প্রবাস

করোনাকালে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মোমবাতি ঈদ!

মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। মানুষের চিন্তা চেতনার সঙ্গে, আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অনেক কিছুর হিসেব মেলে না। এরপরও মানুষ নিয়তির কাছে নিজেকে সঁপে দেয়। জন্মের পর কে কি করবে, কে কোথায় থাকবে, কোথায় যাবে সে জানে না। অধিকন্তু নিয়তি নির্ধারণ করে দেয় অনেক কিছু। তেমনি এক নিয়তির নাম পরবাস। এই দূর পরবাসে প্রবাসীরা অনেক মধুর, প্রাণখোলা আনন্দ থেকে বঞ্চিত।
ঈদ উদযাপনে একত্রিত হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি। ছবি: সংগৃহীত

মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। মানুষের চিন্তা চেতনার সঙ্গে, আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অনেক কিছুর হিসেব মেলে না। এরপরও মানুষ নিয়তির কাছে নিজেকে সঁপে দেয়। জন্মের পর কে কি করবে, কে কোথায় থাকবে, কোথায় যাবে সে জানে না। অধিকন্তু নিয়তি নির্ধারণ করে দেয় অনেক কিছু। তেমনি এক নিয়তির নাম পরবাস। এই দূর পরবাসে প্রবাসীরা অনেক মধুর, প্রাণখোলা আনন্দ থেকে বঞ্চিত।

এই রকম এক আনন্দের নাম ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর আসলেই প্রবাসীরা নস্টালজিয়ায় ভোগেন। অজানাকে জানার আর অচেনাকে চেনা নয়, জীবিকা ও জীবনের অত্যাবশ্যকীয় তাগিদে, প্রিয় স্বদেশ,  মা, মাটি ছেড়ে বিদেশ বিভুয়ে পরে থাকেন তারা।

প্রবাস মানে নিঃসঙ্গ যাপিতজীবন। প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে যোজন যোজন দূরে। প্রবাসকে বলা হয় স্মার্ট আধুনিক জেলখানা। করোনাকালে বর্তমানে বিশ্বের সব প্রবাসীরা গৃহবন্দী। কেউ আইসোলেশনে, কেউ হোম কোয়ারেন্টিনে, কেউ লকডাউনে, কেউ অর্ধাহারে, কেউ বা অনাহারে।

সবকিছুর পরেও আমরা জানি ঈদের আনন্দ আপামর মানুষের জন্য খুশির, আহ্লাদের। এ আনন্দে রয়েছে আলাদা সুখানুভূতি, আলাদা আমেজ। বিশেষ করে তাদের জন্য যারা দেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করেন বা পরিবার নিয়ে প্রবাসে থাকেন। বিপরীতে যারা পিতা, মাতা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয় স্বজনছাড়া দেশের বাইরে থাকেন তাদের গল্পটা ভিন্ন, তাদের উপাখ্যানটা অন্যরকম।

আমরা জানি একজন সাধারণ মানুষ ব্যথা সহ্য করার সক্ষমতা সর্বোচ্চ ৪৫ ডেল ইউনিট। পাশাপাশি একজন মা প্রসববেদনা সহ্য করেন ৫৭ ডেল ইউনিট পর্যন্ত। সন্তান প্রসবের জন্য মায়েদের এ ত্যাগ তিতিক্ষা অসহনীয়, অবর্ণনীয়। একজন মা ছাড়া এ ব্যথার অনুভূতি সাধারণ মানুষ অনুধাবন করতে পারবে না, সম্ভব নয়।

মায়েদের প্রসববেদনার কষ্টের উপাখ্যান একজন মা ছাড়া যেমন কেউ বোঝে না, তেমনিভাবে একজন  রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীর পরবাসের অনুভূতি কেমন, কি তার হৃদয়ের ভাষা তা যে কখনো প্রবাসের কঠোর শৃঙ্খল দেখেনি তার পক্ষে অনুধাবন করা অসম্ভব। দেশে বসে প্রবাসের অনুভূতি নেওয়া যায় না। বুলি আওড়ানো যায়, প্রত্যেক প্রবাসীর রয়েছে নীল কষ্ট। এ জীবনযুদ্ধের উপাখ্যান এভাবেই চাপা পড়ে যায় নানা কারণে। পরিবারের সুখের জন্য, ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল করার আশায় নিজের জীবনের সোনালী সময় প্রবাস প্যাকেজে ব্রাকেট বন্দি।

আজব এক ঈদানুভূতি রয়েছে কোরিয়া প্রবাসীদের। আরব দেশগুলোতে ঈদের ছুটি থাকে, কিন্তু কোরিয়ায় কোম্পানি থেকে ছুটি নেওয়া দুষ্কর। এই বার অনেকবছর পর রোববার ছুটিরদিন ঈদ হচ্ছে। কিন্তু ঈদের আর কি খুশি থাকে, তাবৎ বসুধার খুশি যেখানে হাইজ্যাক করেছে নোবেল করোনাভাইরাস। দেশ-বিদেশের ঈদ আনন্দ লকডাউনের আইনি শিকলে, দূরত্ব বজায়ের মারপ্যাঁচে বন্দি। এই করোনাকালে দূরত্ব বজায় রেখে কোরিয়ার মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজ হবে। কিন্তু রোববার ছুটির দিন থাকলেও কোনো কোনো কোম্পানির কর্মীরা ব্যস্ততার জন্য নামাজের ছুটি পায়না। এ এক অন্য বেদনা। ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে প্রবাসীরা লাল সবুজের পতাকা, পিতা-মাতার নির্মল চেহারা, প্রিয়তমার বর্ণিল হাসি, সন্তানদের প্রাণখোলা নিষ্পাপ মুখ বার বার খুঁজে ফিরে। পরিবারের অনুভূতিই যেন তাদের ঈদ অনুভূতি। ঠিক সময়ে মা-বাবার হাতে, প্রিয়তমা, সন্তান, স্বজনদের জন্য ঈদের টাকা পাঠাতে পারলেই প্রবাসীরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। ঈদে পরিবারের মুখে হাসি দেখলে তারা আনন্দে বিভোর হয়ে যান। ঈদের সারাটাদিন প্রবাসীর মনটা পড়ে থাকে পরিবারের কাছে, লাল সবুজের দেশে।

যার মা নেই, যার বাবা নেই তার ঈদটা আরও বর্ণহীন, ছন্দহীন, আনন্দবিহীন ধূসর। অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদ কাটে প্রবাসের কর্মব্যস্ততায়। সবকিছুর পরেও প্রবাসীদের জীবন চলে নিরন্তর। লক্ষ্যের পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে। মোমবাতি নিজে জ্বলে অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। যেভাবে পিঁপড়ে প্রত্যেকদিন একটু একটু করে মাটি খুঁড়ে নিজের বাসা বানায়, ঠিক সেইভাবেই প্রবাসীরা নিজেকে জ্বালিয়ে, ক্ষয়ে  দেশ গড়ে, সমাজ গড়ে, পরিবার গড়ে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago