ইমিউনিটির অভাবে আবারও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে চীন

দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি চীন। দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ইমিউনিটির অভাবে দ্বিতীয় দফায় ব্যাপক আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
Dr. Zhong Nanshan-1.jpg
চীন সরকারের মেডিকেল উপদেষ্টা ডা. ঝং ন্যানশান। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি চীন। দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ইমিউনিটির অভাবে দ্বিতীয় দফায় ব্যাপক আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

চীন সরকারের মেডিকেল উপদেষ্টা ডা. ঝং ন্যানশানের বরাতে সিএনএন জানায়, উহানের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই ভাইরাসের প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবের মাত্রা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানায়নি।

চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের (এনএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৮২ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩৩ জন।

জানুয়ারিতে দেশটিতে সংক্রমণের হার দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়লে উহানকে লকডাউন করা হয়।

ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে চীনে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৮৮৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর এক মাস পরেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। গত ৬ মার্চ চীনে নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৭ জন।

সংক্রমণের হার কমে আসলে সেখানকার জনগণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে। উহানের লকডাউন শিথিল করা হয়। সম্প্রতি কয়েকটি স্কুল ও কারখানাও খুলে দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও দ্বিতীয় সংক্রমণের ব্যাপারে সর্তক করেছেন ডা. ঝং ন্যানশান। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সংক্রমণ কমে এসেছে বলে এখনই চীনা কর্তৃপক্ষের আত্মতুষ্টিতে ভোগা উচিত হবে না।’

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চীনে আবারও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে উহান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হেইলংজিয়াং প্রদেশ এবং জিলিনে নতুন করে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন ডা. ঝং ন্যানশান।

তিনি বলেন, ‘চীনে নতুন করোনা রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ইমিউনিটির অভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি। এই মুহূর্তে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যা চলছে, চীনের পরিস্থিতি তার চেয়ে কম ভয়াবহ না।’

স্থানীয় সরকারের তথ্য গোপন

ডা. ঝং ন্যানশানকে চীনে ‘সার্সের হিরো’ বলা হয়। ২০০৩ সালে সার্স প্রাদুর্ভাবের সময় তিনি ভাইরাসটি মোকাবিলায় কাজ করেছেন। বর্তমানেও তিনি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

গত ২০ জানুয়ারি এই চিকিৎসকই প্রথম চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভিতে জানিয়েছিলেন যে, করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে।

এর আগে, সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে উহানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলে এসেছে যে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। এটিকে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

গত ১৮ জানুয়ারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনুসন্ধানের জন্য এনএইচএসের একটি দল উহানে গিয়েছিল। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডা. ঝং ন্যানশান। উহানে পৌঁছানোর পর অনেক শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক তাকে ফোন ও ইমেইলে জানায় যে, পরিস্থিতি অত্যন্ত মারাত্মক। অনেকেই তাকে সর্তক করে বলেন যে, ‘কর্তৃপক্ষ যা বলছে পরিস্থিতি তার চেয়ে আরও অনেক বেশি ভয়ংকর।’

এ প্রসঙ্গে ডা. ঝং ন্যানশান সিএনএনকে বলেন, ‘স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সেসময় সবার কাছে সত্যটা প্রকাশ করেনি। শুরুর দিকে তারা চুপ ছিল। আমি নিজস্ব ধারণা থেকে সেসময় গণমাধ্যমে বলেছিলাম যে, হয়তো আমরা যা দেখছি তার চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।’

জানুয়ারি মাসে যখন অন্যান্য দেশে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছিল তখনও উহানের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ দিন ধরে সেখানকার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ এই রয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে ডা. ঝং ন্যানশানের মনে সন্দেহ তৈরি হয়।

তিনি বলেন, ‘আমি ওই রিপোর্ট বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি বারবার তাদেরকে সঠিক তথ্যটি আমাকে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকি।’

এর দুদিন পর, ২০ জানুয়ারি বেইজিংয়ে তিনি জানতে পারেন যে, উহানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৮ ও তিন জন মারা গেছেন। ১৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।

সেদিনই চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংসহ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উহান শহর লকডাউন করার প্রস্তাব দেন।

চীনা সরকারে এই পদক্ষেপটি সঠিক ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার ২৩ জানুয়ারি উহানকে লকডাউন ঘোষণা করে। সব ফ্লাইট, ট্রেন ও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

৭৬ দিন পর উহানের লকডাউন শিথিল করা হয়।

গত ২৭ জানুয়ারি সিসিটিভির এক সাক্ষাৎকারে উহানের মেয়র জোউ জিয়ানওয়াং স্বীকার করেন যে, কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাস নিয়ে সব তথ্য জনগণের কাছে প্রকাশ করেনি।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার হিসেবে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পরই সেটা প্রকাশের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।’

চীনা রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সিনহুয়া জানায়, ফেব্রুয়ারিতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় সরকারের সমালোচনা করার কারণে চীনের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে হুবেই ও উহানে স্বাস্থ্য কমিশনের দুই কর্মকর্তাও ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago