‘মৃতেরা কেবলই সংখ্যা নয়’

নিউইয়র্ক টাইমসের রোববারের সংখ্যা। প্রথম পাতা জুড়ে নেই কোনো ছবি, নেই বিজ্ঞাপন। পত্রিকাটির চার পাতা জুড়ে কেবল একটাই খবর- ‘যুক্তরাষ্ট্রে মৃত লাখের কাছে, অবর্ণনীয় ক্ষতি।’
নিউইয়র্ক টাইমসের রোববার (২৪ মে) সংখ্যার প্রথম পাতা।

নিউইয়র্ক টাইমসের রোববারের সংখ্যা। প্রথম পাতা জুড়ে নেই কোনো ছবি, নেই বিজ্ঞাপন। পত্রিকাটির চার পাতা জুড়ে কেবল একটাই খবর- ‘যুক্তরাষ্ট্রে মৃত লাখের কাছে, অবর্ণনীয় ক্ষতি।

ভেতরে লেখা আছে-

অ্যাঞ্জেলিন মিকালোপুলোস (৯২) নাচে-গানে নির্ভীক।

লিলা ফেনউইক (৮৭) প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী যিনি হার্ভাড ল থেকে স্মাতক করেন।

রোমি কোহন (৯১) গেস্টাপো বাহিনীর হাত থেকে ৫৬টি ইহুদি পরিবারকে রক্ষা করেন।

এপ্রিল ডান (৩৩) একজন প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী।

প্যাট্রিসিয়া এইচ থ্যাচার (৭৯) যিনি ৪২ বছর ধরে চার্চে প্রার্থনা সঙ্গীত গেয়েছেন।

ফ্র্যাঙ্ক গ্যাব্রিন (৬০) একজন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক, যিনি স্বামীর বুকে মাথা রেখে মারা গেছেন।

স্কাইলার হার্বাট, ৫, করোনাভাইরাস মহামারিতে মারা যাওয়া মিশিগানের সবচেয়ে কম বয়স্ক মানুষ।

ফিলিপ কান (১০০) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন। স্প্যানিশ ফ্লুয়ের কারণে যমজ ভাইকে হারিয়েছিলেন এক শতাব্দী আগে।

উইলিয়াম ডি গ্রিক (৫৫), যিনি মানুষের জীবনের গল্পটাকেই সবচেয়ে বেশি জরুরি ভাবতেন।

চার পাতা জুড়ে এভাবেই করোনাভাইরাসে মারা যাওয়াদের পরিচয়, তাদের জীবনের গল্প একটি বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে।

এই তালিকার বিবরণীতে পত্রিকাটি বলছে, ‘এই এক হাজার জন মৃতের সংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ। তাদের কেউই কেবল একটি সংখ্যা নয়। তারা কেবল তালিকার নাম নয়, তারা আসলে--আমরাই।’

নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক ও সাংবাদিকরা গত কয়েকমাসে হারিয়ে যাওয়া মানুষের জীবনের গল্পগুলো প্রকাশ করার ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে ভেবেছেন।

টাইমসের গ্রাফিক্স ডেস্কের সহকারী সম্পাদক সিমোন ল্যান্ডন বলেন, ‘আমরা জানতাম যে এমন কোনো কিছু আমাদের করা উচিত যাতে এর মাত্রাটা অনুভব করা যায়।’

এই উদ্যোগকে তিনি ‘কিছুটা অবসাদ’ থেকে এসেছে বলেও উল্লেখ করেছেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস পুরো যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ মৃতদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালায়। তাদের গল্প সংগ্রহ করে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে মৃত ও  আক্রান্তের সংখ্যা।  টেলিভিশন চ্যানেল ও খবরের কাগজগুলোতে প্রতিদিনই এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষতির মাত্রা বোঝাতে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তকে অভিবাদন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

শীর্ষ দৈনিক পত্রিকাগুলো এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাহসী উদ্যোগ গণমাধ্যমের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ  বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

লেখক ড্যান ব্যারি পত্রিকার ভেতরের পাতায় এ পর্যন্ত মহামারিতে ‘মৃতের সংখ্যা’ নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কল্পনা করুন, নববর্ষের দিনে এক লাখ বাসিন্দার একটা শহর ছিল, যে শহরটি এখন আমেরিকার মানচিত্র থেকে মুছে গেছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Country must be back in business without delay

Amid worker unrest and insecurity in the industrial sector, entrepreneurs and bankers have urged the new administration to focus on rebuilding confidence in the economy.

45m ago