লালমনিরহাটে প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়

Lalmonirhat illegal haat toll.jpg
আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী হাটে তামাক কেনাবেচা চলছে। ছবি: স্টার

করোনা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী হাটে তামাক চাষিদের কাছ থেকে জোরপূর্বক মাত্রাতিরিক্ত টোল আদায় করছেন ইজারাদাররা। মণ প্রতি বিশ টাকা টোলের বিপরীতে নেওয়া হচ্ছে আশি টাকা, এতে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

অবৈধভাবে মাত্রাতিরিক্ত টোল আদায়ের বিরুদ্ধে কৃষকরা সোচ্চার হলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না, হাট ইজারাদারের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে কৃষকদের ঐক্যকে দমন করছেন। এ চিত্র শুধু সাপ্টিবাড়ী হাটের নয়, জেলার অধিকাংশ হাট-বাজারে যেখানে কৃষকের উৎপাদিত তামাক বেচাকেনা হয়, সর্বত্র একই পরিস্থিতি বিরাজমান।

গত ৮ মে সাপ্টিবাড়ী হাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অবৈধভাবে মাত্রাতিরিক্ত টোল আদায় করায় হাট ইজারাদার সাদ্দাম হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ইজারাদারকে হুঁশিয়ারি করে দেওয়া হয়, যাতে কোনোভাবে কৃষকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে মাত্রাতিরিক্ত টোল আদায় করা না হয়।

কিন্তু এতেও আসেনি কোনো পরিবর্তন। গতকালও সাপ্টিবাড়ী হাটে ছিল আগের চিত্র। কৃষকদের মন প্রতি আশি টাকা টোল দিতে হয়েছে। তামাক বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে ইজারাদারের লোক এসে উপস্থিত হয়ে জোরপূর্বক টোল আদায় করতে দেখা গেছে।

সাপ্টিবাড়ী হাটে আসা কৃষক নবিউর রহমান জানান, দুই মণ তামাক বিক্রির বিপরীতে তাকে ১৬০ টাকা টোল দিতে হয়েছে। গত বছর প্রতি মণ তামাকে টোল দিয়েছিলেন বিশ টাকা কিন্তু এবার আশি টাকা। হাটে টোল বেড়েছে কিন্তু কমেছে তামাকের দাম। গত বছর প্রতি মণ তামাক বিক্রি করেছিলেন ৩৬০০-৩৮০০ টাকা কিন্তু এ বছর বিক্রি করতে হচ্ছে ২০০০-২৪০০ টাকা।

একই হাটের অপর কৃষক দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘গত শুক্রবার হাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে ইজারাদারকে জরিমানা করেছিলেন। ভেবেছিলাম ইজারাদার আর অবৈধভাবে মাত্রাতিরিক্ত টোল আদায় করবে না। কিন্তু হয়নি কোনো পরিবর্তন।’

হাটে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টোল আদায় করায় তারা হতাশ এবং ক্ষুব্ধ বলেও জানান তিনি।

ওই হাটের তামাক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি হাট বারে সাপ্টিবাড়ী হাটে প্রায় ৮০০-১০০০ মন তামাক বেচাকেনা হয়। প্রতি মণ তামাকে আশি টাকা টোল আদায় করলে ইজারাদার ৬৪-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত পান। প্রতি সপ্তাহে হাট বসে দুদিন। গত দেড় মাস ধরে এখানে তামাকের হাট বসে আসছে। হাট ইজারাদার কৃষকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার টোল আদায় করছেন।’

সাপ্টিবাড়ী হাট ইজারাদার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বেশি দামে হাট ইজারা নেওয়ার কারণে বেশি টোল আদায় করতে হচ্ছে।’

বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন জানে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, ‘হাটে কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত হার ছাড়া একটি টাকাও অতিরিক্ত টোল আদায় করার কোনো নিয়ম নেই। সাপ্টিবাড়ী হাটে অভিযান চালিয়ে ইজারাদারকে জরিমানা করে তাকে হুশিয়ারি করা হয়েছে।’

প্রশাসনের নির্দেশনা না মানলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
enforced disappearance in Bangladesh

Enforced disappearance: Anti-terror law abused most to frame victims

The fallen Sheikh Hasina government abused the Anti-Terrorism Act, 2009 the most to prosecute victims of enforced disappearance, found the commission investigating enforced disappearances.

9h ago