রপ্তানি না হওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় কলারোয়ার আম চাষিরা

স্বাদে-গুণে অনন্য সাতক্ষীরার কলারোয়ার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, হিমসাগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম বেশ কয়েক বছর ধরেই ইউরোপের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে আম রপ্তানির সম্ভাবনা নেই জানিয়ে দেশের বাজারেই বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
সাতক্ষীরার কলারোয়ার গোয়ালচাতর গ্রামের আম বাগান। ছবি: সংগৃহীত

স্বাদে-গুণে অনন্য সাতক্ষীরার কলারোয়ার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, হিমসাগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম বেশ কয়েক বছর ধরেই ইউরোপের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে আম রপ্তানির সম্ভাবনা নেই জানিয়ে দেশের বাজারেই বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলী জানান, চলতি বছর পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় বিদেশে আম রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। তবে রপ্তানি না হলেও দেশের বাজারে চাষিরা বেশ লাভে আম বিক্রি করতে পারবেন।

বিষমুক্ত আম রপ্তানির লক্ষ্যে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় যখন ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষিরা তখন এই খবরে লোকসানের শঙ্কায় তারা।

আম চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে আমের ফলন অনেকটাই কম। এরমধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস দুর্যোগ।

তবে এই খাতে যুক্তরা মনে করছেন, রাজধানীসহ সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে বাজারজাত করা গেলে চাষিদের লোকসান কমানো সম্ভব হবে।

কলারোয়া উপজেলার সিংগা গ্রামের আম ব্যবসায়ী কবিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ১৬ লাখ টাকার আম বাগান কেনা হয়েছে। খরচ বাদেও পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে, এমন আশা ছিল।

তবে করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর তিনি ঢাকায় আম বিক্রি নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।

‘আমের ব্যবসা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো কারবার নেই। বছর শেষে একবার আমের ব্যবসায় উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলে আমাদের সংসার।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতি বছর গুটি আম (কাঁচা আম) বিক্রি হয় ৪-৫ লাখ টাকার। এ বছর তাও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। দোকানপাট, হাট-বাজার বন্ধ, পরিবহন সংকট। এ ছাড়া আম গাছ থেকে পাড়ার শ্রমিকেরও অভাব।’

একই গ্রামের আম চাষি ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমের ফলন ভালো হয়নি। যেটুকু হয়েছে তা স্থানীয় হাট- বাজারে বিক্রি করতে হবে। গত বছর খুলনা ও ঢাকায় নিয়ে আম বিক্রি করেছিলাম। এ বছর হয়তো তা আর সম্ভব হবে না।’

কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলী জানান, চলতি মৌসুমে কলারোয়ায় ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এখানে ২,৬০০ ছোট-বড় বাগান রয়েছে। এ সব বাগান থেকে প্রায় ৪০০ টন আম উৎপাদন হয়। এ থেকে গড়ে ১০০ টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হতো। উৎকৃষ্ট আমের মধ্যে রয়েছে হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি। এছাড়া রয়েছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, লতাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির আম।

এদিকে, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অপরিপক্ক আম কেমিকেল দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করায় দুই ট্রাক আম ধ্বংস করেছে ভ্রাম্যমাণ আলাদত।  জানা যায়, ওই আম রাজধানীতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, আগামী ৩১ মে থেকে হিমসাগর, ৭ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আম্রপালি আম পাড়া ও বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে যদি কোনো বাগানের আম পাকে, তবে সেটি কৃষি কর্মকর্তাদের জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সাতক্ষীরা জেলার আমের সুনাম রয়েছে। সেই সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। নির্ধারিত দিনের আগে গাছ থেকে আম পাড়া যাবে না মর্মে ব্যবসায়ী ও চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া অপরিপক্ক আম কেমিকেল মিশিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago