বৈশ্বিক উষ্ণতা

৫ দশকে আবাসস্থল হারাতে পারে ৩০০ কোটি মানুষ

বর্তমানের মতো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হার একই মাত্রায় বাড়তে থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৩০০ কোটি মানুষ তাদের আবাসস্থল হারাবে।
Global warming
ছবি: রয়টার্স

বর্তমানের মতো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হার একই মাত্রায় বাড়তে থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৩০০ কোটি মানুষ তাদের আবাসস্থল হারাবে।

গত সোমবার ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণার বরাতে সিএনএন জানায়, গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ যদি বর্তমান গতিতে চলতে থাকে তবে ২০৭০ সালের মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের তাপমাত্রা মাত্রারিক্ত হারে বাড়বে। ফলে, সেসব অঞ্চলে বাস করা অন্তত ৩০০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এক দল প্রত্নতাত্ত্বিক, জলবায়ু বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ পরিচালিত জরিপ বলছে, প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ১০০ কোটি মানুষকে হয় শীতল অঞ্চলে চলে যেতে হবে অথবা চরম আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে এখনি ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পৃথিবী মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে সর্তক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ও সহ-গবেষক টিম কোহলার জানান, গত ৬ হাজার বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি হারে বাড়তে চলেছে। হাজার বছর ধরে খাদ্য উৎপাদন ও পশুপালনের জন্য উপযোগী গড় তাপমাত্রায় মানুষের সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

ঐতিহাসিকভাবে জনসংখ্যার সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্পর্কের গাণিতিক তথ্য বলছে, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই মূলত এমন অঞ্চলে বাস করে যেখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর বাইরে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে বার্ষিক তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে কিছু জনগোষ্ঠী বসবাস করে। তবে, সেসব অঞ্চলে বছরে একবার বর্ষা আসে। বৃষ্টিপাতের কারণে খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। জমিতে সেচ দেওয়া যায়।

কোহলার জানান, অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষও একটি নির্দিষ্ট জলবায়ুতেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

তিনি বলেন, ‘একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ হিসেবে আমি সবসময়ই শিক্ষার্থীদের বলেছি প্রযুক্তি, বুদ্ধি ও প্রচলিত সংস্কৃতির কারণে মানুষ যেকোনো জায়গায় বসবাস করতে সক্ষম। তবে, এটাও সত্য যে উপযুক্ত তাপমাত্রার কারণেই পৃথিবীর কয়েকটি অঞ্চলে তুলনামূলক বেশি মানুষ বসবাস করে থাকে ও অর্থনৈতিকভাবেও এ অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল।’

বিজ্ঞানীরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র (এসি) আবিস্কারের ফলে কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেলেও ছয় হাজার বছর ধরে মানুষ প্রায় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বসবাস করে আসছে। শস্য উৎপাদন করছে।

তবে, বর্তমানে সমুদ্রের তুলনায় স্থলভাগের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে আগামী দশকের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২০৭০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে।

এর ফলে একদিকে যেমন খাদ্য উৎপাদন, পানির অভাব দেখা দেবে অন্যদিকে চরম আবহাওয়ার কারণে কয়েক কোটি মানুষ অভিবাসন সমস্যায় পড়বে, যুদ্ধ-বিগ্রহের মতো মারাত্মক পরিণতির শিকারও হতে পারে।

কোহলার বলেন, ‘দীর্ঘ ছয় হাজার বছর পর্যন্ত যা চলে এসেছে হঠাৎ করে তার পরিবর্তন দ্রুত, স্বাভাবিক ও ঝামেলামুক্তভাবে হবে না। এর জন্য মানবজাতিকে চরম যন্ত্রণায় পড়তে হতে পারে।’

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago