'পুরো বিশ্বেই খেলা বন্ধ তাই হতাশ হচ্ছি না'

তারকা খ্যাতি কখনোই পাননি মোহাম্মদ মিঠুন, কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ দলে অন্যতম ভরসার নাম এ ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। দলে যখন যেভাবে তাকে প্রয়োজন, মিঠুন চেষ্টা করেন সেটাই পূরণ করতে। ওপেনার হিসেবে নেমেছেন, খেলছেন সাত নম্বরেও। এমনিতে তার তার পরিচয় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে কিপিং কয়ার সুযোগ তেমন একটা মিলে না। তবে যখন যেখানে সুযোগ পান, চেষ্টা করেন নিজেকে প্রমাণ করার। অন্য সবার মতো করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে ক্রিকেট মাঠে না থাকায় গৃহবন্দী জীবনযাপন করছেন তিনিও। প্রথম পর্বে তুলে ধরা হলো এ লড়াকু ক্রিকেটার কী ভাবছেন বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে...
গৃহবন্দী জীবনে ছেলের সঙ্গে খেলেই সময় কাটাচ্ছেন মিঠুন

ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। এ ব্যাপারে কারও হয়তো দ্বিমত নেই। দেশের প্রায় সব মানুষ খোঁজ-খবর রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের।  স্বাভাবিক ভাবেই তাদের খেলতে দেখে আলাদা রোমাঞ্চ অনুভব করেন। কেবল তা-ই নয়, মাঠের বাইরে ক্রিকেটাররা কে-কী করছেন, সেসব গল্প শোনার ব্যাপারেও দেশের মানুষের আগ্রহ অনেক। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশব্যাপী চলমান এই অচলাবস্থায়, দ্য ডেইলি স্টার যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা কি করছেন এ নিয়ে নানা আলোচনা। সে সব তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

তারকা খ্যাতি কখনোই পাননি মোহাম্মদ মিঠুন, কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ দলে অন্যতম ভরসার নাম এ ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। দলে যখন যেভাবে তাকে প্রয়োজন, মিঠুন চেষ্টা করেন সেটাই পূরণ করতে। ওপেনার হিসেবে নেমেছেন, খেলছেন সাত নম্বরেও। এমনিতে তার তার পরিচয় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে কিপিং কয়ার সুযোগ তেমন একটা মিলে না। তবে যখন যেখানে সুযোগ পান, চেষ্টা করেন নিজেকে প্রমাণ করার। অন্য সবার মতো করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে ক্রিকেট মাঠে না থাকায় গৃহবন্দী জীবনযাপন করছেন তিনিও। প্রথম পর্বে তুলে ধরা হলো এ লড়াকু ক্রিকেটার কী ভাবছেন বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে... 

দ্য ডেইলি স্টার: সবার মতো আপনিও বাসাতেই আছেন। বর্তমান পরিবেশ-পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন?

মিঠুন: ঘরে থাকতে কখনোই ভালো লাগেনি। প্রথমদিকে মানসিকভাবে বেশ কষ্ট হয়েছে। কিন্তু যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে… ভয়ও তো লাগে। আর এখন তো বেশ লম্বা সময় হয়ে গেল। কিন্তু মানসিক অবস্থা ভালো না হলেও ঘরে থাকতেই হবে।

দ্য ডেইলি স্টার: ক্রিকেট আর বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি মিলিয়ে এই মুহূর্তে আসলে কী নিয়ে চিন্তা করছেন?

মিঠুন: আসলে হতাশ হয়ে পড়ার মতো কিছু দেখি না। কারণ, এখন যে পরস্থিতি, সেটা বিশ্বজুড়ে চলছে। তখনই হতাশ হতাম যদি এমন হতো যে, মাঠে ক্রিকেট চলছে কিন্তু আমি খেলতে পারছি না। তখন খারাপ লাগত। কিন্তু পুরো বিশ্বে খেলা বন্ধ তাই হতাশ হচ্ছি না। তাই নিজেকে তৈরি রাখার চ্যালেঞ্জটা এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যখনই ক্রিকেট মাঠে ফিরুক না কেন, আমি যেন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সবকিছু মানিয়ে নিতে পারি। কারণ, এই দীর্ঘ বিরতির শেষে ক্রিকেট ফেরার পর যদি গুছিয়ে নিতে আমার বেশি সময় লাগে, তবে সেটা আমার নিজের জন্যই ক্ষতিকর হবে। তাই শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে এবং স্কিলের দিক থেকে, যেভাবেই বলুন না কেন, নিজেকে তৈরি রাখার বিষয়টাই এখন আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং।

দ্য ডেইলি স্টার: এই অবস্থার মাঝেও নিজেকে ফিট রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। বিসিবি থেকেও কিছু গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে।

মিঠুন: আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজেকে ফিট রাখা। আমরা যারা পেশাদার ক্রিকেটার আছি, আমরা সবাই এটা বুঝতে পারছি যে, চলমান মহামারি থেকে পরিস্থিতি যখন ভালোর দিকে এগোবে, ক্রিকেট আবার যখন মাঠে ফিরবে, তখন খুব কম সময়ের মধ্যে আমাদেরকে প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নেমে পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে চোটে পড়ার একটা বড় সম্ভাবনা কিন্তু থাকে যদি কেউ আনফিট থাকে। স্কিলের জায়গাগুলো ঠিকঠাক হতে হয়তো কিছুদিন সময় নিবে। কারণ, এতদিনের লম্বা বিরতির পর মাঠে নামা। মাঠে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে যে সবকিছু ঠিকঠাক হবে তা না। ওইটা সময় দিলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চোট পেলে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যাবে। তাই ফিটনেসটা ধরে রাখা জরুরি যেন ওই সময়টাতে ঝামেলায় পড়তে না হয়।

দ্য ডেইলি স্টার: ফিট থাকার ব্যাপারে বিশেষ কোনো গাইডলাইন কী অনুসরণ করছেন? লাইভে (অনলাইনে) কী আপনাদের কোনো বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে?

মিঠুন: আমাদের জাতীয় দলের একটা গাইডলাইন আছে। প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা নির্দেশনা দেওয়া আছে। ঘরে থেকে কী কী করব তার সূচি দেওয়া আছে। তারপরও (অনুশীলনের) কিছু জিনিস আছে, যেগুলো আমার বাসায় নাই। মানে সব সুযোগ-সুবিধা তো সবার বাসাতে নাই। তো যতটুকু করা যায়, সেসব মিলিয়ে করেছি। নিজেরাও তো অনেক কিছু জানি যে, কী করলে কী হবে, কোনটা করলে কাজে দেবে। সেসবই করার চেষ্টা করছি। আমি তুষারদার (বিসিবি ট্রেনার তুষার হাওলাদার) সঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করছি। বিদেশি ট্রেনার আমাদেরকে একটা প্রোগ্রাম পাঠাচ্ছে। তো সেটা আমি অনুসরণ করতে পারছি না। কারণ, আমার বাসায় সুযোগ-সুবিধা নাই। তাই আমি তুষারদার সঙ্গে আলোচনা করছি বিকল্প হিসেবে কী করা যায় তা নিয়ে কিংবা নিজেই যেটা বুঝতে পারছি করলে ভালো হবে, তা করছি। এরকমভাবে চেষ্টা করছি সবকিছু চালিয়ে যেতে।

দ্য ডেইলি স্টার: ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এক রাউন্ড পরই স্থগিত হয়ে গেছে। তো এটা নিয়ে সামনে আপনার প্রত্যাশা কী?

মিঠুন: প্রত্যাশা বলতে, ক্রিকেটে ফিরতে হলে আগে ঘরোয়া ক্রিকেট দিয়ে ফিরতে হবে। আমরা বর্তমানে যে পর্যায়ে আছি, সরাসরি তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করতে পারব না। কারণ, তৈরি হয়ে তার পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেতে হবে। তো সামনে নিজেদের ঝালাই করে নেওয়ার সেরা জায়গা হলো ঘরোয়া ক্রিকেট। আর ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা আসর হলো প্রিমিয়ার লিগ। সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসর। আমরা চাই, দেশের পরিস্থিতি বুঝে, ক্রিকেট খেলার পরিবেশ যখন হবে, যত দ্রুত সম্ভব ঘরোয়া ক্রিকেট যেন চালু হয়। যেখান থেকে শুরু হয়েছে, সেখান থেকেই যেন শুরু হয়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে, জাতীয় দলে যারা খেলছে, তাদের ১৫-২০ জনের প্রিমিয়ার লিগ না হলেও সমস্যা হবে না। তারা চলতে পারবে। কিন্তু বাকি ৯০ ভাগ ক্রিকেটার প্রিমিয়ার লিগের উপরই নির্ভর করে থাকে। এখানে আর্থিক বিষয়টা জড়িয়ে আছে। এই খেলোয়াড়দের কথা চিন্তা করেও প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়া খুব জরুরি বলে আমি মনে করি। তাতে সবাই যেমন ক্রিকেটে ফিরতে পারবে, আবার অর্থনৈতিক সমস্যাটাও দূর হবে।

দ্য ডেইলি স্টার: বিরাট কোহলি কয়েকদিন আগে কথা বলেছেন দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলার ব্যাপারে। ইউরোপের ফুটবল লিগগুলোও বন্ধ দরজার ভেতরে শুরু হতে যাচ্ছে। আপনার মতামত কী?

মিঠুন: এটা (দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা) যদি হয়, তবে প্রথমবারের মতো হবে। বিষয়টা একেবারে নতুন হবে। এখন ভাইরাসটাও তো নতুন। এটাও তো আগে আসেনি। তাই দেখতে যেমনই লাগুক না কেন, খেলাটা শুরু হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আর খেলোয়াড়দের সুরক্ষাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন দর্শকভর্তি মাঠের ভেতরে খেললাম, আর এক হাজার লোক আক্রান্ত হলো কিংবা খেলোয়াড়রা আক্রান্ত হলো, তার চেয়ে ফাঁকা মাঠে খেলে সুস্থতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ না? দেখতে অদ্ভুত লাগবে। তা ছাড়া, নতুন যে কোনো কিছু একটি অন্যরকমই লাগে।

দ্য ডেইলি স্টার: সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দর্শকশূন্য মাঠে দ্রুততম সময়ে প্রিমিয়ার লিগ চালু করে বিসিবি যদি ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে ব্যাপারটা ভালো হয় কি-না?

মিঠুন: অবশ্যই, আমি চাই মাঠে ক্রিকেট ফিরুক। আমি খেলতে চাই। আর তা সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ক্রিকেট বোর্ডে অনেক মানুষ আছেন এসব দেখভাল করার জন্য, তারা সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। কী করলে ভালো হবে, কতটুকু করা সম্ভব-কতটুকু সম্ভব না, সবকিছু হিসাবনিকাশ করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

দ্য ডেইলি স্টার: খেলা শুরু হওয়ার আগে সব খেলোয়াড়ের বাধ্যতামূলক করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানো উচিত বলে মনে করেন? বাইরের যেসব দেশে খেলা চালু হচ্ছে, সেখানে এই নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে।

মিঠুন: আমি মনে করি, এটা করা উচিত। আমি এটাকে শতভাগ সমর্থন করি। কার শরীরে আছে তা তো বলতে পারব না আমরা। আমার নিজের শরীরেও থাকতে পারে। এখন আমি যদি করোনা পজিটিভ হই আর খেলতে গিয়ে দলের সবাই আক্রান্ত হলো, সেটা আমি চাইব না। সংক্রমণ হয়ে থাকলে আমি সুস্থ হয়ে উঠে আবার ফিরে আসব। আমি কখনোই চাইব না যে, আমার একার জন্য গোটা দল ভুক্তভোগী হোক। সবারই করোনাভাইরাস পরীক্ষা হওয়া উচিত।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনার ক্রিকেটের শুরুটা কীভাবে?

মিঠুন: আমি বিকেএসপিতে ২০০২ সালে ভর্তি হই। তারপর থেকেই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলছি। ২০০৩ সালেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেট... অনূর্ধ্ব-১৩ দলে খেলার সুযোগ হয়েছিল।

দ্য ডেইলি স্টার: নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে কীভাবে পর্যালোচনা করেন? এখন কোথায় আছেন? কিংবা এই পর্যায়ে এসে আপনার কোথায় থাকা উচিত ছিল? কারণ, বাংলাদেশ দলে জায়গা তো এখনও পাকা হয়নি।

মিঠুন: সত্যি কথা বলতে, আফসোস বিষয়টা আমার খুব কম। আফসোস হয় না, তা না। কিন্তু এটা আমি দ্রুত সরিয়ে দিতে পারি। কারণ, আফসোস করে আসলে কোনো কাজ হয় না। এটা নিয়েই যদি আমি থাকি, তাহলে সামনে যে কাজটা করা উচিত, সেটায় আমি মনোযোগ দিতে পারব না। তারপরও হ্যাঁ, অবশ্যই ভালো একটা অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কেউই চায় না নিজের অবস্থান নড়বড়ে করে রাখতে। সবাই চায় যেন নিজের জায়গাটা পাকা হয়। মানে, আমার নিজস্ব একটা জায়গা আছে, একটা পজিশন আছে। বাংলাদেশ যখন খেলতে নামবে, আমি যেন তখন ওই নির্দিষ্ট জায়গাটাতেই নিয়মিতভাবে খেলতে পারি। আমার নিজের কিছু ভুল আছে, মাঝে মাঝে ভাগ্যও সহায়তা করেনি। ক্রিকেটে ভাগ্য ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বলে, ভাগ্য বলে কিছু নাই। তবে আমি মনে করি, আমি হয়তো পরিশ্রম করতে পারি এবং নিজের কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে করতে পারি কিন্তু আমি ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারব না যে, আজকে মাঠে নেমে সেঞ্চুরি করব। এটা বলা সম্ভব না। কারণ, ক্রিকেটে যা হয়, আপনি মাঠে নেমে রানআউট হয়ে গেলেন অথবা আম্পায়ারের একটা ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হলেন। আপনি হয়তো দারুণভাবে ব্যাট চালিয়ে ৩০ রান করলেন কিন্তু একটা খুব ভালো বলে আউট হয়ে গেলেন। তা ছাড়া, নিজেরও কিছু ঘাটতি তো আছে। ভুল করার পরে সেসব চিন্তা করি। এই ভুলগুলা আরও কম করলে হয়তো আরও ভালো অবস্থানে থাকতাম।

দ্য ডেইলি স্টার: খুব ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ একটা বাজে শট খেলে আউট হয়ে যাওয়া। এই ব্যাপারটা বাংলাদেশের আরও অনেক ব্যাটসম্যানের মতো আপনার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। লম্বা ইনিংস খেলার ক্ষেত্রে এই যে ব্যর্থতা, কীভাবে দেখেন?

মিঠুন: সে কথাই বলছিলাম। ভুল করার পরে বুঝতে পারি যে, আগেই যদি সচেতন থাকতাম, তাহলে এমনটা হতো না। আমরা যদি ম্যাচের পরিস্থিতিটা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি… দেখুন, ব্যাটসম্যানদের টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলোর কথা বলুন কিংবা সামর্থ্যের, আমাদের সবকিছুই এখন বিশ্ব মানের। প্রতিভার বিচার করলেও, অন্যান্য দেশের যা আছে, আমাদেরও তা আছে। যদি গায়ের জোরের কথা বিবেচনা করেন, তাহলে জাতিগতভাবেই আমরা এই দিকটাতে পিছিয়ে। আমরা অস্ট্রেলিয়া বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মতো ততটা শক্তিশালী না। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ব মানের। তো ভুলের পরিমাণটা যদি আমরা কমাতে পারি… আরও একটা বিষয় মনে হয়, সেটা হলো চাপ। অয়ামি অন্যান্য দেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। ওরা শতভাগ মনোযোগ দিয়ে ক্রিকেট খেলতে পারে। কারণ, ওদের এত পারিপার্শ্বিক চাপ নাই, যেটা আমাদের উপমহাদেশে দেখা যায়। হ্যাঁ, মানুষ ক্রিকেটকে ভালোবাসে দেখেই ক্রিকেট নিয়ে এত মাতামাতি। কিন্তু আপনি যদি নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের দিকে তাকান, ওদের খেলোয়াড়দের এত মাথাব্যথা নাই, বাইরের চাপ নাই। ওরা ক্রিকেটকে ভালোবেসে পেশা হিসেবে নিয়েছে, মাঠে পুরোটা সময় মনোযোগ দিয়ে খেলছে। আমাদের এই জায়গাটাতে একটু সমস্যা হয়। দর্শকের চাপ, গণমাধ্যমের চাপ, যা-ই বলেন না কেন। এটা বাস্তবতা। এটা সত্য। মানসিকভাবে আমাদের কিছু ঝামেলায় পড়তে হয়। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এসব কিছু আমাদেরই মানিয়ে নিতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব।

দ্য ডেইলি স্টার: বড় ইনিংস খেলার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টাকে আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়?

মিঠুন: আমার কাছে মনে হয়, বল বাছাই করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেইসঙ্গে খেলার গতি-প্রকৃতি বোঝা। কিছুক্ষণ পরপরই খেলার মোমেন্টাম পাল্টে যায়, গতি বদলে যায়। এই ব্যাপারগুলো যে যত ভালো বোঝে… তার সঙ্গে নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে জানাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- কোন শটটা আমি ভালো পারি। এটা ঠিক একটা-দুইটা বিষয়ের ব্যাপার না, বেশ কিছু জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে বড় ইনিংস খেলা যায়।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনার দৃষ্টিতে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ভালোভাবে ম্যাচ পড়তে পারেন বা গতি-প্রকৃতি ও মোমেন্টামের পরিবর্তন ধরতে পারেন কে?

মিঠুন: আমার মনে হয়, মুশফিক ভাই এই জিনিসগুলো খুব ভালো বোঝেন। তবে একেকজন আসলে একেক রকম খেলোয়াড়। যেমন- সাকিব ভাইকে আপনি যখনই নামান না কেন, তিনি একইভাবে খেলবেন। তামিম ভাইও তার নিজের মতো করে খেলেন। তবে মুশফিক ভাই খেলার অবস্থা বুঝে বুঝে খেলেন। কারণও আছে। মুশফিক ভাই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের এই গুণ থাকা খুব জরুরি। কখনও যেমন দশ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে গেলে নামতে হচ্ছে, কখনও আবার ৩৫ ওভারের পরে নামতে হচ্ছে।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনার প্রিয় খেলোয়াড়ের কথা যদি বলেন… কাকে অনুসরণ করেন?

মিঠুন: নির্দিষ্ট করে কারও নাম আমি বলতে পারব না। কারণ, একেকজনের একেক গুণ থাকে। মাঠে যখন খেলি বা যার সঙ্গে যখন কথা বলি, তখন চেষ্টা করি আসলে যার মধ্যে ভালো যে গুণটা আছে, সেটা নেওয়ার জন্য।

দ্য ডেইলি স্টার: দু-একটা উদাহরণ দেওয়া যায়?

মিঠুন: আমার নিজস্ব একটা ধারা আছে। আমার যে ভালো দিকগুলো আছে, সেগুলো যেন ভালোভাবে বজায় রাখতে পারি। এর সঙ্গে ছোট ছোট কিছু জিনিস যেন যুক্ত করতে পারি। কারণ, একদিনের মধ্যে তো বিরাট কোহলি যা যা করে, তা আমি করতে পারব না। আবার কোহলি যেভাবে সফল হয়েছে, ওই একই কায়দায় আমিও যে সফল হব, তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। এখন কোহলিই ক্রিকেটে সবচেয়ে পরিশ্রমী খেলোয়াড়। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে, তার কঠোর পরিশ্রম করার পর আমি আরও নিচের দিকে চলে যেতে পারি। এমনটা হতেই পারে। আমার শরীর যতটুকু ধকল নেওয়ার সামর্থ্য রাখে, সেখান থেকে অল্প অল্প করে বাড়াতে হবে। আমি চেষ্টা করি শেখার। কথা বলতে বলতে যার কাছ থেকে যা কিছু নেওয়া যায়, চেষ্টা করি।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনি কি নিজের ব্যাটিংয়ের পুরনো ভিডিওগুলো দেখেন বা এখন দেখছেন?

মিঠুন: না, আমি পুরনো কোনো কিছু আসলে দেখি না। সামনে কী আছে, কীভাবে শুরু করব, সেসব নিয়ে আমি চিন্তা করি। আফসোসও রাখি না।

দ্য ডেইলি স্টার: দেশে-বিদেশে মিলিয়ে কোন বোলারকে খেলতে আপনার একটু অসুবিধা হয় বলে মনে হয়?

মিঠুন: আমার জীবনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কঠিন মনে হয়েছে গোলাপি বলের টেস্ট। কলকাতায় যেটা খেলেছিলাম। অনেক তো হলো ক্রিকেট খেলছি। অনেক প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলেছি। কিন্তু গোলাপি বল আমার কাছে ‘আনপ্লেয়েবল’ মনে হয়েছে। খুব বেশি কঠিন মনে হয়েছে। নির্দিষ্ট করে কেউ না, ভারতের যে তিনজন পেসার (মোহাম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব) ছিল, তিনজনকে খেলতেই আমার খুব কষ্ট হয়েছে।

দেশের কাউকে খেলতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। বুঝেই উঠতে পারছি না এমন কোনো কিছু হয়নি।

দ্য ডেইলি স্টার: বাসায় কি খেলা দেখা হচ্ছে? এখন তো টেলিভিশনে পুরনো ক্রিকেট ম্যাচ দেখানো হচ্ছে।

মিঠুন: হ্যাঁ, পুরনো খেলা দেখা হচ্ছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন চ্যানেলে কিংবদন্তি সাবেক তারকাদের আলোচনা অনুষ্ঠানও দেখানো হচ্ছে। সেগুলো দেখি।

দ্য ডেইলি স্টার: তামিম ইকবাল তো লাইভ প্রোগ্রাম করছেন। সেসব দেখা হয়?

মিঠুন: আমি আসলে লাইভ দেখতে পারি না। কারণ, আমার ফেসবুক নাই। পরে দেখি আর কী ইউটিউবে।

দ্য ডেইলি স্টার: মনে হয় না যে, এই ফাঁকা সময়টাতে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলা উচিত?

মিঠুন: না, সেরকম কিছু অনুভব করি না। আমার কাছে মনে হয় না যে, এটা খুব একটা কাজের জিনিস। প্রচার-প্রচারণা… আসলে আমার কাছে মনে হয় যে, আসল কাজটা ঠিক মতো করলেই হবে।

দ্য ডেইলি স্টার: টেলিভিশনে পুরনো খেলা দেখছেন বললেন। সাবেক তারকাদের সঙ্গে খেলতে না পারা নিয়ে কখনও কিছু মনে হয়েছে?

মিঠুন: (হাসি) না, ভাই। আসলে এই আফসোস ব্যাপারটা আমার মধ্যে নাই।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। তাদেরকে এখন সময় দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তো পরিবারের সদস্যরা কীভাবে দেখছেন এটাকে?

মিঠুন: হ্যাঁ, এখন তো কাজের কাজ বলতে এটাই করা হচ্ছে (স্ত্রী-সন্তানদের সময় দেওয়া), পরিবারের সঙ্গে থাকা। ছেলের বয়স তিন বছর নয় মাস। মেয়ের তো মাত্র এক মাস হলো। আর স্ত্রীর কথা বললে, বিয়ের পর তো এবারই প্রথম এত লম্বা সময় ধরে পাশে পাচ্ছে। যখন বিয়ে করেছিলাম, তখন জাতীয় দলে সুযোগ পাইনি। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতাম। তাই এখনকার মতো করে পাশে পাওয়া হয়নি কখনও। আর প্রত্যেকটা পরিবারের জন্যই এখন বেশ সংকটপূর্ণ সময়। কাজের মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। বাসার সব কাজ নিজেদের করতে হচ্ছে।

দ্য ডেইলি স্টার: রান্না-বান্না, ঘর-দোর পরিষ্কার করার কাজও কি করতে হচ্ছে (হাসি)?

মিঠুন: না, ভাই। রান্না আমি পারি না। করতেও হয় না। তবে হ্যাঁ, ঘর মোছা বা ঝাড়ু দেওয়া, বাচ্চাদের রাখা এসব সাহায্য করতে হয়। বড় ছেলেকে গাইড করার দায়িত্ব এখন আমার (হাসি)। মেয়েকে দেখার জন্য আমার স্ত্রী... শাশুড়িও আছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago