রডের বদলে বাঁশ দিয়ে স্কুলের ভবন নির্মাণ

কুরুকপাতা মৈত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবন। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দুর্গম কুরুকপাতা এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের এক ঠিকাদার।

কুরুকপাতা মৈত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সামা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার জামাল উদ্দিন এই স্কুল ভবনটি নির্মাণ করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিতে পড়বে।’

তিনি জানান, ২০১৩ সালে স্কুলটি সরকারীকরণ করা হয় এবং বর্তমানে এই স্কুলে ১৭৯ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। যাদের প্রায় সবাই পিছিয়ে পড়া ম্রো জনগোষ্ঠীর।

কুরুকপাতা ইউনিয়নে এই স্কুলটিই একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বলে জানান কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাত পুং ম্রো।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক যে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নির্মিত স্কুলে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে।’

যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদার ও আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের ড্রপ ওয়ালে মূলত সিমেন্ট-বালি-কংক্রিটের মিশ্রন আটকানোর জন্য বাঁশগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।’

‘এটা আমার ভুল হয়েছে। আমি যত দ্রুত সম্ভব বাঁশগুলো খুলে ফেলব’, যোগ করেন তিনি।

কুরুকপাতা মৈত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করার এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের সত্যতা পেয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ত্রিদিব কুমার ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘গতকাল বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। স্কুল ভবনের ড্রপ ওয়াল নির্মাণে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে।’

‘আমরা ইতোমধ্যে ড্রপ ওয়ালটি ভেঙে ফেলেছি। অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি কাজটি খুব অন্যায় করেছেন’, বলেন তিনি।

প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্কুলটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানান এই প্রকৌশলী।

এদিকে, স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মারমা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মং ওয়ে নু মারমা অভিযোগ করেন, তার লাইসেন্স দিয়ে জামাল কাজটি করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার অনুরোধ করেছি, জামালকে কাজটি না দেওয়ার জন্য।’

পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য অনেকেই পাহাড়িদের নামে করা ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালের জুনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ কাজের প্রাচীর তৈরিতেও লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করেছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

2h ago