ঘূর্ণিঝড় আম্পান

বাগেরহাটে ঝড়ো বাতাস-বৃষ্টি

Bagerhat Ampan
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাগেরহাটের শরণখোলায় বইছে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ছবি: স্টার

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাগেরহাটের শরণখোলায় বইছে ঝড়ো বাতাস। সঙ্গে রয়েছে থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আজ বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সরকারি হিসাবে বাগেরহাটের প্রায় এক লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। যারা এখনো যাননি তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও, ১৫ হাজার গবাদিপশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে রাখা হয়েছে।

আজ সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে আছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর আতঙ্কে বেড়েছে কয়েকগুণ।

বাগেরহাটের নদ-নদীতে দ্রুত গতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলাবাসী।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকে এক সঙ্গে থেকেছেন তারা। এর মধ্যে ছিল বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা।

যারা নিজ বাড়িতে ছিলেন তারাও ঝড়ের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। এর মধ্যে রাতভর আশ্রয়কেন্দ্র এসেছে মানুষ। সকালেও এসেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার গবাদি পশু নিয়েও এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বলেশ্বর নদীর পাড়ের বগী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমাদের বসবাস। বন্যার সংবাদ পেয়ে রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। সেখানে করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে ঠাসাঠাসি করে অবস্থান করছি।’

‘শুনেছি ঝড়ের ফলে ১০ ফুট পানি উঠবে। তাহলে আমাদের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু সবকিছু ভেসে যাবে। কিছু থাকবে না,’ যোগ করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ, কৃষক সামসুর রহমান, রুহুল আমিনসহ কয়েকজন জানান, তারা সারারাত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। ‘কিন্তু, আশ্রয়কেন্দ্রে কি ঘুমানো যায়? এর সঙ্গে রয়েছে বাড়ি-ঘরের চিন্তা। সারারাতই একে অপরের সঙ্গে সিডরের বিভৎস রূপ ও আম্পান কত ভয়ঙ্কর হবে সেই আলোচনা করে কাটিয়েছি,’ বলেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ।

‘ঘুম থেকে উঠে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত শোনার পরে পরানে আর পানি নেই। এখন আল্লাহই আমাদের ভরসা,’ যোগ করেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রত্যেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ মানুষ অবস্থান করছেন। অনেকেই নানা সমস্যার কারণে সেহরিও খেতে পারেননি।’

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা রাতে শরণখোলার কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। আশ্রয় নেওয়া মানুষের খোঁজখবর নিয়েছি। আমরা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় দূর্গত মানুষদের জন্যে শুকনো খাবার ও পানি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সংবাদের পর থেকে সমগ্র জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় এক লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র নিয়েছি। প্রায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দূর্গতদের জন্য কাজ করছে। প্রত্যেক উপজেলায় জরুরি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। জেলা সদর ও নয়টি উপজেলায় মোট ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে মানুষের জানমালের যেন কম ক্ষতি হয় সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

Comments

The Daily Star  | English
government action against rising crime

Nationwide combing operation launched to curb rising crime: home adviser

The adviser announced the decision after a meeting on law and order following a series of alarming incidents

1h ago