তামিমের উপর ভর করেছিল ‘৫ সেকেন্ডের ম্যাডনেস’

দুবাইতে ২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তামিম ইকবালের ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাট করতে নামার দৃশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই স্মরণীয় এক ছবি। কীভাবে তার নামার সিদ্ধান্ত হয় তা তখনই জানা গিয়েছিল। এবার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে এক অনলাইন আড্ডায় তামিম আরও বিশদভাবে জানান তার তখনকার মনের অবস্থা।
Tamim Iqbal
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দুবাইতে এশিয়া কাপে ভাঙা হাতে ব্যাট করেছিলেন তামিম। ছবি: সংগ্রহ

দুবাইতে ২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তামিম ইকবালের ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাট করতে নামার দৃশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই স্মরণীয় এক ছবি। কীভাবে তার নামার সিদ্ধান্ত হয় তা তখনই জানা গিয়েছিল। এবার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে এক অনলাইন আড্ডায় তামিম আরও বিশদভাবে জানান তার তখনকার মনের অবস্থা।

শনিবার রাতে ইন্সটাগ্রাম লাইভে মুশফিকের সঙ্গে আড্ডায় মাতেন তামিম। খোশগল্প মেতে উঠা দুজনের কথায় আসে ক্রিকেটের অনেক বিষয়। উঠে আসে এশিয়া কাপে তামিমের সেই বীরত্ব গাঁথাও।

তখনকার প্রতিবেদন-  যেভাবে সিদ্ধান্ত হয় তামিমের নামার

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ওপেন করতে নামা তামিম শুরুর দিকে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। পরে হাসপাতালে নিয়ে দেখা যায় তার আঙুল ভেঙে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাট করতে আর নামার কথা ছিল না। কিন্তু ৪৭তম ওভারে নবম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দেখা যায় নেমে গেছেন তামিম। এক হাতে ব্যাট ধরে এক বল মোকাবেলা করেন। পরে স্ট্রাইক পাওয়া মুশফিক বাকিটা সময় একা চালিয়েই আনেন আরও ৩২ রান। বাংলাদেশও শ্রীলঙ্কাকে হারায় সে ম্যাচে।

তামিমের এক হাতে ব্যাট করার সে ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে  মুশফিকই তামিমকে প্রশ্ন করেন এই বিষয়ে, ‘দোস্ত তুই যে এক হাতে ব্যাট করতে নামলি, আমি তো তখন ক্রিজে, সিদ্ধান্তটা তুই কীভাবে নিলি তা জানার সুযোগ ছিল না। একটু বিস্তারিত বল।’

দুই বছর আগের ঘটনার হুবহু বর্ণনা দিতে থাকেন তামিম,  ‘আমি হাসপাতাল যাচ্ছিলাম ও মোবাইলে স্কোর দেখছিলাম। আমাদের দুই-তিনটা উইকেট খুব তাড়াতাড়ি পড়ে গেলো। তোর আর মিঠুনের একটা দারুণ জুটি হলো। ডাক্তারের কাছে ঢুকার আগে এ পরিস্থিতি ছিল। আমি যখন আবার ফেরত আসছিলাম তখন আবার একটা ধ্বস নামলো। দুই -তিনটা উইকেট পড়ে গেল। ব্যাটসম্যানরা সবাই আউট। ড্রেসিংরুমে ঢুকে দেখি ‍তুই ব্যাটিংয়ে। আর দলের স্কোর কোনোমতে এগিয়ে যাচ্ছে।’

‘ড্রেসিংরুমে কথা বলতে বলতে মাশরাফি ভাই (তখন অধিনায়ক ছিলেন) আমাকে বলে “যা ব্যাটিং কর!” আমি শুরুতে ফাজলামো হিসেবে নিয়েছিলাম। আমাদের ফিজিও থিহান আবার মাশরাফি ভাইকে বলছিল, ‘‘তুমি কি পাগল নাকি! ওর স্লিং লাগানো। কিভাবে ব্যাটিং করবে।’’ এটা নিয়ে আলোচনা করতে করতে দেখি তুই মারা শুরু করছিস। একশ’র কাছাকাছি হয়ে গেছে তোর। তখন আলোচনা সিরিয়াস হয়ে গেল। আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসলাম যদি মুশফিক স্ট্রাইকে থাকে এবং ওভার বাকি থাকে তাহলে আমি ব্যাটিংয়ে যাবো ওভাবেই। আমাকে ডাক্তার বলেছিল, ওটা নিয়ে দৌড়ানো যাবে না। কারণ মাত্রই হাত ভেঙেছিল। রিপ্লেসমেন্টের ব্যাপার আছে। দুর্ভাগ্যবশত চার বা পাঁচ নম্বর (পাঁচ নম্বর) বলে মোস্তাফিজ আউট হয়ে গেল।’

‘আমাদের সবার জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন পাগলামি ভর করে। হয়তোবা তুই নিজেও জানিস না যে, তুই কি করতে যাচ্ছিস! ওই পাঁচ সেকেন্ড আমার ওটাই হয়েছিলো। আমি ব্যাট নিয়ে হাঁটা শুরু করেছিলাম। আমাদের কোচ স্টিভ রোডস পেছনে দৌড় দিয়ে এসেছিলো। আমাকে থামিয়ে বলে, ‘‘তুমি কি করতে যাচ্ছো?” আমি বললাম, “আমি যাই।” ও আমায় আবার বলল, “এটা তো পরিকল্পনা ছিলো না।” আমি বললাম, “আমি ম্যানেজ করতে পারবো।” তখন ও বলে “তাহলে সব দায় তোমার।”’

‘আমার মতে ওই মুহূর্তে আমি ঠিক কাজটা করেছি। আর ওই সময়ে আমাকে সবচেয়ে সহজ বলটাই ওরা করেছে। বোলার যদি আমাকে ইয়র্কার বা উইকেটে বল করতো তাহলে কঠিন হয়ে যেতো। তুই জানিস যে, আমার সব পরিসংখ্যান, সব ইনিংস মনে থাকে। কিন্তু তোর ওই ইনিংস আমার মনে নেই। এতো ব্যথায় ছিলাম যে আমি কিছু মনে রাখতে পারিনি। যেভাবে চার-ছয় মেরেছিলি আমার কোনো ধারণাতেও ছিল না।’

এরপর মুশফিক জানান কী ভাবনা মাথায় নিয়ে খেলছিলেন তিনি,  ‘আমি আসলে ওরকম কিছু প্রত্যাশা করিনি। আমার কাছে সেরকম কোনো তথ্য আসেনি যে আমি থাকলে তুই ব্যাটিংয়ে আসবি। ওভাবে চিন্তা করে খেলিনি। আমি চাচ্ছিলাম শেষ পর্যন্ত থাকতে। কারণ, শেষ দুই তিন ওভারে যত রান করতে পারি সেটা বোনাস হবে। আমি জানতাম এবং মিঠুনের সঙ্গেও কথা বলছিলাম যে, এখানে যদি ২৩০ এর বেশি করি তাহলে চ্যালেঞ্জিং স্কোর হবে। মোস্তাফিজ আউট হওয়ার পর খারাপ লাগছিলো। কারণ, তখন মাত্র আমি মারা শুরু করেছিলাম।  আফসোস করেছিলাম যে, আরেকটু থাকলে ভালো হতো।’

‘কিন্তু তোকে আসতে দেখে মনে হয়েছিলো আমি এখন রাজা। আমাকে শাসন করতে হবে।  এরকম আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছিলো। পরের ওভারে দেখি থিসারা পেরেরা আসছে। ওকে দেখে আরও মন ভালো হয়ে যায়। যে যে জায়গায় বলগুলো চেয়েছিলাম সেখানে সেখানে বলগুলো দিয়েছে। ডেথ ওভারে যেসব জায়গায় বল খুঁজি ও সেগুলোই করেছে। যে স্কোর হয়েছিলো ওটা চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হবে। সবাই খুব ভালো বোলিং করেছিলো।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago