আম্পানে যশোরাঞ্চলে ৩২,৫১৬ হেক্টর জমির ফল ও ফসলের ক্ষতি

সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে যশোরাঞ্চলে ফসলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কৃষি বিভাগের হিসেবে সবজি, আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, শাক-সবজি, পানসহ মোট ৩২ হাজার ৫১৬ হেক্টর জমির ফল ও ফসল নষ্ট হওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
Jessore Map
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে যশোরাঞ্চলে ফসলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কৃষি বিভাগের হিসেবে সবজি, আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, শাক-সবজি, পানসহ মোট ৩২ হাজার ৫১৬ হেক্টর জমির ফল ও ফসল নষ্ট হওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, যশোরে এবার পাট চাষ হয়েছিল ২৩ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে। এর ১১ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমির পাটই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মোট আবাদের ৫০ শতাংশ।

শাক-সবজি চাষ হয়েছিল ১৪ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে। ক্ষতি হয়েছে ১১ হাজার ৭৪৮ হেক্টর জমির, যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। পেঁপে চাষ হয়েছিল ৭৫০ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ৬০০ হেক্টর জমির, যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। কলা চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমির, যা মোট আবাদের ৭৫ শতাংশ। মরিচ আবাদ হয়েছিল ৬৭৫ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ৪০৫ হেক্টর জমির, যা মোট আবাদের ৬০ শতাংশ। মুগডাল চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ৭৩২ হেক্টর জমির, যা মোট আবাদের ৭০ শতাংশ। তিল আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ১০৮ হেক্টর জমির, যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ।

ভুট্টা আবাদ হয়েছিল ৫৫ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ৪৪ হেক্টর, যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। আম ছিল ৩ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে, তার মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমির, যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। লিচু ছিল ৭০০ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ৪৮০ হেক্টর জমির, যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। পান ছিল ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ৭৭৫ হেক্টর জমির, যা মোট আবাদের ৭৫ শতাংশ।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সবজি চাষি বাবলুর রহমান জানান, এ বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে পটল, চার বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছিলেন। গত বুধবারের ঝড়ে তার পটল ও করলা সম্পূর্ণই নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘শুধু আমার নয়, আমার এ এলাকার বেশিরভাগ সবজি চাষির ফসল নষ্ট হয়েছে।’

একই কথা বলেন, সদর উপজেলার নোঙরপুর এলাকার সবজি চাষি রমজান হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঝড়ে আমাদের সবজি শুধু নষ্ট করেনি, এলাকার বিস্তীর্ণ বাগানের আম-লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ গাছের ডাল ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে। উপড়ে গেছে বহু গাছ।’

কৃষক রমজান হোসেন আরও বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা এমনিতেই সবজি বিক্রি করতে পারছিলাম না। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার মোকামে সবজি পাঠাতে শুরু করেছি। ঠিক সেই মুহূর্তে এ ধরনের ধাক্কা আমাদের পথে বসার উপক্রম করে দিয়েছে।’

কৃষি কর্মকর্তা ড. আখতারুজ্জামান জানান, আম্পান এ অঞ্চলের কৃষকের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে। এমনিতেই করোনার কারণে কৃষকরা সমস্যায় ছিল, তারপর আম্পান বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রণোদনায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া কৃষকরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে সেজন্য কারিগরিসহ সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে।’

ঘূর্ণিঝড় আম্পান যশোরকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। আজ শনিবার পর্যন্ত গ্রামগুলোতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ চালু হয়নি।

Comments