পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর ২৫ গ্রাম প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে প্রবলভাবে ধেয়ে আসছে সাগরের পানি। ইতোমধ্যে সাগর ও নদীর পানি তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের ১৭ টি গ্রাম ও রাঙ্গাবালীর আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাশফাকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা, চরলতা, গোলবুনিয়া, চর আন্ডা, খালগোড়া, গোঙ্গীপাড়া, চর কাশেম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৭৪০ বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়। বিচ্ছিন্ন চরের মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের খাওয়ার জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া যারা রোজা আছেন তাদের ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের পাঁচ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. রবিউল ইসলাম জানান, কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের ১৭ টি গ্রাম প্লাবিত। নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক এর চেয়ে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তারা সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান করছেন।
আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ লক্ষাধিক মানুষ
পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৭ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এরমধ্যে পটুয়াখালী জেলায় ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯৮৯ জন এবং বরগুনায় ২ লাখ ৫১ হাজার ৮৭৮ জন। পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার কন্ট্রোল রুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়াও, পটুয়াখালীতে প্রায় ৮০ হাজার এবং বরগুনায় ২৪ হাজার ৪২৮ টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।
সিপিপি টিম লিডার নিখোঁজ
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের ৬ নং ইউনিটের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) টিম লিডার শাহ আলম (৪৫) আজ সকাল আটটার দিকে জনগণকে মাইকিং করে নৌযোগে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার স্থানীয় হাফেজ প্যাদার খালে ঝড়ে নৌকা ডুবে যায়। এতে চারজনের মধ্যে তিন জন সাতরে তীরে উঠতে পারলেও শাহ আলম নিখোঁজ হন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির কলাপাড়া উপজেলার সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, বিকেল চারটা পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ও কোস্ট গার্ড সকাল থেকে খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে। ওই খালে কচুরিপানা থাকার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
ঘুর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে পটুয়াখালী ও বরগুনার জেলার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পটুয়াখালীর সব নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার (২ দশমিক ৮৫ মিটার ) ১৩ সে. মিটার ও বরগুনায় ২৫ সে. মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উভয় জেলার নিন্মাঞ্চল স্ফীত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান জানান, ঘুর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রামনাবাদ, পায়রা, লোহালিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ, তেতুলিয়াসহ সব নদীর পানি বিপদ সীমার ১৩ সে. মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।
বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী তীরের বাসিন্দারা বলছেন নদীতে ইতোমধ্যেই স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত ৫ থেকে ৬ ফুট পানি বেড়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন বিষখালী নদীর তীরের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, ‘স্বাভাবিকের তুলনায় নদীতে অনেক পানি বেড়েছে। আর একটু পানি বৃদ্ধি পেলেই আমাদের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে।’
বরগুনার বাইনচটকি ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, বিষখালী নদীর এই এলাকায় জোয়ারের পানি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে ফেরির গ্যাংওয়েসহ সংযোগ সড়ক তলিয়ে গেছে। জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেশি না হলে এখানে সাধারণত পানি ওঠে না।
এ বিষয়ে বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. মাহতাব হোসেন বলেন, ‘আজ সকাল নয়টায় বরগুনায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ২.৮৫ মিটার। যা বিপদসীমার সমান সমান। আর এক ঘণ্টার ব্যবধানে সকাল ১০ টায় বরগুনায় জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ৩.১০ মিটার হয়েছে।
আরও পড়ুন
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, গলাচিপার গোলখালী, বাউফলে বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত
Comments