স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে হাওরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষিশ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ

স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কৃষিশ্রমিকদের কাজে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: স্টার

প্রতি বছরের এই সময়ে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক শ কৃষিশ্রমিক দেশের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে যেতেন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজে। সেসব অঞ্চলে বোরো ধান কাটা-মাড়াই শেষে বাড়ি ফিরে আবার নিজ এলাকায় ধান তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন তারা।

কিন্তু, এই বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে ওইসব কৃষিশ্রমিকরা কাজে যেতে পারেননি। এ অবস্থায় সেসব অঞ্চলের কৃষিশ্রমিকের চাহিদা মেটাতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। ধান কাটতে ও মাড়াইয়ের জন্য যেতে আগ্রহী কৃষিশ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও করোনা সংক্রমণ এড়াতে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে নির্দিষ্ট পরিবহনে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় গতকাল মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ৮৭ জন কৃষিশ্রমিক নওগাঁ ও কুমিল্লা জেলায় ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজের জন্য রওনা দিয়েছেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে গতকাল বিকালে ৮৭ জন শ্রমিককে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়ন থেকে ৪০ জন ও বড়গাঁও ইউনিয়ন থেকে ২৫ জন শ্রমিক রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার রানীনগর গ্রামের উদ্দেশে গতকাল বিকালে ঠাকুরগাঁও ছেড়েছেন। অপরদিকে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন থেকে ২২ জন কৃষিশ্রমিককে কুমিল্লা জেলার লাঙ্গলকোট এলাকায় পাঠানো হয়।’

পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকা থেকে ইচ্ছুক শ্রমিকদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই শ্রমিকদের কাজে পাঠানো আগে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্ক থাকার বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়াসহ থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রত্যেকের তাপমাত্রা মাপার পাশাপাশি মাস্ক ও শুকনো খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, শ্রমিকদেরকে একটি প্রত্যায়নপত্র দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা কোথাও কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন।

রাজাগাঁও গ্রামের শ্রমিক সাইফুল বলেন, ‘প্রতি বছর এই সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করে উপার্জন হয়। যা কাজে লাগিয়ে সংসারের একটা চাহিদা পূরণ করা যায়। এবার লকডাউনের কারণে যেতে পারছিলাম না। এখন প্রশাসনের উদ্যোগে যেতে পারায় কিছু আয়-রোজগার হবে বলে আশা করছি।’

জামালপুর ইউনিয়নের শিবগঞ্জ গ্রামের শ্রমিক দিশারু বলেন, ‘প্রতি বছর এই সময়ে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাই ধান কাটতে। এবার করোনার কারণে যাওয়াটা অনিশ্চিত ছিল।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাড়ির লোক এবার করোনার কারণে যেতে দিতে অতোটা উৎসাহী না হলেও, অভাব মেটাতে যেতেই হয়।’

উপজেলা সূত্রে জানা যায়, এর আগে জেলার রানীশংকৈল উপজেলা থেকে প্রথম গত ২৩ এপ্রিল ২৫ জন শ্রমিক নেত্রকোনা জেলায় এবং পরবর্তীতে ১৬ জন কুমিল্লা, ৫৭ জন যশোর, ২৬ জন টাঙ্গাইল ও সাত জন নওগাঁ জেলায় যান। অন্যদিকে হরিপুর উপজেলা থেকে গত ২৬ এপ্রিল ২১ জন শ্রমিক যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে গেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফতাব আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ইতোমধ্যে ২৩৯ জন কৃষিশ্রমিক পাঠানো হয়েছে। আগ্রহী আরও অনেক শ্রমিক আছে। চাহিদা অনুযায়ী তাদেরকেও দেশের হাওর ও দক্ষিণ অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠানো হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
consensus commission bicameral parliament proposal

Consensus commission: Talks stall over women’s seats, upper house

The National Consensus Commission proposed establishing an upper house comprising elected representatives from each district and city corporation, and suggested abolishing the current system of reserved seats for women in parliament.

6h ago