‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে’ এবং আরও যা করণীয়

Rice Cultivation-1.jpg
ধান চাষ। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে পৃথিবীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ আজ ঘরবন্দি। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতির চাকা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, করোনা সংকটে আড়াই কোটি মানুষ তাদের চাকরি হারাবেন। আর দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। সংস্থাটি বলছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে কয়েক মাসের মধ্যে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ না খেয়ে মারা যাবেন। তবে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারে তার সমৃদ্ধ কৃষি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৪ মে বলেছেন, ‘মনে রাখতে হবে, কৃষি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এসে গেছে। দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। এই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য নিজের দেশকেও যেমন বাঁচাতে হবে, পাশাপাশি অন্যান্য দেশকেও সাহায্য করতে হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ সাহায্য চেয়েছে এবং আমরা তাদের জন্য খাদ্যশস্যও পাঠিয়েছি। সে জন্য এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।’

প্রধানমন্ত্রীর এ কথা এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ, এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ছুটছে সময়। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষার প্রধান হাতিয়ার হতে পারে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা। খেয়ে বেঁচে থাকতে পারলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যাবেই।

কিন্তু যদি কোনো কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়, সর্বনাশ হয়ে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে টাকা থাকলেও খাদ্য আমদানি কঠিন। আমদানি করা গেলেও তা বেশি দিন করার সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই খাদ্য উৎপাদন শুধু অব্যাহত রাখা নয়, আরও বাড়াতে হবে। বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিশেষ প্রণোদনাও দিচ্ছে সরকার। দরকার যথাসময়ে তার যথাযথ বাস্তবায়ন।

প্রণোদনায় আসল কৃষকের অন্তর্ভুক্তি দরকার

বর্তমান বাজেটে সার, সেচ কাজে বিদ্যুৎ বিলের রিবেট বাবদ কৃষিখাতে ৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ৯ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ ঋণ দেবে। একইসঙ্গে ৪ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে করোনা সংকটে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ ও প্রণোদনা পাবেন কৃষক। 

কিন্তু কৃষিঋণ নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণ পেতে হলে কৃষককে জমির দলিল বা বর্গাচাষির ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র জমা দিতে হবে। অর্থাৎ ভূমিহীন কৃষক বা বর্গাচাষিরা (অধিকাংশ বর্গাচাষির চুক্তিপত্র নেই) এই সুবিধা পাবেন না। অথচ তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। স্থানীয় সরকার বা প্রশাসনের প্রত্যয়নপত্র দিয়ে তাদের এই সুবিধার আওতায় আনার একটি পথ বের করা যেতে পারে। 

আবার, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়ছে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে। এটা ভালো। কৃষকদের জন্যও যদি সুদের হার ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা যায়, তাহলে আরও ভালো হবে। 

সার-বীজে ঘাটতি রাখা যাবে না

করোনা পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং উৎপাদন বাড়াতে ভবিষ্যতের ফসলের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে সরকার। আউশের জন্য বীজ ও সার বিনামূল্যে সারাদেশের প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে পাট ও তিলের বীজও। প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির জন্যও।

এই মহামারির সময়েও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায়ই চাল (ত্রাণ) চুরির খবর আসছে গণমাধ্যমে। সার-বীজও যেন বেহাত না হয় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। যদিও গত ২ মে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রণোদনা বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি করলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সময়মত পাট বীজ আমদানি করা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তা থেকে শিখে আমন ধান, ভুট্টা ও শাক-সবজির বীজও আগেভাগেই আমদানি করে রাখতে হবে। প্রস্তুতি রাখতে হবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও। সরকার যেসব জায়গায় পৌছাতে না পারবে, তাদের মনোযোগ দিতে হবে সেখানে।   

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করতে শুরু করেছে। তাই অঞ্চলভেদে বন্যা, খরা ও লবণ সহিষ্ণু ফসলের বীজ সময়মত পৌঁছে দিতে হবে। বিশেষ করে সামনের বন্যা মৌসুমের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বন্যা সহনশীল বা জলমগ্ন সহিষ্ণু ধানের জাত ‘ব্রি ধান ৫১’ ও ‘ব্রি ধান ৫২’ কৃষকের কাছে পৌছাতে হবে। এই জাত দুটির বৈশিষ্ট্য হলো- ধানের চারা লাগানোর ১০ থেকে ১২ দিন পর তা ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত থাকলেও চারা নষ্ট হয় না।

বিবেচনায় রাখতে হবে আগামী বোরো মৌসুমকেও। বোরো ধানের মধ্যে ‘ব্রি ধান ২৮’ ও ‘ব্রি ধান ২৯’ জাত দুটি বেশি জনপ্রিয়। চলতি বোরো মৌসুমে হাওরাঞ্চলে ‘ব্রি ধান ২৯’ চাষ করা হয়েছিল, যার ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৫ টন। কিন্তু এ জাতের জীবনকাল ১৬০ দিন হওয়ায় আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই হাওরে নতুন ‘ব্রি ধান ৮৮’ চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা যেতে পারে। এই ধানের জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৩ দিন এবং ফলন হেক্টর প্রতি ৮.৫ টন।

ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে

ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া যেন কৃষকের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতি মৌসুমেই আমরা কৃষকের হাহাকার শুনি। শুনি অনেক আশ্বাসের কথাও। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় না। কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনির মূল্য তো নাই-ই, উৎপাদন খরচই ওঠে না ফসল বিক্রি করে। 

ফসল উৎপাদনের খরচ, শ্রম ও দ্রব্যমূল্যের মাপকাঠিতে দাম নির্ধারণ করতে হবে এবং তা প্রতিপালনে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ন্যায্যমূল্য পেলে কৃষক যেমন বাঁচবেন, অটুট থাকবে খাদ্য নিরাপত্তাও। কৃষিনির্ভর এই দেশে কৃষকের হাতে টাকা থাকলে তারা অন্যান্য নিত্যপণ্যও কিনতে পারবেন। ফলে সচল থাকবে অর্থনীতির চাকা, বাঁচবেন অন্য পেশার মানুষও। 

করোনা সংকট বিবেচনায় ২০ লাখ ২৫ হাজার টন খাদ্যশস্য কিনবে সরকার। এর মধ্যে ৮ লাখ টন ধান কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনবে খাদ্য অধিদপ্তর। সরকার নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি দরে ১ মণ বোরো ধানের দাম হয় ১ হাজার ৪০ টাকা।

সুনামগঞ্জে ধান উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। সেখান থেকে সরকার কিনবে মাত্র ২৫ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ কৃষককে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে মূলত মিল মালিকদের কাছে, দাম মিলছে মণ প্রতি মাত্র ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা। যেখানে উৎপাদন খরচই মণ প্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। হাওরাঞ্চলের অন্যান্য জেলায়ও কম-বেশি একই চিত্র। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

সমাধান হতে পারে সামাজিক শস্য সংরক্ষণাগারে

সরকারি খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ১৯.৫ লাখ টন। বর্তমানে মজুদ আছে ১৫ লাখ টন। চলতি বোরো মৌসুমে ২০ লাখ ২৫ হাজার টন খাদ্যশস্য কিনবে সরকার। অর্থাৎ ১৫ লাখ টন রাখার জায়গা নেই। হতে পারে করোনা সংকটে মানুষকে ত্রাণ দিয়ে একদিক দিয়ে গুদাম খালি হবে, অন্যদিকে নতুন ফসল মজুদ হবে। 

আর যদি স্বাভাবিক সময়ের কথা ভাবি, তাহলে কৃষককে বাঁচাতে হলে সরকারকে আরও বেশি ফসল কৃষকের কাছ থেকে কিনতে হবে এবং সে অনুযায়ী সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

ভালো বিকল্প হতে পারে সামাজিক সংরক্ষণাগার। বিষয়টি হচ্ছে, প্রতিটি গ্রামে বা পাড়ায় যদি একটি শস্য সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা যায় এবং কৃষকের ফসল সেখানে সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে সরকার সেই ফসল কিনে সেখানেই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারে। এতে কৃষকও বাঁচবে, সরকারেরও লাভ হবে। আমরা সবসময়ই দেখি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় খুবই কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক।

সংরক্ষণাগার তৈরির জন্য সরকার ভর্তুকি দিতে পারে। এগিয়ে আসতে পারে বেসরকারি সংস্থা, উন্নয়ন ও দাতা সংস্থাগুলোও। অর্থায়ন হতে পারে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) মাধ্যমেও। কিংবা কৃষকরা নিজেরাই সমিতির মাধ্যমে গুদাম বানাতে পারেন।

অপচনশীল শস্যের জন্য সাধারণ সংরক্ষণাগার আর পচনশীল শস্যের জন্য হিমায়িত সংরক্ষণাগার বা কোল্ড স্টোরেজ। কোল্ড স্টোরেজ হতে পারে সৌর বিদ্যুৎ চালিত। আকার নির্ধারিত হবে প্রয়োজন মাফিক, যেখানে এক-দুই মাস বা আরও একটু বেশি সময় শস্য রাখা যাবে এবং সুবিধামত সময়ে তা বিক্রি করা যাবে। আবার এমনও হতে পারে, পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি এসব গুদাম থেকে ফসল কিনবেন। এটা অঞ্চল ও ফসল উৎপাদনের ধরণভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

তবে এর জন্য দরকার বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর উচিত এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া। একটি টেকসই ও সহজলভ্য প্রযুক্তি যদি কৃষকের হাতে দেওয়া যায়, তারা অবশ্যই সেটা গ্রহণ করবেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন ২০১৪ সালে বিশেষ এক ধরণের বিকল্প হিমাগার তৈরি করেছিলেন। যাতে বিদ্যুৎ লাগে না। জলীয় বাষ্পের খুব সাধারণ একটি ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখা ও বাঁশের তৈরি এক ধরণের প্রযুক্তি দিয়ে বাতাসের আর্দ্রতা শুষে নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল সেখানে। রাজশাহী নগরের নমোভদ্রা এলাকায় তৈরি করা হয়েছিল বিকল্প হিমাগারটি। অর্থায়ন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং হিমাগারটি উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান। ৩০০ টন ধারণক্ষমতার হিমাগারটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছিল ১৪ লাখ টাকা। যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে এ ধরনের একটি হিমাগার বানাতে লাগে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। তবে, নির্মাণসামগ্রী টেকসই না হওয়ায় এটি বেশিদূর এগোয়নি।

এমন নতুন নতুন ধারণার উদ্ভব এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে, কিংবা উন্নত দেশগুলোর প্রযুক্তি দেখে শিখে দেশীয় প্রযুক্তির মিশেলে একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থা

শ্রমিকের মজুরিসহ উৎপাদন খরচ বাড়লেও কৃষকের ফসলের দাম বাড়ে না। লাভটা ভোগ করেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে ঋণের জাল থেকে বের হতে পারেন না কৃষকরা। দেশের বিপণন ব্যবস্থার চিত্র যা, তাতে আশঙ্কা থেকে যায় যে এই সংকট আগামীতে আরও বাড়বে।

বিপরীতে সরকার কৃষিখাতকে প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। কম্বাইন হারভেস্টার, পাওয়ার টিলার, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ও সিডার-এর মত কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। একটি হারভেস্টারের দাম ২৮ লাখ টাকা হলে সরকার দেবে ১৪ লাখ এবং কৃষককে দিতে হবে বাকি ১৪ লাখ। আবার কোনো প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কিস্তিতে টাকা পরিশোধের সুযোগ দিচ্ছে কৃষকদের।

করোনা সংকটে বোরো ধান কাটার জন্য যখন শ্রমিক সংকট দেখা দিল তখন (১৯ এপ্রিল ২০২০) সরকার ঘোষণা দিল, হাওর অঞ্চলে ভর্তুকি দেওয়া হবে ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ, ২৮ লাখ টাকার একটি হারভেস্টার কিনতে কৃষককে দিতে হবে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

প্রযুক্তি সময় ও খরচ দুটোই বাঁচায়। শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে একর প্রতি খরচ হয় কম-বেশি ১০ হাজার টাকা। সেখানে হারভেস্টার কাজে লাগালে খরচ কমে হয় কম-বেশি ৬ হাজার টাকা। আবার শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে প্রতি ১০০ মণে কম-বেশি ৫ মণ নষ্ট হয়। কিন্তু হারভেস্টার ব্যবহারে তা ১ মণে নামিয়ে আনা সম্ভব।

তাই কৃষিখাতে যন্ত্রের ব্যবহার আরও বেগবান করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে কৃষিযন্ত্র ও এর উপকরণ আরও সহজলভ্য করার। মনে রাখতে হবে, কৃষিখাতে ভর্তুকি মানে ভর্তুকি নয়, বিনিয়োগ। যে বিনিয়োগ ১৬ কোটি মানুষকে খাবারের নিশ্চয়তা দেবে। 

তবে মাথায় রাখতে হবে, যে সব প্রযুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা ভূমিরূপ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশে ব্যবহারযোগ্য কী না। যেমন: হাওরাঞ্চলে যেসব হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে তা কাঁদা ও জলমগ্ন জমিতে কাজে আসে না। একইসঙ্গে শস্য পরিবহন ও বিপণনে আধুনিক প্রযুক্তির মিশেল ঘটাতে হবে। 

চাহিদার ভিত্তিতে অঞ্চলভেদে নির্ধারিত ফসল চাষ

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে খুব সহজেই নির্ভুলভাবে হিসাব করা সম্ভব কোন মৌসুমে কোন অঞ্চলে কোন ফসল কতটুকু চাষ হয় এবং কোন ফসলের চাহিদা কতটুকু আছে। এই তথ্য কাজে লাগিয়ে নির্ধারণ করে দেওয়া যায় কোন মৌসুমে কোন অঞ্চলে কতটুকু জমিতে কোন ফসল উৎপাদন করলে কৃষক লাভবান হবেন এবং একটি দানাও নষ্ট হবে না।

এ ক্ষেত্রে সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদের প্রচলনও করা যেতে পারে। যেখানে আল তুলে দিয়ে চাষ হবে এবং জমি অনুপাতে ফসল ভাগ করে নেবেন কৃষকরা। এতে যেমন জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে, তেমনি ক্ষুদ্র চাষিরা নিরাপদ বোধ করবেন। একইসঙ্গে বাজারে তাদের দর কষাকষির সক্ষমতাও বাড়বে।   

বিবেচনায় নিতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনও

করোনা মহামারিই শেষ নয়, আগামী দিনে আরও নতুন নতুন দুর্যোগের জন্ম দেবে জলবায়ু পরিবর্তন। তাছাড়া, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যা আমাদের নিত্যসঙ্গী। সেই বিবেচনায় খাদ্য নিরাপত্তা অটুট রাখতে হলে সরকারকে আরও যত্নশীল হতে হবে। প্রযুক্তি ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

সেই সঙ্গে কঠোর হাতে দমন করতে হবে দুর্নীতি। কারণ, দুর্নীতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। 

জিএম মোস্তাফিজুল আলম, ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচিতে কর্মরত।

[email protected]

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Boarding bridge collapse damages Kuwait Airways aircraft at Dhaka airport

The incident occurred around 2:30am shortly after Kuwait Airways flight KU283 landed in Dhaka at 1:30am

32m ago