করোনা মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার আদর্শ দেশ ভুটান
![Bhutan Bhutan](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/bhutan.jpg?itok=0fsnEigg×tamp=1589343954)
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, তাইওয়ান কিংবা জার্মানির মতো দেশগুলো সবার মনোযোগ কাড়লেও প্রশংসার দাবি রাখে ‘বজ্র ড্রাগনের’ দেশ ভুটান। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তেমন জায়গা না পেলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটানের ব্যবস্থাপনা করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে আদর্শ।
সীমানার এক পাশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ চীন, অন্যপাশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেশ ভারত। ভারতের সঙ্গে ভুটানের উন্মুক্ত সীমান্তও আছে। ছোট দেশ ভুটানে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বসবাস করে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত ভুটানে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১১ জন। এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাননি।
লকডাউন ঘোষণার আগেই সংক্রমিত দেশগুলো থেকে ভুটানের অনেক শিক্ষার্থী দেশে ফিরেছেন। দেশটিতে লকডাউনের নিয়মে তেমন কড়াকড়ি ছিল না। সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার অনুমতি ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মানিকন্ট্রোল জানায়, গত ৬ মার্চ দেশটিতে প্রথম এক মার্কিন পর্যটকের করোনা শনাক্ত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজ দায়িত্বে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এমনকী, ভুটানের রাজা নিজেও ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই পর্যটকের সংস্পর্শে আসা সবাইকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করে ভুটান সরকার।
করোনা মোকাবিলার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসেই জাতীয় পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ভুটান। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একটি জরুরি কমিটিও সেসময় ঘোষণা করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসেই ১২০ টি কোয়ারেন্টিন সুবিধা প্রস্তুত করে রাখা হয়। দেশে প্রবেশ করার পর বাধ্যতামূলকভাবে তাকে ১৪ দিন সরকারি সেন্টারগুলোতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়।
ভুটানের রাজা সেসময় ঘোষণা করেছিলেন, ‘এ রকম সময়ে, এমনকী আমাদের ক্ষুদ্র জায়গা থেকেও নিজের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং অন্যকে সাহায্য করতে হবে। এই ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে জনগণের সব দুর্ভোগ, দুর্দশার দায়িত্ব সরকার নেবে।’
রাজার এ আহ্বান জনগণ মনে রেখেছে। দেশটির বেসরকারি হোটেল মালিকরা তাদের কক্ষগুলো বিনামূল্যে সরকারকে ব্যবহারের জন্য দিয়েছে। উন্নত হোটেলগুলোতে বিনামূল্যে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়।
রেস্তোরাঁগুলো বিনামূল্যে দরিদ্র স্থানীয়দের মাঝে খাবার বিতরণ করেছে। গ্রামের রেস্তোরাঁগুলো কোয়ারেন্টিন সেন্টার স্থাপনসহ সেখানে খাবার সরবরাহের মতো সুবিধা দিয়েছে।
মার্চ মাসে প্রথম আক্রান্ত শনাক্তের পরই ভুটানের সীমানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। লকডাউন ঘোষণার আগেই ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ভুটানের রাজা নিজেই রাস্তায় নেমে আসেন। দেশের বেশ কয়েকটি জেলা ও ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা তিনি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন।
ভুটানের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত নয়। সীমিত সম্পদের মধ্যেও দেশটির ব্যবস্থাপনা ব্যাপকভাবে প্রশংসনীয়। ভুটানের এক সিনিয়র সাংবাদিক সোনাম অংমো ও নীতিমালা বিশ্লেষক তেজ পারিখ জানান, ছোট এই দেশটিতে চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৩০০। আইসিইউ বিশেষজ্ঞ আছেন কেবল একজন। আর হার্ট বিশেষজ্ঞও মাত্র একজন।
তারা জানান, ভুটানে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। দ্রুত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কারণ একবার সামাজিক সংক্রমণের মতো বিস্তার শুরু হলে গোটা দেশই মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তো।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং নিজেও একজন চিকিৎসক। মহামারির বিপর্যয় বিবেচনা করে শুরু থেকেই জনস্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর তারই সুফল হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম করোনা সংক্রমণের দেশ ভুটান।
আরও পড়ুন:
Comments