করোনাভাইরাস: সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কতদিন লাগতে পারে?

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে আজ সোমবার কাজে ফিরছেন। গত ২৭ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। হাসপাতাল ছেড়েছেন ১২ এপ্রিল।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহানের একটি হাসপাতালের ভেতরের দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে আজ সোমবার কাজে ফিরছেন। গত ২৭ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। হাসপাতাল ছেড়েছেন ১২ এপ্রিল।

কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের অনেকেই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলেও, অনেকেই আবার দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে।

বিবিসি বলছে, সুস্থ হতে কত সময় লাগবে তা নির্ভর করছে আপনি কতখানি অসুস্থ হয়েছিলেন তার ওপর। কিছু রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠছেন, অনেকে আবার দীর্ঘ সময় ধরে স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগতে পারেন।

বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক গঠন ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে অসুস্থতা ধরন আলাদা হয়ে থাকে। আক্রান্তদের যত দ্রুত চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে, তত বেশি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে।

হালকা উপসর্গের ক্ষেত্রে

করোনা আক্রান্তদের অধিকাংশেরই শুরুতে কাশি বা জ্বর দেখা যায়। অনেকে আবার শরীরে ব্যথা, ক্লান্তি, গলাব্যথা ও মাথাব্যথায় ভোগেন।

প্রাথমিকভাবে শুকনো কাশি দেখা গেলেও ভাইরাসটি ফুসফুসকে আক্রমণ করার কারণে পরবর্তীতে ফুসফুসের মৃত কোষও কাশির মাধ্যমে বের হয়ে আসতে পারে।

এসব উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকরা সাধারণত রোগীদের বিশ্রামে থাকতে বলেন ও প্রচুর তরল খাবার খেতে বলেন। পাশাপাশি, ব্যথার ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল) দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

হালকা উপসর্গের রোগীরা সাধারণত দ্রুত সেরে ওঠেন। চিকিৎসায় এক সপ্তাহের মধ্যে জ্বর নেমে যেতে পারে। তবে, কাশি দীর্ঘদিন থাকে। চীনে করোনা আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, করোনা থেকে সেরে উঠতে গড়ে দুই সপ্তাহ সময় লাগে।

গুরুতর উপসর্গের ক্ষেত্রে

কখনো কখনো কোভিড-১৯ মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সাধারণত সংক্রমণের প্রায় সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে হঠাৎ করেই উপসর্গ গুরুতর হতে দেখা দেয়।

কোভিড-১৯ এর মারাত্মক উপসর্গগুলো হচ্ছে- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ও ফুসফুস ফুলে যাওয়া। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়তে চেষ্টা করে ফলে ফুসফুসে মারাত্মক প্রভাব দেখা যায়। এ কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিও হতে পারে।

কয়েকজন রোগীর অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন হয়। লন্ডনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সারা জের্ভিস বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট ভালো হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। শরীরে ব্যথা সারতেও সময় লাগে।’ ক্লান্তিভাব দূর হতে প্রায় দুই থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগে বলে জানান তিনি।

নিবিড় পরিচর্যার ক্ষেত্রে

ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ২০ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে একজনের ভেন্টিলেশন ও নিবিড় চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) রোগীদের সেরে উঠতে তুলনামূলক বেশি সময় প্রয়োজন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাদের অনেকদিন নিয়মিত ওয়ার্ডেও রাখা হয়। এরপর স্বাস্থ্য রিপোর্ট অনুযায়ী তারা বাড়ি ফিরতে পারেন। বাড়িতে ফেরার পরেও দীর্ঘদিন তাদের বিশ্রামে থাকতে হয়।

ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন অনুষদের ডিন ডা. অ্যালিসন পিটার্ড জানান, আইসিইউতে থাকা রোগীদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে প্রায় ১২ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

হাসপাতালের বিছানায় দীর্ঘদিন শুয়ে থাকার কারণে দেহের পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, রোগীরা দুর্বল হয়ে পড়েন। রোগীদের পেশী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগে। হাঁটাচলার জন্য অনেকের ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।

আইসিইউতে থাকার কারণে রোগীদের মধ্যে মানসিক সমস্যাও দেখা যায়।

কার্ডিফ অ্যান্ড ভেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বোর্ডের ফিজিওথেরাপিস্ট পল টুইস বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে দীর্ঘদিন পর্যন্ত শারীরিক ক্লান্তিতে ভুগতে হয়।’

চীন ও ইতালির রোগীদের মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা, অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতির পরিবর্তনের কথা জানা গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে দীর্ঘসময় ধরে ঘুমানোর প্রবণতাও দেখা যায়।

পল টুইস বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, আইসিইউতে থাকা করোনা রোগীদের সেরে উঠতে সাধারণত কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’

তবে, এটা সবার ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে বলে জানান তিনি। অনেকে আইসিইউ থেকে অল্প সময় পরেই সুস্থ হয়ে যান, অনেকের আবার কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ভেন্টিলেশনে থাকতে হয়।

স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

যথেষ্ট তথ্য, উপাত্ত না থাকায় এখনই করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে, অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলোর কথা বিবেচনা করে কিছু বিষয়ে ধারণা করা যেতে পারে।

অ্যাক্যুইট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিন্ড্রোম (অ্যার্ডস) রোগীদের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর চাপের কারণে আক্রান্তদের ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এমনকী, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের পাঁচ বছর পরেও শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।

ওয়ারউইক মেডিকেল স্কুলের প্রভাষক জেমস গিল জানান, সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হওয়ার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘ধরুন, আপনার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলো। চিকিৎসক আপনাকে ভেন্টিলেটরে রাখবেন। তিনি আপনাকে বলছেন, আপনাকে আমরা ঘুমের ওষুধ দিতে যাচ্ছি। এইসময় আপনার মানসিক অবস্থা কেমন হবে? সে সময় মানুষ নিজের পরিবার, প্রিয় মানুষকে বিদায় জানাতে চায়। ফলে তারা মারাত্মক মানসিক চাপে ভোগেন।’

পিটিএসডি (ট্রমা পরবর্তী মানসিক চাপ) গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কিছু না। অনেকের দীর্ঘস্থায়ী মানসিক আঘাতও হতে পারে।

হালকা উপসর্গও (যেমন, ক্লান্তি) অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

করোনা থেকে কত জন সুস্থ হয়েছেন?

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রবিবার পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে, এ ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন। একেক দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একেক পদ্ধতিতে তথ্য দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই সুস্থ হয়ে ওঠাদের সংখ্যা প্রকাশ করছে না। অনেক দেশে হালকা উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে হাসপাতালে না গিয়ে কেউ যদি সুস্থ হয়, তবে তার তথ্য সরকারি নথিতে যুক্ত হবে না।

গাণিতিক মডেল বলছে, ৯৯ থেকে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

দ্বিতীয়বার সংক্রমণের ঝুঁকি কতটুকু?

সাধারণত কোনো রোগে এক বার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠলে শরীরে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তবে, কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি কতখানি টেকসই তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত শনিবার ডব্লিউএইচও জানায়, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হবে না এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অনেক দেশেই দ্বিতীয়বার সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। এটা হতে পারে যে, প্রথমবার তাদের রিপোর্টে ভুলভাবে ‘নেগেটিভ’ দেখা গিয়েছিল। হয়তো তারা তখনো পুরোপুরি করোনামুক্ত হননি। প্রথমবারের সংক্রমণ থেকে হালকা সুস্থ হওয়ার পর বাড়ি ফিরে অসুস্থতা বাড়লে আবারও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাদের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়।

করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার জন্য অ্যান্টিবডির বিষয়ে জানাও গুরুত্বপূর্ণ।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago