করোনা রোগীদের আশার আলো এসকেএফের ‘রেমিভির’

দেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় কার্যকর কোনো ওষুধ ছিল না। সেখানে দেশের অন্যতম প্রধান ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফের তৈরি রেমডেসিভির ইনজেকশন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আশার আলো দেখাচ্ছে। গতকাল রোববার এক সেমিনারে এসব বলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।
কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সায় তৈরি করা হচ্ছে এমন একটি ওষুধ রেমডেসিভির নিয়ে সেমিনারে বিশিষ্ট চিকিত্সকদের সঙ্গে এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন। ১০ মে ২০২০। ছবি: আমরান হোসেন

দেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় কার্যকর কোনো ওষুধ ছিল না। সেখানে দেশের অন্যতম প্রধান ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফের তৈরি রেমডেসিভির ইনজেকশন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আশার আলো দেখাচ্ছে। গতকাল রোববার এক সেমিনারে এসব বলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও  প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার অল্প সময়ের ব্যবধানেই বাংলাদেশে এসকেএফ ওষুধটি উৎপাদন করেছে। এতে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা একটি অস্ত্র পেলেন। এসকেএফ ওষুধটি ‘রেমিভির’ নামে বাজারজাত করবে।

গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে রেমডেসিভির বিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও এসকেএফের নতুন ওষুধের পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন (বিএসএম) এবং এসকেএফ।

সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘রেমডেসিভির করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা বা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে। এসকেএফকে ধন্যবাদ, তারা এটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন যত তাড়াতাড়ি বাজারে আসে, ততই ভালো। এই ওষুধ বাজারে এলে চিকিৎসক ও রোগী দুই পক্ষই ভরসা পাবে। এসকেএফ ওষুধটি তৈরি করেছে জেনে অনেকেই আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন যুক্তরাষ্ট্র এই ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে, তখন ভেবেছিলাম এটি বাংলাদেশে আসতে হয়তো ছয় মাস লেগে যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি।’

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক রোবেদ আমিন নভেল করোনাভাইরাস, রেমডেসিভির, এর ব্যবহার, কার্যক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। উপস্থাপনায় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনসহ বিভিন্ন দেশে রেমডেসিভির কার্যকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল জানান।

রোবেদ আমিন বলেন, ‘এসকেএফকে ধন্যবাদ ওষুধটি প্রস্তুত করার জন্য। (যদিও) মৃত্যুহার এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে, তবুও এখন পর্যন্ত এটি একটি আশাব্যঞ্জক ওষুধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচ প্রকার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের পরীক্ষা চালাচ্ছে। এই পরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।’

তার উপস্থাপনার পরে এসকেএফের ফারাজ আইয়াজ হোসেন ভবনের প্ল্যান্টে রেমিভির উৎপাদনের একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। সেখানে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সর্বোচ্চ মান নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। প্ল্যান্টটি একাধিক আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা অনুমোদিত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ হচ্ছে কোনো অস্ত্র ছাড়াই। কিন্তু আমরা ঠিকই এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রতিষেধক তৈরি করতে পারব। আমরা সামনে এগোচ্ছি। ডেটা সংগ্রহ করছি।’

তিনি এসকেএফকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘যখন কোনো আশার আলো ছিল না তখন এসকেএফ সমাধানের পথ বের করার জন্য এগিয়ে এসেছে।’

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ তৈরি হয়নি। রেমডেসিভির রোগীর চিকিৎসার সময় কমিয়ে আনছে। তবে মৃত্যু কমাতে পারে, সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। তারপরও রেমডেসিভির গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমার পরামর্শ হচ্ছে করোনাভাইরাসের জন্য গঠিত জাতীয় কমিটিকে এটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যারা হাসপাতালে যাচ্ছে, অক্সিজেন নিচ্ছে, সেই রোগীদের রেমডেসিভির দেওয়া এবং এ-সংক্রান্ত তথ্য রাখা।’

তিনি এসকেএফকে ধন্যবাদ দিয়ে জানান, এটা অবিশ্বাস্য যে যুক্তরাষ্ট্রে রেমডেসিভির অনুমোদনের অল্প সময়ের মধ্যে তা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে।

সমাপনী বক্তব্যে এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন জানান, করোনা মহামারির এই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরাই সামনের সারিতে থেকে জাতির রক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, ‘সব প্রটোকল মেনেই রেমিভির তৈরি করা হয়েছে। যারা ওষুধ তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ করবেন, তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কোনো বাধা ছাড়াই সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে।’

তিনি করোনার বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভালো অবস্থানে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এসকেএফ সম্ভাব্য চিকিত্সার ব্যাপারে বাংলাদেশ সোসাইটি অফ মেডিসিন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদুল কবীর এবং এসকেএফের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক বিল্লাল আলম, অধ্যাপক এম.এ. জলিল চৌধুরী, অধ্যাপক শ্যামল সরকার, অধ্যাপক দিলীপ কুমার নাথ, অধ্যাপক আবদুর রহিম, অধ্যাপক এম.এ. কাশেম, ডা. এম.এ. সাত্তার, ডা. মুরাদ হোসেন ও ডা. অসীম চক্রবর্তী।

Comments