করোনা চিকিৎসায় এখনো প্রস্তুত নয় সব আইসিইউ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭টি হাসপাতাল। তবে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এর সবগুলোতে এখনও কার্যকর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই।
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭টি হাসপাতাল। তবে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এর সবগুলোতে এখনও কার্যকর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই।

১৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ হাসপাতালে ভেন্টিলেটর স্থাপন করা হলেও আইসিইউগুলো পরিচালনার জন্য এখনও প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অক্সিজেন সরবরাহ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

দ্য ডেইলি স্টার চিঠিটির একটি অনুলিপি পেয়েছে। এতে ১৭টি হাসপাতালের নাম উল্লেখ করা রয়েছে এবং সেগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া কথা বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের জন্য ভেন্টিলেটর বরাদ্দ করা হলেও, আইসিইউগুলো সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য ১২ ধরণের সরঞ্জামের প্রয়োজন রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চিঠিটি পেয়েছি এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপোকে (সিএমএসডি) লিখেছি।’

সিএমএসডি মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীনে চলে এবং নিলামের মাধ্যমে ওষুধ ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করে।

অতিরিক্ত সচিব আরও জানান, আইসিইউগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো শিগগির স্থাপন করা হবে। তবে, ঠিক কবে নাগাদ তা হতে পারে সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘এ জাতীয় সরঞ্জামগুলো সহজে পাওয়া যায় না। তবে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে যথাক্রমে ৫০৮ এবং ৭৩৭টি আইসিইউ বেড রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে  সম্পূর্ণ কার্যকর আইসিইউ প্রয়োজনীয়।

আইসিইউয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ ভেন্টিলেটর ফুসফুসের সমস্যায় ভোগা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করে। এগুলো করোনা রোগীদের বাঁচানোর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ, করোনাভাইরাস শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে।

গত মাসে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-চীন যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোভিড-১৯ আক্রান্ত পাঁচ শতাংশ রোগীর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজন হয় এবং আরও ১৫ শতাংশের জন্য প্রয়োজন হয় ঘনীভূত অক্সিজেন। যার অর্থ প্রায় ২০ শতাংশ রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন।

কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে আশ্বাস দিলেও বাস্তব চিত্র এখনও সন্তোষজনক নয়।

উদাহরণস্বরূপ দেখা যায় ঢাকার নয়াবাজার মহানগর জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালে ভেন্টিলেটরসহ পাঁচটি আইসিইউ বেড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ এখনও এগুলো স্থাপন করতে পারেনি।

গত শুক্রবার হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক আশরাফুল হাসান বলেন, ‘এখানে আইসিইউয়ের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যার কারণে আইসিইউয়ের জন্য কক্ষ তৈরি করতে সময় লাগছে। সব কাজ শেষ করে আইসিইউ স্থাপন করতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৭টি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা শুরু করার জন্য ৫০টি আইসিইউ বেড প্রয়োজন।

এছাড়াও অন্যান্য সামগ্রীর মধ্যে প্রয়োজন ৯০টি মনিটর, ৩৪টি পালস অক্সিমিটার, গ্লুকোজ ও ল্যাকটেটসহ ১৭টি এবিজি মেশিন, ২৮টি এক্সটারনাল ডিফিব্রিলেটর, ৩০টি ১২ চ্যানেল ইসিজি মেশিন, ৩৪টি পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, পাঁচ টনের ৩০টি এয়ার কন্ডিশনার, ৩০টি ডিহিউমিডিফায়ার এবং ৮৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। এছাড়াও রয়েছে সিরিঞ্জ পাম্প এবং সাকশন মেশিন।

পালস অক্সিমিটার রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করে। যদি এর রিডিং ৯০ এর নিচে চলে আসে তাহলে রোগীকে অবশ্যই অক্সিজেন দেওয়া উচিত। যখন রোগী নিজে কফ বের করতে পারে না তখন প্রয়োজন হয় সাকশন মেশিনগুলো।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এবং নিবির পরিচর্চা বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাশীষ কুমার সাহা জানিয়েছেন, তালিকার পোর্টেবল ভেন্টিলেটর ছাড়া বাকী সবই একটি আইসিইউয়ের প্রাথমিক সরঞ্জাম।

তিনি বলেন, ‘এই প্রাথমিক সরঞ্জামগুলো ছাড়া একটি আইসিইউ সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব না।’

ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি

সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একমাত্র ডেডিকেটেড করা হয়েছে শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতাল। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিত্সার জন্য বর্তমানে এই হাসপাতালে দুটি ভেন্টিলেটর আছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. আনিসুর রহমান জানান, ভেন্টিলেটরসহ আরও নয়টি আইসিইউ বেড এই হাসপাতালে স্থাপন করা হবে এবং অতিরিক্ত চারটি ভেন্টিলেটর ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হবে।

সিলেট বিভাগে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড আর কোনো আইসিইউ নেই।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৫টি আইসিইউ বেডের সবগুলোই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করে দেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতালে নেগেটিভ এয়ার প্রেশার এবং স্বয়ংক্রিয় জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়াসহ আরও পাঁচটি বেড শিগগির সংযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘সারা বিশ্বজুড়েই আইসিইউয়ের সংকট রয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আইসিইউগুলো স্থাপন করার কাজ চলছে। যেহেতু, সকল ধরণের সরঞ্জাম আমদানি করতে হয় তাই আমরা ইচ্ছা থাকলেও রাতারাতি একটি আইসিইউ স্থাপন করতে পারি না।’

গত শনিবার তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আইসিইউ রোগীদের চিকিত্সা করার জনবলের সংকটও রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অ্যানাস্থেটিস্টস সোসাইটি আমাদের সঙ্গে কাজ করছে এবং তারা এই আইসিইউগুলোতে কাজ করার জন্য জনবলের ব্যবস্থা করছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সম্ভাব্য রোগীদের চিকিত্সায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

21m ago