প্রবাস

একজন নাগরিকের মৃত্যুও দেখতে চায় না অস্ট্রেলিয়া

প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ আঘাত হানার শুরু থেকেই দেশটির সরকার প্রতিটি নাগরিকের জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ দেশ বিশ্বের সব চেয়ে বড় প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করেছে যা এর জিডিপির ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।
ছবি: সংগৃহীত

প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ আঘাত হানার শুরু থেকেই দেশটির সরকার প্রতিটি নাগরিকের জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ দেশ বিশ্বের সব চেয়ে বড় প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করেছে যা এর জিডিপির ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।

অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকার প্রতিটি জীবনের বিপরীতে ৪৮ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার খরচ করতে প্রস্তুত। প্রায় ২১৪ বিলিয়ন ডলারের বাজেট রয়েছে নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য। প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ব্রেন্ডন মরফি বলেছেন, ‘কোনো অস্ট্রেলিয়ান দেখতে চায় না তার দেশে দিনে শত শত মানুষ মৃত্যুবরণ করুক।’

করোনার আক্রমণ ঠেকাতে সরকার গ্রহণ করেছে নানামুখী উদ্যোগ। ফলে মহামারি কোভিড-১৯ মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অদমনীয় শক্তির কাছে।

অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম এসবিএসনিউজ জানিয়েছে, সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফেডারেল সরকার ‘COVIDSafe’ নামে একটি মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়েছে। এটি কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করবে।

এই অ্যাপ্লিকেশনটি যার ফোনে ডাউনলোড করা থাকবে তিনি কখনো কোনো করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে ব্লুটুথের মাধ্যমে তার তথ্যটি রেকর্ড হয়ে যাবে। একই সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির ফোনেও তার যোগাযোগের তথটি সংরক্ষিত হবে। এতে করে খুব সহজেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সবার ডেটাটি পেয়ে যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট বলেছেন, ‘এই একটি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আমরা গোটা দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারবো। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও দূর করা সম্ভব হবে। প্রাথমিক রোগ নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে।’

মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান এই অ্যাপটি তাদের ফোনে ডাউনলোড করেছেন। সরকার মনে করছে, ১ কোটি নাগরিককে এর অধীনে আসা প্রয়োজন।

এই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রধান সংবাদ সংস্থা এবিসি ‘কোভিড ১৯ ট্রেসার অ্যাপ’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনকে এই অ্যাপের ডেটা স্টোরেজ করার জন্য চুক্তি দেওয়া হয়েছে।’

মূলত তখনই সবার মধ্যে শুরু হয় উদ্বেগ। প্রশ্ন ওঠে, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে দেওয়া যাবে কিনা? তাৎক্ষণিকভাবে এর জবাব দেন ফেডারেল সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তথ্য কেবলমাত্র অস্ট্রেলিয়ায় সংরক্ষণ করা হবে এবং তা দেখার সুযোগ পাবেন রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ। আর যদি এর কোনো লঙ্ঘণ হয় তবে তা হবে কারাবাসের সমতুল্য অপরাধ।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরও নাগরিকদের সংশয় ও উদ্বেগ দূর হয় না। তারা আশঙ্কা করছেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের অধীনে কেউ সামাজিক দূরত্ব বিধি লঙ্ঘণ করলে পুলিশের মোটা অংকের জরিমানার আইনটি এখনো বলবৎ আছে।

কারো ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড থাকলে তিনি কখন, কতোজন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তার তথ্যটি খুব সহজেই পেয়ে যাবে পুলিশ। এরও জবাব দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘অ্যাপ্লিকেশনটির তথ্য পুলিশকে দেওয়া হবে না।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অস্ট্রেলিয়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, ‘সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে তথ্য বিনিময় করা হবে না। তবে আমরা সরকারের কাছে তথ্য সুরক্ষার আরও নিশ্চয়তা চাই। অস্ট্রেলিয়ানরা তখনই অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করবেন যখন তাদের আস্থা থাকবে যে, তাদের গোপনীয়তা সুরক্ষিত হবে।’

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল সরকার জানিয়েছে, ‘ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তা আইন ১৯৮৮’ অনুসারে অ্যাপ্লিকেশনটির কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

সরকার প্রতিজ্ঞা করেছে, যে কোনোভাবে এই মহামারিকে পরাজিত করতে হবে। শুধুমাত্র ভিকটোরিয়া রাজ্যেই ১ এপ্রিল ইনটেনসিভ কেয়ার বেড ৪৫০ থেকে ৪,০০০ করার চাহিদা, ৫৫১ মিলিয়ন গ্লোবস, ১০০ মিলিয়ন মাস্কস ও সাড়ে ১৪ মিলিয়ন গাউনের অর্ডার দিয়েছে। এর মূল্য ধরা হয়েছে আড়াই বিলিয়ন ডলার। অস্ট্রেলিয়ায় আরও পাঁচটি রাজ্য ও দুটি টেরিটরি রয়েছে।

মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেন মল ও ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির মেডিকেল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জোনাথন কারনন সমালোচনা করে বলছেন, যাদের জীবন বাঁচানো হচ্ছে তাদের বয়স এবং তারা সমাজকে আর কতো সময় বা কি দিতে পারবে। অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ আক্রান্তদের গড় বয়স ৮০।

তাদের মতে, এটা অনেকটা ওভার-রিএ্যাকশন। হিসাব অনুযায়ী যাদের জীবন বাঁচানো গেল তাদের প্রতিটি বছর বাঁচানোর ব্যয় ৭০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সরকার এই খরচকে যৌক্তিক মনে করে এবং ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করতেও প্রস্তুত প্রতিটা মানুষের জন্য। সরকারের কাছে প্রতিটি মানুষের প্রতিটি বছরের গুরুত্বই সমান।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago