খাদ্য সংকটে লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি

ছবি: স্টার ফাইল ফটো

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লক্ষাধিক বাংলাদেশি তীব্র খাদ্য সংকটে পড়ছেন এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আরও অনেক বাংলাদেশি বেকার হয়ে পড়েছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ঘর ভাড়া দিতে, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে এবং বাধ্যতামূলক করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যয় ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি গোলাম মোশীহ জানান, প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে এক লাখ মানুষ অনাহারে আছেন এবং তাদের বেশিরভাগই কাজের ব্যাপারে পরেছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দূতাবাস কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব দেশে খাদ্য সংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি হবে।

সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে প্রায় আট হাজার বাংলাদেশি কর্মীর মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মশীহ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আরও কয়েক হাজার প্রবাসীকে অবিলম্বে খাদ্য সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, তাদের অনেকেই দুই থেকে আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মহীন।

এছাড়াও, সৌদিতে অবৈধভাবে কাজ করা দুই থেকে তিন লাখ বাংলাদেশি তাদের বাসা ছেড়ে বের হন না। তাদের ভয় দেশটির কর্তৃপক্ষ এই অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ইতালি ও গ্রিসের দূতাবাস কর্মকর্তারাও জানিয়েছিলেন শিগগির অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য খাদ্য ও নগদ সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

কয়েক হাজার অবৈধসহ প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়া, গ্রীস ও ইতালিতে বসবাস করেন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন মিশন থেকে অভিবাসীদের সহায়তার জন্য অনুরোধ করার পর ৫ এপ্রিল মন্ত্রণালয় সাড়ে চার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছে।

২৩ এপ্রিল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ ‘তাত্ক্ষণিক খাদ্য সহায়তার জন্য’ আরও তিন কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছিলেন বলে অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

মানামা দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ পরামর্শদাতা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমেইলে কমপক্ষে চার হাজার ২০০ অভিবাসীর কাছ থেকে খাদ্য সহায়তার আবেদন পেয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে দুই হাজার ৮০০ খাবারের পার্সেল হস্তান্তর করেছে এবং বাকিরাও খুব শিগগির সহায়তা পেয়ে যাবেন।

তিনি জানান, বাহরাইনে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বা সাময়িকভাবে কাজ হারানোয় আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। দেশটিতে পরিচ্ছনাকর্মী হিসেবে নিযুক্ত বেশিরভাগ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসী অধিকার কর্মী হারুন-উর-রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দেশটিতে থাকা অনিবন্ধিত শ্রমিকদের সম্প্রতি আটক করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, খাদ্য সংকটের পাশাপাশি অনেক অনিবন্ধিত শ্রমিক ভয়ে আছেন। মহামারির মধ্যে এভাবে আটক করা ‘অমানবিক’।

মালয়েশিয়ার সরকার প্রতিটি প্রবাসী কর্মীর জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। যদিও দেশটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, এর খরচ বহন করতে হবে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা শ্রমিকদেরই বহন করতে হবে বলে তিনি জানান।

হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘এটা শ্রমিকদের উপর অতিরিক্ত বোঝা।’

তিরি আরও জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে চলমান লকডাউনের মধ্যে কর্মীরা কাজ করতে না পারলেও তাদের মূল বেতন প্রদানের মালয়েশিয়া সরকারের একটি নির্দেশনা রয়েছে। তবে অনেক শ্রমিক মার্চ মাসে মাত্র ১২ দিনের মূল বেতন পেয়েছেন।

মালয়শিয়ায় বাংলাদেশ হাই-কমিশনের শ্রমকল্যাণ পরামর্শদাতা জহিরুল ইসলাম জানান, কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাই-কমিশন অভাবগ্রস্তদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

অ্যাথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ পরামর্শদাতা সৈয়দা ফারহানা নূর চৌধুরী জানান, সম্প্রতি খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানের সময় অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা নগদ সহায়তা চেয়েছিলেন।

তিনি জানান, প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক গ্রীসে বাস করছেন এবং তাদের মধ্যে অন্তত এক হাজার ৮৫ জন খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন।

তিনি আরও জানান, গ্রীক সরকার সম্প্রতি কিছু অর্থনৈতিক কার্যক্রম সীমিত আকারে পুনরায় চালু করার অনুমতি দিয়েছে এবং এতে কয়েক হাজার অভিবাসী শ্রমিকের মাঝে  স্বস্তি এনে দিয়েছে।

রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ পরামর্শদাতা আরফানুল হক জানান, অনেক শ্রমিক বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়েছিলেন। মিশন তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারেনি। কারণ, সরকারের দেওয়া তহবিল এর জন্য অপ্রতুল ছিল। শ্রমিকদের সাধারণত একটি ইতালিয় শহরে মাসিক ভাড়া দেওয়ার জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ ইউরোর প্রয়োজন হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Wasa water stinks

For the past two weeks, Siddiqur Rahman, a resident of Shantibagh in Dhaka, has been receiving water from Dhaka Wasa infested with insects and accompanied by a strong stench.

12h ago