ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেই আ. লীগ নেতার ডিলারশিপ বাতিল, হচ্ছে নতুন তালিকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলমের ওএমএস’র ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। জেলা ওএমএস কমিটি এক জরুরি সভায় তার ডিলারশিপ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, ‘একইসঙ্গে ৮৪ ধনী ব্যক্তি ও দ্বৈত নাম এবং এক ঘরের দুই জনের নাম, ঠিকানার খোঁজ না পাওয়া এমন আরও সাত জনসহ মোট ৯১ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’

জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী, কন্যাসহ পরিবারের ১৩ সদস্যের নাম ওএমএস’র চাল ক্রয়ের তালিকায় রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া, একাধিক ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের স্বজন ও সচ্ছল ব্যক্তিদের নামও তালিকায় রাখা হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহ আলমকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে সন্তোষজনক জবাব না থাকায় তার ওএমএস ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তালিকা থেকে ৯১ জনের নাম বাদ দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে মো. শাহ আলম তালিকায় তার স্ত্রীর নাম থাকার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে, অন্যান্য স্বজনরা গরিব বলে উল্লেখ করেন। স্থানীয় সংশ্লিষ্টরা এসব নাম তালিকায় উঠিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চালের তালিকায় শাহ আলমের স্ত্রী মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা, ভাই মো. সেলিম (পরিবহন শ্রমিক নেতা), ভাই মো. আলমগীর, বোন শামসুন্নাহার, ভাইয়ের ছেলে প্রবাসী নাছির, শ্যালক তাজুল ইসলাম, শ্যালক শফিকুল ইসলাম, আরেক শ্যালকের স্ত্রী জান্নাতুল ইসলাম, বোনের তিন দেবর মতিউর রহমান, মাহবুবুর রহমান ও লুৎফুর রহমানের নাম রয়েছে। এ ছাড়া, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন দুলাল ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুণ অর রশিদের নাম রয়েছে।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের ভাই গোলাম রাব্বানী, হানিফ ও আরিফ রয়েছেন। হানিফ ও রাব্বানী পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী এবং আরিফ কাঁচামাল ব্যবসায়ী। এই ওয়ার্ডের তালিকায় থাকা হোসেন আল-মামুন, বশির মিয়া, সেলিনা বেগম, মো. ইকবাল ও মিনারা বেগম সচ্ছল। সাত নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় থাকা নাজির মিয়া দুই কোটি টাকার মালিক, সচ্ছল বজলু মিয়ার দুই ছেলে প্রবাসী ও কবির মিয়া শহরে কাপড়ের বড় ব্যবসায়ী, নূরুল আলমের বহুতল বাড়ির তৃতীয় তলার কাজ চলমান।

১২ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় রয়েছেন সাড়ে সাত একর জমির মালিক কানাই ঋষি ও চাল নিতে আগ্রহী নন সচ্ছল ব্যক্তি নাদির মিয়া। এ ছাড়াও, তালিকায় থাকা মজিবুর রহমান, রহমত আলী ভূঁইয়া, নকুল কুমার সাহা, বাচ্চু মিয়া, মৃণাল কান্তি রায়, নগেন্দ্র, ঋষি, নারায়ণ ঋষি, অপূর্ব সাহা, আলী আজম, শেখ আলী আজহার, রাকিব ভূঁইয়া, সাহিদ ভূঁইয়া, শওকত ওসমান, নাছিমা আক্তারও সচ্ছল। এ ছাড়া, একই ব্যক্তির নাম (শুভ সাহা) দুই বার রয়েছে।

দুই নম্বর ওয়ার্ডে মুজিবুর রহমান, অরূপ চন্দ্র মোদক, নারায়ণ বণিক, ইন্দ্রজিৎ বণিক ও বিশ্বজিৎ পালের রয়েছে বহুতল ভবন। রয়েছে একই পরিবারের সুবীর নাথ ও তার স্ত্রী স্বপ্না রানীর নাম। তিন নম্বর ওয়ার্ডে আবু তাহেরের ছেলে আবু বাকের পাঁচতলা ভবনের মালিক। নয় নম্বর ওয়ার্ডের জহির আহমেদ খান ও শাহাদাৎ হোসেন খান সচ্ছল।

পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের নাছিমা চৌধুরী ও আবু জামাল ভূঁইয়া দ্বিতল ভবনের মালিক। চার নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় ডিসি অফিসের কর্মচারী কাজল চন্দ্র বিশ্বাসের নাম আছে। এ ছাড়া, সুহেদা বেগম, কুসুম সরকার, মালতী দেবের নাম তালিকায় থাকলেও তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। শামীমা আক্তারের নাম উঠেছে দুই বার। এ ছাড়াও, তিনতলা বাড়ির মালিক সুধীর দাস ও বেসরকারি চাকরিতে কর্মরত সৈকত করের নামও রয়েছে।

আট নম্বর ওয়ার্ডে দোতলা বাড়ি আছে এমন পাঁচজন— কিতাব আলী, জীবন সাহা, নেরোজ আলী, সাকিল ও উপল মালাকারের নাম উঠেছে। এ ছাড়া, ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রউফের দুই ছেলে প্রবাসে থাকলেও তালিকায় তার নামও রয়েছে।

আরও পড়ুন:

কোটিপতিরাও ওএমএসের তালিকায়

Comments

The Daily Star  | English
BNP rally venue

BNP agrees to 10yr PM cap, objects to NCC

Party leaders said the decision was made to improve the BNP's image ahead of the next general election, as sticking to the previous stance was drawing criticisms.

11h ago