্রায় ৫০০ শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে ধান কাটার কাজ করছেন।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে যেসব শ্রমিকরা আসছেন, তাদের আমরা প্রাথমিকভাবে খাদ্য সরবরাহ ও থাকার জায়গার ব্যবস্থার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও দেখছি। স্থানীয় যারা ধান কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করবে, তাদের সরকারি ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও অনেকেই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন।’

জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার গজারিয়া বাজারের দোকানদার আরমান হোসেন ধান কাটছেন হাওরে। তিনি বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ থেকে ব্যবসা বন্ধ, রোজগার বন্ধ। আমি যেহেতু কৃষকের সন্তান আর জানি কীভাবে ধান কাটতে হয়, তাই ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গঠিত ৪২ জনের একটা ধান কাটার দলে যোগ দিয়ে ধান কাটছি।’

এই এলাকার কৃষক আরিফুল হক বলেন, ‘আমার সামান্য জমি আর এবার মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করার জন্য টাকাও ছিল না। হয়তো ঋণ করে ধান কাটাতাম, কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগে এলাকার অনেকেই বিনা পারিশ্রমিকে আমার ধান কেটে দিয়েছেন।’

আনসার ও ভিডিপি-এর সিলেট অঞ্চলের পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘সিলেট বিভাগে প্রায় ৪ হাজার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা কৃষকদের সহযোগিতা করতে ধান কাটছেন।’

এদিকে হাওরাঞ্চলের ধান কাটতে কৃষকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার এবং স্কুল-কলেজ প্রাঙ্গণ কৃষিকাজে ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে গত ২১ এপ্রিল একটি পরিপত্র জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কৃষকদের সহযোগিতা করতে ধান কাটছেন হাওরাঞ্চলে। আমরা সবাইকে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সুরক্ষিত থেকে ধান কাটতে উৎসাহিত করছি।’

কৃষকের সহযোগিতায় অন্যদের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকারদলীয় বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও হাওরে ধান কাটছেন।

সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামীমা আক্তার খানম কৃষকের সহযোগিতায় ধান কাটা তদারকিতে কাজ করছেন পহেলা বৈশাখ থেকে।

তিনি বলেন, ‘কৃষক লীগের অন্তত ১০০০ নেতাকর্মী সরাসরি হাওরাঞ্চলের কৃষকদের ধান কাটার কাজ করছেন এবং কৃষক যাতে শেষ পর্যন্ত সুন্দরভাবে ধান কাটা শেষ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে প্রতিদিনই হাওরাঞ্চলের ধান কাটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শ্রীনিবাস দেবনাথ বলেন, ‘সবার অংশগ্রহনে হাওরাঞ্চলের ধান কাটা দ্রুত এগিয়ে চলেছে। শুক্রবার দিন শেষে হাওরাঞ্চলের প্রায় ৪২ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।’

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অতিবৃষ্টিজনিত কারণে হাওরাঞ্চলের নদীর পানি বেড়ে ২৭ এপ্রিল এর দিকে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলে জানানো হয়েছে।  

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, ‘এবার হাওরে পানি নেমেছে ধীরে, ফলে ধান লাগাতে দেরি হয়েছে এবং এখনো হাওরাঞ্চলের অনেক ধান পাকেনি। এছাড়া, গত বছর ব্রি-ধান ২৮ এর নেক ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় কৃষকরা এবার ব্রি-ধান ২৯ করেছেন যার ফলন বেশি হলেও ধান পাকে দেরিতে এবং এর মধ্যে বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার ভয় রয়েছে।’

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago