সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল

ঢাকার কমলাপুরের পাশে খাবারের আশায় অপেক্ষারত মানুষ। ২০ এপ্রিল ২০২০। ছবি: আনিসুর রহমান

জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে বাংলাদেশে। যা বেশ উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনটিতে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ মূল্যায়ন করা হয়েছে। এমন এক সময়ে এই প্রতিবেদনটি এল, যখন বেশ কয়েক সপ্তাহের ‘সাধারণ ছুটি’ নিম্ন আয়ের বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠিকে কর্মহীন বানিয়ে ফেলেছে, যার প্রভাব ঠেকাতে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতোমধ্যে খবর পাওয়া যাচ্ছে মানুষ না খেয়ে থাকছে এবং আয় না থাকায় অনেকেই ভিক্ষা করছে। এই সংকটের কারণে অর্থনৈতিক ধস ঠেকাতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো এখনও এই ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর অনেকের কাছে পৌঁছতে পারেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে রয়েছে বেকারদের সুরক্ষা, কেউ যেন চাকরি না হারায় তার ব্যবস্থা করা, যারা চাকরি হারিয়েছে তাদের সহায়তা করা, অসুস্থ থাকলে আয়ের সুরক্ষা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সুবিধার ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো, সামাজিক সহায়তার মাধ্যমে আয়ের ব্যবস্থা করা এবং অন্যদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা করা।

করোনা মহামারির আগেও এ ধরনের সুরক্ষা বাংলাদেশে ছিল না বললেই চলে, যা সামাজিক সুরক্ষার জন্য নেওয়া কর্মসূচির নীতি নির্ধারণ এবং প্রয়োগের দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ। এই দুর্বলতাগুলোই এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারণ করোনার প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে অনেক মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন এবং চরম কষ্টে তাদের দিন কাটছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের ৪৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী দরিদ্র হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছে এবং তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ‘প্রায় দরিদ্র’ মানুষদের আয়ের ব্যবস্থা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ছোট পোশাক কারখানা মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থান কমছে। এই কারখানাগুলোর শ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী।

প্রতিবেদনে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলোতে দেওয়া বিভিন্ন শর্তের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এর কারণে কিছু মানুষ দুর্নীতিপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি এই সঙ্কটের সময়েও কীভাবে কিছু অসাধু মানুষ ত্রাণের খাবার চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

অনানুষ্ঠানিক গোষ্ঠীগুলোকে তালিকাভুক্ত করে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যেতে পারে। এতে অনানুষ্ঠানিক খাতের কয়েক লাখ মানুষ এবং অন্য যে কেউ সরকারের ত্রাণের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে।

এরই মধ্যে সরকার যতটুকু সহযোগিতা প্রকল্প নিয়েছে তার পর্যবেক্ষণও গুরুত্বপূর্ণ। যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তিনি সাহায্য পাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত করা দরকার।  সরকারকে বিদ্যমান বাজেটে অগ্রাধিকার ও নীতিমালা পর্যালোচনা করতে হবে। যাতে করে দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের উপর অর্থনৈতিক প্রভাব স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে মোকাবিলা করা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

15h ago