করোনার রিপোর্ট না থাকায় হাসপাতালে প্রত্যাখ্যাত, মৃত্যুর পর করোনা নেগেটিভ

জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সন্তানের মৃত্যুর খবরে বাবার মৃত্যুর পর সেই ছেলের কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
রিমন হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত

জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সন্তানের মৃত্যুর খবরে বাবার মৃত্যুর পর সেই ছেলের কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে পরিবারের কাছে পাঠানো রূপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সাইদ আল মামুনের স্বাক্ষরিত ল্যাব টেস্ট রিপোর্টে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

পরিবারের অভিযোগ, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে না পারায় সোমবার ভোরে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও রিমন হোসাইনকে (৩৪) তারা ভর্তি করাতে পারেননি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর ভোর ছয়টার দিকে সে মারা যায়। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে এক ঘণ্টার মধ্যে তার বাবা ইয়ার হোসেন (৬০) মারা যায়।

সিদ্ধিরগঞ্জের সরদারপাড়া এলাকায় রিমনের বাড়ি। তিনি স্থানীয় একটি ইট ভাটার মালিক। তার আট মাসের একটি ছেলে আছে।

রিমনের চাচা সানিক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে ভাতিজার মৃত্যুর খবর শুনে বড় ভাই বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মেডিকেলে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। তাদের দাফন করার পর ফোনে জানানো হলো রিমন করোনায় আক্রান্ত ছিল না। আজকে তার রিপোর্ট আসছে। এই রিপোর্টটা আগে পেলে রিমনকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হতো না।’

চিকিৎসা না পাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে বুকে ব্যথার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আজগর আলী হাসপাতালে গিয়েছিল রিমন। ডাক্তার তাকে করোনার টেস্ট করিয়ে আনতে বলে জানান, রিপোর্ট নেগেটিভ হলে তবেই চিকিৎসা হবে। তখন তার শুধু কাশি ছিল। ডাক্তারের দেওয়া একটি পরীক্ষায় সেদিন তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। করোনা পরীক্ষার জন্য গত শনিবার সে রূপগঞ্জে নমুনা দিয়ে আসে। রোববার রাত ৯টায় রিমন বলে ওর বুকের নিচে ব্যথা ও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাকে সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল লিমিটেডে নিয়ে যাই। সেখান তাপমাত্রা দেখে ৯৮ ডিগ্রি। তারপরও বলে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া চিকিৎসা হবে না। সেখান থেকে ঢাকায় আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যাই।

সেখানে ডাক্তাররা বলেন, নিউমোনিয়ার সমস্যা আছে অক্সিজেন দিতে হবে। তখন আমরা তাদের বলি যা টাকা লাগে দিবো চিকিৎসা দেন। কিন্তু করোনার রিপোর্ট না থাকায় ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। বাধ্য হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেও একই অজুহাত; রিপোর্ট দেখান, সিট নাই এসব কথা বলতে শুরু করে। অনেক অনুরোধ, চিৎকার-চেঁচামেচি, বিভিন্ন জায়গায় তদবিরের পর রাত ১টার দিকে ভর্তি নেয়। এর মধ্যে একটা ট্যাবেলট খেতে দেয়। ভোর ৫টায় রিমন মারা যায়। ভাতিজার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তবু কেউ একটু অক্সিজেন বা কোন কিছুই দেয়নি। বিনা চিকিৎসায় ভাতিজা মারা গেল।’

তিনি বলেন, ‘আমার ভাতিজার অন্য কোনো রোগ ছিল না। ছোটবেলায় নিউমোনিয়া হয়েছিল। তখন চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। কিছুদিন ধরে হঠাৎ করে আবার দেখা দেয়।’

সানিক হোসেন আরও বলেন, ‘সব ডাক্তার বলে টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে আসতে। কিন্তু আমি সেটা কোথায় থেকে নিয়ে আসব। পরীক্ষা করতে দিয়ে এসেছি রিপোর্ট আসলে তো দিব। এর মধ্যে তো চিকিৎসা দিবে। রিপোর্ট নেগেটিভ হলে বলে চিকিৎসা দিবে আর পজিটিভ হলে কুর্মিটোলায় নিয়ে যেতে। রিমনের মতো আর করও সঙ্গে যেন এমন না হয়।

প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল এর সুপারভাইজার মো. মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনার উপসর্গ থাকায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। তাছাড়া তিনি করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্টও দেখাতে পারেনি।’

রূপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সাইদ আল মামুনের মোবাইলে একাধিক ফোন ও দ্য ডেইলি স্টার পরিচয়ে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে যেকোনো সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসা দিতে হবে। ঢাকায় পাঠানো হলে সে হাসপাতালে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করতে হবে। এ নির্দেশনার কথা আমি গণমাধ্যমে জেনেছি। এখনো লিখিতভাবে হাতে পাইনি। তাই কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে ভবিষ্যতে যেন এমন না ঘটে সেজন্য তাদের সর্তক করা হবে।’

দ্রুত করোনার রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আগে রিপোর্ট দেওয়ার মতো আমাদের লোকবল নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago