করোনায় কর্মহীন দলিল-লেখকদের মানবেতর জীবন

করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশে চলমান সাধারণ ছুটিতে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় কর্মহীন হয়ে পড়া সহস্রাধিক দলিল-লেখক ও তাদের সহকারীরা অত্যন্ত মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছেন।
Deed writers
ছবি: স্টার

করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশে চলমান সাধারণ ছুটিতে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় কর্মহীন হয়ে পড়া সহস্রাধিক দলিল-লেখক ও তাদের সহকারীরা অত্যন্ত মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশ দলিল-লেখক সমিতির জেলা নেত্রীবৃন্দের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন ও জেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে মানবিক সহযোগিতার আবেদন করেও কোন ফল হয়নি।

জেলা নেত্রীবৃন্দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার ছয়টি করে বারটি রেজিস্ট্রি অফিসে প্রায় আট শ দলিল-লেখক কর্মরত রয়েছেন।

তাদের অধিকাংশেরই একজন করে সহকারী হিসেবে কাজ করেন বলেও তারা জানিয়েছেন।

এই সমিতির ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে অফিস-আদালত বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে নির্দিষ্ট বেতন-ভাতা না থাকায় দলিল সম্পাদনের ওপর দৈনিক আয়-নির্ভর মানুষগুলোর দুরাবস্থা শুরু হয়।’

‘বর্তমানে অধিকাংশ দলিল-লেখক ও তাদের সহকারীরা অর্থাভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন,’ বলে জানান তিনি।

তার অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের কাছে এই কর্মহীন মানুষগুলোর জন্য সাহায্যের আবেদন করার পরও কোন ফল হয়নি।

এ অবস্থায় তিনি দলিল-লেখকদের দুর্দশা লাঘবে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

একই সমিতির পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি সফিজুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা-উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে মানবিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করা হয়েছে।’

‘তাদের বারবার অনুরোধের পরও এখন পর্যন্ত সাহায্য তো নয়ই কোন আশ্বাস পর্যন্ত মেলেনি।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের বাসিন্দা দলিল-লেখক অলিয়ার রহ্মান (৬৫) বলেন, ‘গত প্রায় দুই মাস কর্মহীন। হাতে থাকা অল্পকিছু টাকা দিয়ে প্রথম এক সপ্তাহ সংসার খরচ চালিয়েছি। ধার-দেনা করে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি।’

পঞ্চগড় সদর উপজেলার গলেহা কান্তমনি এলাকার দলিল-লেখক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দৈনিক আয়-নির্ভর মানুষ আমরা। এতোদিন ধরে অফিস বন্ধ থাকলে কী ভালো থাকা যায়?’

‘এখন পর্যন্ত সাহায্যের আওতায় আসতে পারিনি,’ বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।

এর আগে গত ১৬ মে পঞ্চগড় জেলা দলিল-লেখক সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, দলিল সম্পাদনের ওপর নির্ভর করার পাশাপাশি তারা সরকারের রাজস্ব খাতে অর্থ যোগানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে এই মানুষগুলো কর্মহীন হওয়ায় তাদের আর্থিক প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধও জানান তারা।

এছাড়াও, দলিল-লেখকদের মাসিক ভাতা দেওয়াসহ বার্ধক্যকালীন অনুদানের জন্যও সরকারের প্রতি জোর দাবিও জানানো হয়।

বাংলাদেশ দলিল-লেখক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নূর আলম ভূঁইয়া মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেশে প্রায় তিন লাখ দলিল-লেখক আছেন। করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটির কারণে সারা দেশেই দলিল-লেখকরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।’

সরকারের রাজস্ব আয়ে দলিল-লেখকরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও কর্মহীন এই মানুষগুলোকে সহযোগিতা করা হয়নি বলেও যোগ করেন তিনি।

দলিল-লেখকদের প্রণোদনার আওতায় এনে দ্রুত তা কার্যকর করার দাবিও সরকারের কাছে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
quota reform movement,

Govt publishes preliminary list of those killed in July-August protests

The interim government today published a preliminary list of the people who died during the student-led mass protests in July and August.

3h ago