বায়ুদূষণ করোনা মহামারির ঝুঁকি বাড়িয়েছে: গবেষণা

বাংলাদেশের উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারে। আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা করা হয়েছে।
বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর ঢাকা
ঢাকায় বায়ুদূষণ। স্টার ফাইল ছবি

বাংলাদেশের উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারে। আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা করা হয়েছে।

বায়ুদূষণ নিয়ে গবেষণা করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এই গবেষণায় বলা হয়েছে, চলমান বায়ুদূষণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা ধরনের শারীরিক অক্ষমতায় ভুগছেন বা কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই আক্রান্ত এই রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকিকে কোভিড-১৯ মহামারি আরও বাড়িয়ে তুলবে।

আজ সকাল ১১টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করে সিআরইএ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাটির প্রধান বিশ্লেষক লরি মিলিভিরতা বলেন, ‘বিশ্বের বেশ কয়েকটি গবেষণায় বায়ুদূষণ ও উচ্চ রক্তচাপ বা ফুসফুসে প্রদাহের মতো দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগের সম্পর্ক মিলেছে। একই সঙ্গে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ক্রনিক রোগে আক্রান্তরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজে সুস্থ হচ্ছেন না বা তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বায়ুদূষণ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যাকে বাড়িয়ে তুলছে এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতকে চরম চাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।’

গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ স্টাডি ২০১৭ এর তথ্য অনুসারে, বায়ুদূষণ বাংলাদেশে ১১ শতাংশ ডায়াবেটিস, ১৬ শতাংশ ফুসফুসের ক্যানসার, ১৫ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ), ১০ শতাংশ হৃদরোগ (ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ) এবং ৬ শতাংশ স্ট্রোকের জন্য দায়ী। 

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি কোভিড-১৯ মহামারিতে আক্রান্ত দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার জন্য পায়রায় সব কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের আবেদন জানান। 

তিনি বলেন, ‘পায়রার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পরিকল্পনা শুরুর সময়েই এই সম্ভাব্য দূষণের মাত্রা নিয়ে আলোচনা দরকার ছিল। এজন্য আরও বেশি করে এ ধরনের গবেষণা হওয়া দরকার।’

‘বায়ুর মান, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বাংলাদেশের পায়রায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ আর বাড়বে যদি পায়রায় প্রস্তাবিত ৮টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবগুলো নির্মাণ করা হয়। খুবই ছোট একটি এলাকার মধ্যে ৯.৮ গিগাওয়াট ক্ষমতার এই আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ প্রতিরোধী ব্যবস্থাও খুব দুর্বল। শেষ পর্যন্ত যদি সবগুলো কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এখানে নির্মিত হয়, তবে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। ভবিষ্যতে এই বিদ্যুৎ হাব স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াবে এবং করোনাভাইরাসের মতো আরেকটি মহামারি এলে অসংখ্য মৃত্যুর কারণ হবে।

গবেষণা অনুসারে, পায়রায় নির্মিতব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ৩০ বছরের মেয়াদকালের দূষণের কারণে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, ১১ হাজার ইসকেমিক হৃদরোগ, ৩০০ শিশুসহ প্রায় ৩ হাজার ফুসফুসের প্রদাহ, প্রায় ২ হাজার ফুসফুসের ক্যানসার, প্রায় ৯ হাজার স্ট্রোক এবং প্রায় আড়াই হাজার জন নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে মারা যেতে পারেন। 

অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ৭১ হাজার বার হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা, শ্বাসকষ্টের নতুন ১৫ হাজার অসুস্থ শিশু, নির্ধারিত সময়ের আগে ৩৯ হাজার শিশুর জন্ম, ২ কোটি ৬০ লাখ অসুস্থতাজনিত ছুটি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্য অক্ষম হয়ে প্রায় ৫৭ হাজার বছরের সমান সময় বেঁচে থাকা।

উল্লেখ্য, বায়ুদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবে এ দেশের গড় আয়ু প্রায় দুই বছর কমেছে। দূষিত রাজধানীগুলোর মধ্যে ঢাকা শীর্ষে, এখানে বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম২.৫) পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে আট গুণ বেশি।

Comments

The Daily Star  | English
economic challenges for interim government

The steep economic challenges that the interim government faces

It is crucial for the interim government to focus on setting a strong foundation for future changes.

13h ago