গতিপথ বদলাচ্ছে আম্পান, সাগরে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত
দক্ষিণপূর্ব ও দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান সামান্য উত্তরপশ্চিম দিক এগিয়েছে। তবে একই এলাকায় অবস্থান করছে। আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৬ দশমিক শূন্য ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ঝড়টি অবস্থান করছিল।
অর্থাৎ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩২৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৬০ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫০ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ছিল আম্পান।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বর্তমান গতিতে আম্পান বাংলাদেশে আসতে অন্তত আরও তিন দিন সময় লাগবে। ২০ কিংবা ২১ মে এটি বাংলাদেশে আঘাত হানবে। ঝড়টি বারবার গতিপথ পরিবর্তন করছে। পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সুন্দরবনের দিকে আঘাত হানার সম্ভাবনা দেখা গেছে আবার গতিপথ পরিবর্তন করছে। তাই পাঁচ শ’ কিলোমিটারের ভেতরে না আসা পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না ঝড়টি কোথায় আঘাত হানবে এবং কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে।’
রাডারের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়ে আসতে পারে। এর কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গাতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকছে।
সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার যেন উপকূলের কাছাকাছি থাকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর আরও বলছে, ঝড়ের প্রভাবে আজ রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেশের অন্যান্য জেলায় আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকবে।
তবে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী, পাবনা, পটুয়াখালী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ আরও দুএক দিন থাকতে পারে।
ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চল সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাইক্লোন আম্পান মোকাবিলায় ৩৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবারও মজুদ করা হয়েছে।’
বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রঘূনাথ কর বলেন, ‘গতকালই আমাদের ৮৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। আজ আরও ১০ শতাংশ ধান কাটা হবে। আমাদের ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও বলছে, চলতি মাসে আবহাওয়া পরিস্থিতি পূর্বভাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রয়েছে। এ মাসে সাগরে দুটি নিম্নচাপ হওয়ার কথা। যার মধ্যে অন্তত একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার কথা।
আরও বলা হয়েছিল, দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত এলাকায় দুই থেকে তিন দিন মাঝারি কিংবা তীব্র কালবৈশাখী ও অন্যান্য জায়গায় তিন থেকে চার দিন হালকা কিংবা মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। সেই সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
এ মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা) এবং অন্যান্য অঞ্চলে একটি কিংবা দুটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা) অথবা মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এপ্রিল মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে ঢাকা বিভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিক ছিল। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বায়ু প্রবাহের সংযোগ ও বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে জলীয় বাষ্পের যোগান বেড়ে যাওয়ায় ১ থেকে ৪, ১১ ও ১২, ১৫ থেকে ২১ এবং ২২ থেকে ৩০ এপ্রিল দমকা হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় কোথাও কোথাও বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ ও এর পাশের এলাকায় তাপীয় লঘুচাপের কারণে ১ থেকে ১৫ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ও ১০ এপ্রিল রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়ার রেকর্ড করা হয়। এপ্রিল মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল।
Comments