ভিক্ষুকের জমানো টাকাও বাঁধ নির্মাণে

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে বন্যার ভয়। লালমনিরহাটের আদিতমারী মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবর্ধান গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষ আশঙ্কা করছেন, বর্ষার আগে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব না হলে তিস্তার স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তাদের বাড়ি-ঘর।
Tista_Sand_Barrage
করোনার প্রভাবে আটকে গেছে বাঁধ নির্মাণ কাজ। বন্যার আশঙ্কায় তিস্তা পাড়ের মানুষ। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে বন্যার ভয়। লালমনিরহাটের আদিতমারী মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবর্ধান গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষ আশঙ্কা করছেন, বর্ষার আগে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব না হলে তিস্তার স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তাদের বাড়ি-ঘর।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, তিস্তা থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় গোবর্ধান এলাকায় তিস্তার বাম তীরে একটি খাল তৈরি হয়েছে। গত বর্ষায় এই খাল বন্যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছিল।

তারা জানায়, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। যে কারণে গ্রামবাসী নিজেরাই চাঁদা তুলে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। কৃষক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সাধ্য মতো এক হাজার টাকা পযর্ন্ত চাঁদা দিয়েছেন বাঁধ নির্মাণ তহবিলে।

ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিস্তা পাড়ের মহিমা বেওয়া (৬৯) ও ময়না বেওয়া (৬৭)। নদীর পাড়েই ছোট কুঁড়ে ঘরে বসবাস করেন তারা।

মহিমা বেওয়া জানান, তার বাড়ি-ঘর তিস্তার পেটে চলে যাওয়ায় তাকে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। তিনি বলেন, ‘মোরতো মেলা টাকা নাই। মুই পাঁচ শ টাবা দিছং, যেন বালির বাঁধটা যেন তাং হয়।’

Tista_Sand_Barrage_Mahiama
বাঁধ নির্মাণে ভিক্ষাবৃত্তির জমানো টাকা তুলে দিয়েছেন মহিমা বেওয়া (৬৯) ও ময়না বেওয়া (৬৭)।

ময়না বেওয়া বলেন, ‘অ্যালা মুই দশ বাড়ি বেড়ে খাং। মুই পাঁচ শ টাকা দিছোং বালির বাঁধ বানার জন্য। আরও টাবা দিনং হয়, কিন্তু করুনার জন্যে অ্যালা ভিক্ষাত যাবার পাবার নাগছোং না।’

গোবর্ধান গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক (৬৬) বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ না হলে শুধু বাড়ি না, শত শত বিঘা জমির ফসল তলিয়ে যাবে। গত বছর অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। সরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে আমরা নিজেরাই বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছি কিন্তু কাজ আগাচ্ছে না।’

কৃষক তৈয়ব আলী (৬৮) বলেন, ‘তিস্তা থেকে অবৈধ বালু তোলা বন্ধ হওয়া দরকার।’

মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান মতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মোট চার শ ফুট দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ কাজের অর্ধেকই বাকি আছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে গ্রামবাসী এখন আর চাঁদা দিতে পারছে না। মূলত কৃষক-দিনমজুর শ্রেণির মানুষের টাকায় অর্ধেক কাজ হয়েছে। বিত্তশালীরা কেউ এগিয়ে আসেননি। বর্ষার আগে জিও ব্যাগ ফেলে কাজ শেষ করা না গেলে তিস্তার স্রোতে বাঁধের অর্ধেকটাও ভেসে যাবে। হুমকির মুখে পড়বে শত শত বাড়ি, জমির ফসল, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। বাঁধ নির্মাণে সরকার কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা নিজেরাই কাজ শুরু করি।’

আরও পড়ুন:

রৌমারীতে এখনো চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago