চাঁপাইনবাগঞ্জে গভীর সমুদ্রের পাখি ব্রিডলেড টার্ন
আমি কখনো সমুদ্র দেখিনি। সমুদ্র থেকে অনেক দূরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গভীর সমুদ্রের পাখি দেখবো, এটা কখনো চিন্তাও করিনি।
করোনা ভাইরাসের কারণে কয়েকমাস পাখির ছবি তোলা হয়নি। গত ২২মে রাতে বার্ডার মুহাম্মদ তারিক হাসান ফোন করে বললেন, ‘রাজশাহীতে পদ্মা নদীতে গভীর সমুদ্রের ৪টি পাখি পাওয়া গেছে, আগামীকাল পদ্মায় যাবেন নাকি?’ তার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। ২৩ মে সকালে দুজনে রওয়ানা হলাম সদর উপজেলার বাখেরআলী ঘাটে। সেখানে একটি নৌকা ভাড়া করে নতুন পাখি পাওয়ার আশায় ঘুরছিলাম একটি চরের পাশ দিয়ে। দেখা গেলো বেশ কিছু হট টিটি (Red-wattled Lapwing), নদী টিটি (River Lapwing), পাতি শরালী (Lesser-Whistling Duck), শামুক খোল (Asian Openbll), ধলা গলা মানিক জোড় (Asian Wooly-neck) সহ বিভিন্ন নদীর পাখি। প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘোরার পর উজানে যাওয়ার সময় এক জোড়া পাখি উড়ে আসতে দেখে দুজনেই ক্যামেরা তৈরি রাখি, কাছাকাছি আসতেই কয়েকটি উড়ন্ত পাখির ছবি তুলি। দীর্ঘক্ষণ খুঁজেও আর পাওয়া যায়নি।
ছবি তুলে দুজনেই খুব খুশি, যাক আসাটা বৃথা যায়নি তাহলে! তবে পাখির পরিচয় নিয়ে দুজনেই নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। পরে সন্ধ্যায় এর নাম জানতে পারি, এটি গভীর সমুদ্রের পাখি ব্রিডলেড টার্ন (Bridled Tern)। অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাখি বিশেষজ্ঞ রেজা খানকে ছবিগুলো পাঠাই। তিনি নিশ্চিত করেন এটি Bridled Tern.
আরও জানা যায়, Laridae পরিবারের এই পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Onychoprion anaethetus. মাঝারী আকারের পাখিটির দৈর্ঘ্য ৩০-৩২ সে.মি.।
ধারণা করা হচ্ছে, ঝড় আম্পানের কারণে পাখিটি এই দিকে চলে এসেছে।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহসভাপতি সায়াম ইউ চৌধুরী জানান, গত ২১ ও ২২ মে রাজশাহীতে ৪টি ও ঢাকায় একটি সামুদ্রিক পাখি দেখা যায়। গত ২২ তারিখ প্রথম এই পাখিটি দেখা যায় রাজশাহীর পদ্মা নদীতে।পাখিপ্রেমী মঈনুল আহসান শামীম এই পাখির ছবি তোলেন। তিনি জানান, ব্রিডলেড টার্ন ছাড়াও ২১ ও ২২ মে তিনি সুটি টার্ন, উইলসন্স স্টর্ম পেট্রেল, ও লং টেইলড স্কুয়া পাখির ছবি তোলেন। এরপর অনেকেই ছবি তুলেছেন।
এছাড়াও শেঠ মিলার ২১ মে ঢাকায় লালমাটিয়ায় উড়ে যাবার সময় তোলেন Wedge-tailed Shearwater. এই পাঁচটি পাখি বাংলাদেশে নতুন রেকর্ড। এর আগে গভীর সমুদ্রের এই পাখিগুলোকে কখনও দেখা যায়নি বলে জানায় বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব।
সায়াম ইউ. চৌধুরী আরও জানান, ব্রিডলেড টার্ন সামুদ্রিক পাখি। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এই পাখি সমতলভূমিতে চলে আসে। বিশেষ করে এটি রাজশাহী অঞ্চলের পদ্মানদীতে যেখান দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি যায়। রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাগঞ্জ এলাকায় পাখিটি গত কয়েকদিন থেকে দেখতে পাওয়ার রেকর্ড পাওয়া গেছে। এই প্রজাতিটি গভীর সমুদ্রে ক্রান্তীয় ও উষ্ণমন্ডলীয় আবহাওয়ায় থাকে। আমাদের দেশের কাছাকাছি এদের দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলংকায় প্রজননের সময় দেখা যায়। এটি শ্রীলংকার গভীর সমুদ্রের পাখি হিসেবে পরিচিত।
এই পাখিগুলো আবার গভীর সমুদ্রে ফিরে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Comments