১৫ বছরে মুশফিকের তৃপ্তি, মুশফিকের আক্ষেপ
২৬ মে ২০০৫। ক্রিকেটের তীর্থ লর্ডসের মতো মঞ্চে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল সদ্য কৈশোর পেরুনো মুশফিকুর রহিমের। ধাপে ধাপে সেই কৈশোর পেরুনো সম্ভাবনার আলো এখন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ। ক্যারিয়ারের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দ্য ডেইলি স্টারকে মুশফিক জানিয়েছেন তার তৃপ্তি আর অতৃপ্তির কথা।
২৬ মে ২০০৫। ক্রিকেটের তীর্থ লর্ডসের মতো মঞ্চে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল সদ্য কৈশোর পেরুনো মুশফিকুর রহিমের। ধাপে ধাপে সেই কৈশোর পেরুনো সম্ভাবনার আলো এখন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অন্যতম মূল স্তম্ভ। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দ্য ডেইলি স্টারকে মুশফিক জানিয়েছেন তার তৃপ্তি আর অতৃপ্তির কথা।
দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা মুশফিক ঝলক দেখালেও শুরুতেই দারুণ কিছু করতে পারেননি। কিন্তু ক্রমাগত তার ক্যারিয়ারের গ্রাফ চড়েছে উপরের দিকে। প্রথম পাঁচ বছরকে ছাপিয়ে গেছেন পরের পাঁচ বছর দিয়ে, সর্বশেষ পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতা দিয়ে ছাপিয়ে গেছেন আগের সব কিছুকে। এই সময়ে মুশফিকুর রহিম ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার কল্পনা করাই মুশকিল।
মুশফিকের তৃপ্তি
'বাংলাদেশের মতো জায়গায় তিনটা ফরম্যাট মিলিয়ে অলমোস্ট ১৫ বছর খেলেছি। এটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ততটা সহজ না। কারণ আপনি যদি দেখেন, খুব বেশি কিন্তু কেউ নাই যে এত বছর খেলেছে। হয়তবা আগে ছিল, কিন্তু আগে আমাদের খুব কম খেলা ছিল। আর এখন দেখেন আন্তর্জাতিক বাদ দিলেও বছরে ঘরোয়া বিপিএল, জাতীয় লিগ , বিসিএল সব মিলিয়ে কিন্তু আমাদের ৯-১০ মাস বিরামহীন ক্রিকেট থাকে। এতদিন ফিটনেস রাখা, মেন্টেন করা, ফর্ম ধরে রাখা সব মিলিয়ে আমি মনে করি আলহামুদুলিল্লাহ।'
মুশফিকের আক্ষেপ
'আর আফসোস যদি বলেন, মানুষের ধরণই এমন যত পায়, তত চায়। আমার যদি হাজার কোটি টাকাও থাকে তাহলে মনে হবে আমার যদি আরও থাকত তাহলে ভাল হত। যার মোটামুটি আছে সেও মনে করবে আমার একটা গাড়ি আছে, আরেকটা যদি থাকত। গত ৬-৭ বছরে যা করতে পেরেছে সেটাতে একটু হলেও তৃপ্তি আছে। কিন্তু শুরুটা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে হয়নি।'
'২০১২ থেকে আমি যেভাবে কনভার্ট করেছি এই জায়গাটা তৃপ্তি আছে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম সেটার ফল এখন এসে পাচ্ছি। আশা থাকবে এই ধারাবাহিকতা যদি আমি ধরে রাখতে পারি তাহলে আশা করছি ক্যারিয়ার শেষে বলতে পারব আমি প্রত্যাশার চেয়ে খুশি।'
কোন ঘটনা সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে
'কষ্টের জায়গা কয়েকটা আছে আসলে। ১৫ বছর তো, অনেক উঠানামা ছিল। খারাপ লাগার কথা যদি বলি আমি জাতীয় দলে একবার বাদ পড়েছিলাম সম্ভবত ২০০৯ সালে। ওটা আমার জন্য শিক্ষণীয় সময় ছিল। তখন আমার একটা উপলব্ধি হয়েছিল যে নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে হবে, অনেক জায়গা আছে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। আরেকটা ছিল এশিয়া কাপে আমরা ফাইনালে ২ রানে হেরেছিলাম (পাকিস্তানের কাছে)। অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম এতবড় টুর্নামেন্ট ছিল।'
সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে যা
'আনন্দের ঘটনা বললে, প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এটা আমার কাছে অনেক বড় একটা তৃপ্তি ছিল। শুধু আমার জন্য না। আমি মনে করি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিল। বাংলাদেশের কেউ যে টেস্টে ২০০ তার বেশি করতে পারে এই বিশ্বাসটা দরকার ছিল। আর অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডকে হারালাম এটা অনেক তৃপ্তি ছিল। শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে হারালাম। শ্রীলঙ্কার মাঠে কিন্তু রেয়ার, অন্যান্য দলের জন্যও অনেক রেয়ার জেতা। এই কয়েকটা বলতে পারেন আমার ক্যারিয়ারে মাইলফলকের মতই ছিল।'
পরিসংখ্যানের আলোয় মুশফিক
৭০ টেস্টে ৩৬.৭৭ অড়ে ৪ হাজার ১৩ রান, ৭ সেঞ্চুরি, ২১ ফিফটি। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক তিনি। ২১৭ ওয়ানডেতে ৩৬.৩১ গড়ে ৬ হাজার ১৭৪ রান, ৩৮ ফিফটির সঙ্গে ৭ সেঞ্চুরি। ৮৬ টি-টোয়েন্টিতে ১২০.০৩ স্ট্রাইকরেটে ১২৮২ রান।
প্রথম ৫ বছরে টেস্ট খেলেছেন ২১টা- রান ১১০০, গড়- ২৮.৯৪
পরের ৫ বছর টেস্ট খেলেছেন ২৪টা, রান- ১৪৫৫, গড় - ৩৫.৪৮
শেষ ৫ বছরে টেস্ট খেলেছেন- ২৫টা, রান-১৮৫৮, গড়- ৪৫.৩১
ওয়ানডেতে প্রথম ৪ বছরে- ৭৬ ম্যাচ, ১৩১৯ রান, ২৩.১৪ গড়
গত ১০ বছরে- ১৪২ ম্যাচ, ৪৮৫৫ রান, ৪২.৯৬ গড়, ৭ সেঞ্চুরি
গত ৫ বছরে- ৬৯ ম্যাচ, ২৫০৩ রান, ৪৭.২২ গড়, ৪ সেঞ্চুরি
[মুশফিকুর রহিমের তার ক্যারিয়ারের অনেক গল্প শুনিয়েছেন ডেইলি স্টারকে, জানিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে তার ভাবনা। যে প্রক্রিয়ায় তার অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে শুনিয়েছেন হতাশার কথা। মুশফিকের পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকার ২৯ মে দ্যা ডেইলি স্টারের প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত হবে। ]
Comments