আহত অবস্থায় মহাবিপন্ন উল্লুক উদ্ধার

ছবি: স্টার

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ফূলবাড়ি এলাকা থেকে আহত মহাবিপন্ন উল্লুক উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে উল্লুকটি উদ্ধার করে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে। এখন এর চিকিৎসা চলছে।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বলেন, ‘বিভাগীয় বন কর্মকর্তার মাধ্যমে সংবাদ পাই। গতরাতে উল্লুকটি আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয়। ধারণা করছি, প্রাণীটি ফুলবাড়ির কোন একটি গাছে লাফাচ্ছিল। সেসময় কিছু লোক ঢিল মারতে থাকলে এটি গাছ থেকে পড়ে মাথায় ও কোমরে মারাত্বক আঘাত পায়। মাথায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। প্রাণীটির চিকিৎসা-পর্যবেক্ষণ চলছে।’

‘গতকাল থেকে উল্লুকটি আজ কিছুটা সুস্থ,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তবে কোমরে বেশি ব্যথা পেয়েছে। প্রাণীটি কোমর তুলতে পারছে না। রাতে তার মাথায় জখম ছিল; রক্ত বের হচ্ছিলো। এখন তা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে।’

সজল আরও বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে উল্লুক নামে পরিচিত এই প্রাণী মহাদুর্লভ হয়ে গেছে। মানুষের জন্যই আজ তাদের বসবাসের জায়গা বিনষ্ট হচ্ছে। তাদের চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।’

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির বানরের বসবাস। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো উল্লুক। এক সময় ওই দুই বনে উল্লুকের দেখা যেত।’

‘সাধারণত উল্লুক রাতে গাছের উঁচু ডালে ঘুমায়। দিনের বেলা খোলা জাায়গায় তেমন একটা না আসলেও বনের গভীরে গেলে চোখে পড়ে দল বেঁধে ৩/৪টি উল্লুক এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফালাফি করছে।’

‘সাতছড়িতে এক সময় অনেক উঁচু ও পুরনো গাছ ছিল। এগুলোতেই তারা আবাস গড়ত। খাবার হিসেবে ডুমুর, বটসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচা ফল খেত। এখন উঁচু গাছও কমে গেছে। পাকা ফলের গাছ নেই বললেই চলে। ফলে উল্লুকের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে গেছে।’

‘দেশের বিভিন্ন বনে এক সময় হাজার হাজার উল্লুক ছিল’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এখন রয়েছে মাত্র কয়েক শ। হবিগঞ্জের সাতছড়ি ও রেমা-কালেঙ্গায় এদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন এদের দেখা মেলে কদাচিৎ।’

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি হৃদয় দেবনাথ বলেন, ‘সারাবিশ্বেই উল্লুক বিপন্নপ্রায় প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে এ প্রাণীটি এখন মহাবিপন্নের তালিকায়।’

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উল্লুকের ওপর পিএইচডি করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ আহসান বলেন, ‘রেমা-কালেঙ্গা বন যে কোন সময় উল্লুক শূন্য হয়ে পড়বে। সাতছড়িতে এখনও কিছু আছে। ব্যাপকহারে বন ধ্বংসের জন্য এই প্রাণী আজ মহাবিপন্ন।’

‘উল্লুক সাধারণত মাটিতে নামে না’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বনে খাদ্য ঘাটতি ও এক গাছ থেকে অন্য গাছের দুরত্ব বেড়ে যাওয়ায় এই প্রাণী যখন নিচে নেমে আসে তখন অনেকে এদের হত্যা করে।’

Comments

The Daily Star  | English

Some parties trying to use Mitford incident as political tool: Rizvi

'BNP is a big family. Sometimes one or two miscreants can enter through a loophole.'

58m ago