রাজশাহীতে করোনায় মৃত ‘ঘোষিত’ রোগী করোনায় মারা যাননি
রাজশাহীতে করোনায় প্রথম মৃত্যুবরণকারী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী।
ডা. নওশাদ আলী জানান, গত ২৬ এপ্রিল সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ৮০ বছরের সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল ফুসফুসের রোগে, করোনায় নয়।
তিনি আরও জানান, কলেজের ভাইরোলজি বিভাগে স্থাপিত করোনা ল্যাবরেটরিতে রোগীর মৃত্যুর আগের দিন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে এনে পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরদিন সকালে ফলাফলে কোভিড-১৯ নেগেটিভ আসে।
কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেদিন এই ফল প্রকাশ করেনি। রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয় এটাই রাজশাহীতে করোনায় মৃত্যুর প্রথম ঘটনা।
অথচ মারা যাওয়ার ছয় দিন আগে একই ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল তার করোনা পজিটিভ।
গত ১৭ এপ্রিল মূত্রথলির রোগ নিয়ে রামেক হাসপাতালের মেডিসিনের একটি ইউনিটে ভর্তি হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। পরে দেখা যায় তার শ্বাসকষ্টের সমস্যাও আছে। তিনি করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ২০ এপ্রিল তাকে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রামেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা আইসিইউ বা আইসোলেসন পয়েন্ট থাকলেও সেগুলোর কোনটাতেই তাকে রাখা হয়নি।
যে মেডিসিন ইউনিটে রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন সেটিও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় ৪২ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীকে।
২০ এপ্রিল রাতে রোগীর করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে। পরে ২১ ও ২২ এপ্রিল কোয়ারেন্টিনে রাখা ৪২ জনের করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া যায়।
২৩ এপ্রিল রোগীর সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী ও এক ছেলের করোনা পরীক্ষার ফলাফলও নেগেটিভ আসে।
তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবারো রোগীর করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৫ এপ্রিল রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং ফলাফল নেগেটিভ আসে।
পরদিন সকালে রোগী মারা যান।
কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা সাবেরা গুলনাহার জানান, আক্রান্ত হবার পর শেষের দিকে অনেক ক্ষেত্রে করোনা রোগীদের গলা ও নাকের শ্লেষ্মার নমুনায় করোনা ভাইরাস পাওয়া যায় না। কারণ ভাইরাস ততদিনে ফুসফুসে চলে যায়।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. মো. এনামুল হক বলেন রোগীর যে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা হয়েছে সেটা তাকে জানানো হয়নি।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী সাধারণত একবার টেস্ট করে পজিটিভ আসলে ১৪ দিন পর তাকে আবার পরীক্ষা করতে হয়। এবং সাতদিন পর পর দুবার পরীক্ষা করে যদি করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায় তখন সেই রোগীকে করোনা মুক্ত বলা যায়।
রামেক হাসপাতালের করোনা চিকিৎসকদের সমন্বয়কারী অধ্যাপক আজিজুল হক আজাদ বলেন, তিনি রোগীর দ্বিতীয়বার করোনা পরীক্ষা সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে অপারগ।
তবে তিনি বলেছেন, রোগীকে অবস্থা জানার জন্য তো বার বার পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছেই। রোগী ফুসফুসের রোগ নিউমোথোরাক্সে ভুগছিলেন।
Comments