করোনা চিকিৎসা

ওষুধ গবেষণায় আশার আলো দেখা যায়?

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বিভিন্ন গবেষণা চলছে, এটা ভালো খবর। সম্প্রতি দেশে করোনা নিরাময়ে কিছু ওষুধ গবেষণা নিয়ে ওষুধসহ কোম্পানির নাম সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে ওষুধের দামসহ বিস্তারিত বলা হচ্ছে।
প্রতীকি ছবি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বিভিন্ন গবেষণা চলছে, এটা ভালো খবর। সম্প্রতি দেশে করোনা নিরাময়ে কিছু ওষুধ গবেষণা নিয়ে ওষুধসহ কোম্পানির নাম সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে ওষুধের দামসহ বিস্তারিত বলা হচ্ছে।

সম্প্রতি ‘ইভারমেকটিনের সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মাত্র তিন দিনে ৫০ শতাংশ লক্ষণ কমে যাওয়া আর চার দিনে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ফল নেগেটিভ আসার বিস্ময়কর সাফল্য’— এই বিষয়টি নিয়ে অনলাইনে বিশ্বের জার্নালগুলো দেখছিলাম।

এ নিয়ে কয়েকটি আর্টিকেল পড়ে জানলাম, ইভারমেকটিন ওষুধটি মানব শরীরের পরজীবী রোগ সম্পর্কিত চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে ১৯৮০ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওষুধটি অন্যান্য ভাইরাস (যেমন: এইচআইভি, ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও জিকা) প্রতিলিপি প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বলা হচ্ছে— ডায়রিয়া, বমির ভাব, মাথা ঘোরা ও ঘুমের ভাব।

অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ৩ এপ্রিলের একটি গবেষণা বলছে, ইভারমেকটিন ৪৮ ঘণ্টায় কোষ থেকে সার্চ কোভ-২’র প্রতিলিপি বন্ধ করতে পারে। যদিও গবেষকরা এখনো নিশ্চিত না যে কীভাবে এ ওষুধটি কাজ করছে।

এ গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ল্যাব পরিবেশে এটি কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। যদিও মানুষের শরীরে এটির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে আরও পরীক্ষা ও ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ওষুধটি কোভিড-১৯’র জন্য ব্যবহার করা যাবে না। সঙ্গে এ ওষুধের ডোজও নির্ধারণ করা জরুরি।

এ ওষুধ নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তারেক আলম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০ জন রোগীর ওপর গবেষণা করেছি। তাতে আমরা সাফল্য পেয়েছি। আমাদের গবেষণার আওতায় ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ওষুধ দুটির সফল স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে।’

কয়েকটি বিষয় আপনাদের জন্য। প্রথমত, আমরা খুব দ্রুতই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাচ্ছি না। যদি কোনো উন্নত দেশ আবিষ্কার করে, তবুও আমাদের পেতে এক বছর বা আরও দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লক্ষণের ভিত্তিতে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসাই মূল সমাধান।

দ্বিতীয়ত, এভিগান, রেমডেসিভিরসহ অনেক ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ‌্যান্ড ড্রাগ অ‌্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদন দিয়েছে করোনা চিকিৎসার জন্য। তার মানে এই না যে এগুলোর মাধ্যমে করোনা রোগীদের নিরাময় করা সম্ভব। এগুলো নিয়ে গবেষণা চালাতে হবে, গবেষণার ধাপগুলো সমাপ্ত করতে হবে।

তৃতীয়ত, সংবাদমাধ্যমে ওষুধের নাম দেখে ফার্মেসিগুলোতে গিয়ে এসব ওষুধ কেনার কথা চিন্তাও করা যাবে না। এসব ওষুধ খাওয়ার আলাদা ডোজ আছে এবং কোন পর্যায়ে খেতে হবে এরও দিক-নির্দেশনা আছে। আর তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে— আরও গবেষণা বাকি আছে।

চতুর্থত, এসব গবেষণার সংবাদ দেখে আনন্দিত হয়ে বাসার বাইরে যাওয়া যাবে না। অনেকেই হয়তো এমন সংবাদ দেখে ভাবতে পারেন— ওষুধ তো আবিষ্কার হয়েই গেছে, আর সমস্যা নেই। এমন ভাবনা ভাবাও ভুল হবে।

লেখক: কামরুজ্জামান নাবিল, শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি), ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago