ব্যাটসম্যানরা বিশ্বসেরা হওয়ার খিদে নিয়ে ফিরবে, আশা ম্যাকেঞ্জির

বাংলাদেশের সীমিত পরিসরের ক্রিকেটের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি দক্ষিণ আফ্রিকার বাড়ি থেকে হতাশাজনক পরিস্থিতি নিয়ে জানিয়েছেন নিজের ভাবনা। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত আলাপে দিয়েছেন ইতিবাচক থাকার বার্তা। তার আশা, সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে এলে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি তাড়না নিয়ে ফিরবেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও।
Neil McKenzie
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

করোনাভাইরাস মহামারিতে গোটা দুনিয়ায় অস্বাভাবিক স্তব্ধতা। আর দশটা সময়ে রূঢ় বাস্তবতা থেকে মানুষের মন সরিয়ে স্বস্তি দিত যে খেলাধুলা, তাও বন্ধ অনেকদিন।  ভক্তদের প্রতীক্ষার প্রহর বাড়ছে। একঘেয়ে গৃহবন্দি জীবনে সীমাবদ্ধতা নিয়েই খেলোয়াড়রা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের ফিট রাখার কসরত। বাংলাদেশের সীমিত পরিসরের ক্রিকেটের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি দক্ষিণ আফ্রিকার বাড়ি থেকে হতাশাজনক পরিস্থিতি নিয়ে জানিয়েছেন নিজের ভাবনা। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত আলাপে দিয়েছেন ইতিবাচক থাকার বার্তা। তার আশা, সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে এলে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি তাড়না নিয়ে ফিরবেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও।   

স্থবির এই সময়টা পার করছেন কীভাবে? 

নিল ম্যাকেঞ্জি: সারা পৃথিবীতেই অভূতপূর্ব একটা অবস্থা চলছে। কোনো খেলা চলছে না, সবকিছু স্থবির। কিন্তু বড় প্রেক্ষাপটে দেখলে অনেক মানুষের জীবন থেমে যাচ্ছে, অনেকে প্রিয়জন হারাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে যন্ত্রণাদায়ক ও হতাশাজনক সময়। লকডাউন সবার জীবন স্তব্ধ করে দিয়েছে। সকল মানুষের জীবনের স্বার্থে দ্রুত একটা সমাধান বের হওয়া দরকার।

মাসখানেকের উপর হলো আমরা লকডাউনে আছি। আমি এর মধ্যে ইতিবাচক দিক খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। জীবনের অনেক কিছু নিয়ে ভাবার ফুরসত মিলেছে, পরিবারকে সময় দেওয়ার সুযোগ পাওয়া গেছে। ফেলে আসা সময়ে কী অর্জন করেছি, সামনে আর কী কী পাওয়ার আছে, এসব হিসাবনিকাশ মেলানোরও একটা সময় মিলেছে। আমার জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হলো পরিবারকে সময় দিতে পারা।  সবচেয়ে বড় কথা, আমরা একসঙ্গে আছি, সুস্থ আছি। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে। ভাগ্য ভালো বর্তমান যুগে ভিডিও কনফারেন্স, জুম কল অনেক কিছু করা যায়। হোয়াটসঅ্যাপ তো আছেই।  অনেকে এসবের সুযোগে ঘরে থেকেই কাজ করছেন। আশা করছি, দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে আর শিগগিরই আমরা স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরব।

ক্রিকেটবিহীন সময়টা কি আপনার কাছে অনেক লম্বা মনে হচ্ছে, বিশেষ করে ক্রিকেটার ও সমর্থকদের জন্য? 

ম্যাকেঞ্জি: হ্যাঁ।  সব খেলার জন্যই এটা অনেক লম্বা সময়। রাগবি, ক্রিকেট, ফুটবল, গলফ, টেনিস যাই বলুন না কেন, টিভিতে এখন খেলা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। স্বাভাবিক সময়ে মানুষকে জীবনের একঘেয়ে  বাস্তবতা থেকে দূরে রাখে খেলাধুলা। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটপাগল। তাদের প্রাত্যহিক রুটিনমাফিক জীবন থেকে একটু নিস্তার দিত ক্রিকেট। কিন্তু সেটা এখন আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আমরা যত না ক্রিকেট ফেরত চাই, তার চেয়ে আরও বেশি চাই  আর মানুষ যেন জীবন না হারান, কষ্ট না পান।

অবশ্যই সময়টা আদর্শ না। ক্রিকেটারদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। কোচদের জন্য সময়টা ভিন্ন। আমরা অনেক কিছু করছি। ফিটনেস নিয়ে ক্রিকেটারদের কিছু নির্দেশনা, কিছু কাজ দেওয়া হয়েছে। খেলোয়াড়দের জন্য হতাশাজনক সময়। বিশেষ করে তরুণ অ্যাথলেটদের জন্য সময়টা কঠিন, যারা কি-না বাইরে বেরিয়ে নিজেদের প্রতিভা দেখাতে চায় অথচ তাদের ঘরে আটকে থাকতে হচ্ছে।

কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কাজেই কোচ হিসেবে আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সতেজ রাখা। আমার মনে হয়, খেলোয়াড়দের সবাইকে তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করারও সুযোগ দিচ্ছে এই সময়টা। পেছনে ফিরে তাকিয়ে তারা ভাবতে পারে এখন যে পর্যায়ে আছে তাতে তারা সন্তুষ্ট কি-না এবং সামনে আরও কী কী বদল আনতে চায়। যখন লকডাউন শেষ হবে, তখন আমি চাইব, খেলোয়াড়রা যেন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি ক্ষুধার্তভাবে ফিরে আসে।  

যখন লম্বা সময় একজন ব্যাটসম্যান কোনো প্রস্তুতি নিতে পারে না, তখন কী রকম  প্রভাব পড়ে তার ওপর?

ম্যাকেঞ্জি: আমার মনে হয়, কারো জন্যই সহজ না (লম্বা সময় ধরে প্রস্তুতিহীন থাকা)। সে আপনি ব্যাটসম্যান হোন কিংবা বোলার। যখন মহামারি থামবে, আমার মনে হয়, দ্রুতই তারা (নিজেদের খেলায়) ফিরতে পারবে। এটা অনেকটা বাইক চালানোর মতো। আমি চাই, খেলোয়াড়রা আগের চেয়ে অনেক বেশি আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফিরবে। আমার মনে হয়, সারা দুনিয়াতেই আমরা কিছু ক্ষুধার্ত খেলোয়াড় দেখব, যারা নতুন শক্তি, নতুন আত্ম-উপলব্ধি নিয়ে ফিরবে।

তামিম, লিটন এদের সঙ্গে কথা হয়? কী পরামর্শ দেন এই সময়ে?

মাকেঞ্জি:  হ্যাঁ, যোগাযোগ তো হয়ই। তবে সবার সঙ্গেই আলাদা আলাদাভাবে না। গ্রুপ বা দল হিসেবে কোচরা আলোচনা করেন কোথায় দলকে নিয়ে যেতে পারি। আমরা এবং মেডিকেল স্টাফরা খেলোয়াড়দের কিছু গাইডলাইন দিয়েছি। আমরা ভিডিও এনালিস্ট  শ্রীনিকে (শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন) এক্ষেত্রে অনেকভাবে ব্যবহার করছি। খেলোয়াড়রা তাদের নিজেদের ফুটেজ, অন্যদের ফুটেজ দেখছে, খুঁটিনাটি বের করে বোঝার চেষ্টা করছে তারা কী চায়। আমার মনে হয়, এই সময়টা হচ্ছে নিজের প্রতিবিম্ব দেখার মতো। তবে একইসঙ্গে কোনো কিছু দরকার হলে খেলোয়াড়রা আমাকে কল করতে পারছে, ভিডিও পাঠাচ্ছে আর আমি উত্তর দিচ্ছি। কোনো খেলোয়াড় নিয়ে নতুন কিছু পেলে আমিও সেটা তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আশা করি, যখন তারা খেলায় ফিরবে, তখন আর এই প্রশ্ন থাকবে না যে, তারা কীভাবে ভালো হতে পারে, তখন প্রশ্ন হবে, তারা কীভাবে বিশ্বমানের হতে পারে।

আয়ারল্যান্ড সফর, অস্ট্রেলিয়া সিরিজ স্থগিত হয়ে গেল। আপনার জন্য এসব কতটা হতাশার?

ম্যাকেঞ্জি: কোচদের জন্য এটা হতাশার কিন্তু তার চেয়ে বেশি হতাশার ক্রিকেটারদের জন্য। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেললে আপনি আপনার স্কিলটা ঝালাই করার সুযোগ পাবেন। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি। এটা দুর্দান্ত এক সিরিজ হতে পারত। আয়ারল্যান্ড সফরটা সব সময়ই কাজের। বাইরের কন্ডিশনে কেমন খেলা যায় তা দেখানোর একটা সুযোগ ছিল খেলোয়াড়দের। সুযোগ অবশ্যই হাতছাড়া হলো। কিন্তু এটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।

সময়টা যদি আরও লম্বা হয় তাহলে একজন ব্যাটসম্যান কীভাবে খেলা নিয়ে নিজের নির্দিষ্ট ভূমিকায় মনযোগী থাকতে পারে? 

ম্যাকেঞ্জি: সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে। এখন সুযোগটা হলো সময়। কেবল ভাবতে পারে তারা আসলে কীসে সেরা, কী তারা বদলাতে চায়। যখন সব শুরু হবে, তখন যেন তাদের একটা পরিষ্কার চিন্তা-ভাবনা থাকে যে, নিজেদের খেলাটা তারা কোথায় নিয়ে যেতে পারে। 

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে নতুন কোনো কিছু খুঁজে পেয়েছেন, বাড়িতে আটকে থেকেও যেগুলো নিয়ে কাজ করে তারা উন্নতি করতে পারে?

ম্যাকেঞ্জি: ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সংস্করণের যে জায়গাগুলোতে (উন্নতির) সুযোগ দেখতে পাই, আমার মনে হয়, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়ে আমরা তা চিহ্নিত করতে পেরেছি। কোচদের কাজ হলো ধরিয়ে দেওয়া। তারপরের কাজটা হলো খেলোয়াড়দের, তারা জানে তাদেরকে ঘিরে কী ধরনের প্রত্যাশা আছে, তারা কী করে দেখাতে পারে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেক প্রতিযোগিতা আছে। প্রতিভাবান অভিজ্ঞরা আছে, তরুণরা আছে। আবার অনেক খেলোয়াড় উঠেও আসছে। আমরা আশা করছি, গত সিরিজে লিটন দাস নিজেকে যেমন উচ্চতায় নিয়েছে, সেভাবে কেউ এগিয়ে এসে পারফর্ম করবে। আশা করছি, খেলোয়াড়রা নিজেদের চিন্তার জগৎ পরিষ্কার করবে আর নিজেদের খেলাকে কীভাবে এগিয়ে নেবে ও উন্নতি করবে তা জেনে মাঠে ফিরে আসবে। কেবল বাংলাদেশের ভালো খেলোয়াড় না, বিশ্বমানের সেরা খেলোয়াড় হতে চাইবে।

লকডাউন শেষ হলে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আপনার প্রথম পরিকল্পনা কী থাকবে?

ম্যাকেঞ্জি: আমি আশা করব, লকডাউন শেষ হয়ে সব দ্রুত স্বাভাবিক হবে। কিন্তু আমি জানি না আবার কবে আন্তর্জাতিক যাতায়াত চালু হবে। অনেক প্রশ্ন আছে এখানে, যার উত্তর এখনো অজানা। আবার যখন অনুশীলন শুরু হবে, আরও অনেক বেশি নিবেদন, তাড়না নিয়ে কাজ করব। আরও বেশি ফোকাস থাকতে হবে, যাতে নেতিবাচক ব্যাপারে খেলোয়াড়রা আটকে না থাকে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago