আসছে আম্পান, উপকূলে বৃষ্টি-জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

চলতি শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রথম সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও বইছে ঝড়ো বাতাস। আজ মঙ্গলবার দুপুর থেকে খুলনা, পিরোজপুর, বরিশালসহ চরাঞ্চলেও বৃষ্টি শুরু হয়।
খুলনায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেড়ে গেছে। খুলনার আবহওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘খুলনা ও এর আশেপাশের অঞ্চলে আম্পানের প্রভাব শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে বৃষ্টি ও বাতাসের তীব্রতা আরও বাড়বে।’
স্থানীয়দের নিরাপদে সরিয়ে নিতে খুলনায় ৩৬১টি, বাগেরহাটে ৩৩৪টি, সাতক্ষীরায় ৪৪৭টি ও পিরোজপুরে ৫৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। খুলনা জেলায় প্রস্তুত আছেন তিন হাজার ৫৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও ১১৬টি মেডিকেল টিম।

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ‘করোনা মোকবিলায় বরাদ্দ পাওয়া এক হাজার ৬১ মেট্রিক টন চাল ও নয় লাখ টাকা আপদকালীন সহায়তার জন্য রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা যেন আশ্রয়কেন্দ্রে যান সে জন্য খুলনার চারটি উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় আজ সকাল থেকেই মাইকিং করা হচ্ছে।’

সূত্র জানায়, খুলনায় ৯৯৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘এসব জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের তদারকি করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় কয়রা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ওয়ার্ড ভিত্তিক একজন করে কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে।’
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘৬১ হাজার এক শ জনের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আসতে শুরু করেছে।’

পিরোজপুরের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোজাহারুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এই উপজেলাটি বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে বেশি কাছে। মঠবাড়িয়ার ভেতর দিয়ে সাগরে মিশেছে বলেশ্বর নদী। যে কারণে জলোচ্ছ্বাস হলে নদীর দুপাশের বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সিডরসহ অন্যান্য ঝড়ে মঠবাড়িয়া অন্যান্য উপজেলার তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ ছাড়া, কঁচা নদীর দুতীরে অবস্থিত ভাণ্ডারিয়া, ইন্দুরকানী ও পিরোজপুর সদর উপজেলাও প্লাবিত হতে পারে।
মঠবাড়িয়ার দায়িত্বে থাকা সিপিপি’র উপপরিচালক মো. আব্দুল লতিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘জেলায় ৫৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বেসরকারি স্কুল, মসজিদ, মাদরাসাও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দরকার হলে মেডিকেল টিমের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোলার চরফ্যাশনের ঢালচর থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এক চিঠিতে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সম্ভাব্য আঘাতে উপদ্রুত এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল ও কলেজ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য জরুরিভিত্তিতে খুলে দিতে বলে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ দুপুর ২টার দিকে দেশে ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী, চাঁদপুর-শরীয়তপুর, ভোলা-লক্ষ্মীপুর এবং ভেদুরিয়া-লাহারহাটে ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে আম্পানের কেন্দ্র সুন্দরবন
Comments