জানাজায় কেউ আসেনি, শুধু এসেছিল ‘মানবিক পুলিশ’

মৌসুমীর জানাজায় অংশ নেয় শুধুই পুলিশ। ছবি: স্টার

করোনা মৃত সন্দেহে তিস্তা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের জানাজায় কেউ আসেননি। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও না। কিন্তু পুলিশ এসেছিল।

তিস্তা নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার, থানায় নিয়ে আসা, জানাজা সবকিছুই করেছে পুলিশ। আসেনি স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ বা জনপ্রতিনিধি।

গতকাল সোমবার ঈদের দিন বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানা চত্বরে পুলিশের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে মৌসুমী আক্তারকে দাফন করা হয়।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ঈদের আগের দিন রোববার রাতে স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বৃষ্টিতে ভিজে উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবর্ধান এলাকায় তিস্তা নদী থেকে পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের মরদেহ অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে। পরে তার পরিচয় খুঁজে বের করা হয়।

দাফন কাজেও পুলিশ ছাড়া কেউ আসেননি জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আদিতমারী ও পাটগ্রাম থানা পুলিশ মেয়ের বাবা ও পরিবারের সদস্যদের মরদেহ নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু মেয়েটির বাবা তা না করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে তাদের অনাগ্রহ প্রকাশ করে। তাই আমরাই থানা চত্বরে জানাজা সম্পন্ন করি। জানাজা শেষে মেয়ের বাবা আসলে তার কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দিয়ে আদিতমারী ও পাটগ্রাম থানা পুলিশ যৌথভাবে দাফন কাজ সম্পন্ন করে।’

মৃত পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তার (২৩) জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে এবং একই উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের সরকারেরহাট এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী। স্বামীর নিগৃহের শিকার মৌসুমী গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

পুলিশ ও মৃতের পরিবার জানায়, জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা ও মাথা ব্যথায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মৌসুমী ২১ মে একটি ট্রাকে চড়ে গাজীপুর থেকে লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথে তার মৃত্যু হলে ট্রাকচালক মরদেহটি রংপুরের তাজহাট এলাকায় রাস্তার উপর ফেলে দেন। পরদিন ২২ মে সকালে তাজহাট থানা পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান। তাজহাট থানা পুলিশ পরে ঠিকানা জানতে পেরে পাটগ্রাম থানা পুলিশের মাধ্যমে পরিবারকে খবর দেয়। মেয়েটির বাবা গোলাম মোস্তফা রংপুর মেডিকেলে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন। কিন্তু বাড়িতে না নিয়ে লাশবাহী গাড়ি চালককে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আঞ্জুমান মফিদুলে মরদেহটি দাফনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু গাড়িচালক এ কাজটি না করে ২২ মে রাতে মরদেহ ফেলে দেয় তিস্তা নদীতে। ২৪ মে রাতে মরদেহটি তিস্তা নদীর ভাটিতে আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধান এলাকায় নদী তীরে আটকে পরে।

মৃত মৌসুমি আক্তারের বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় তিনি মেয়ের মরদেহ গ্রামে নিয়ে দাফন করতে চাননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রতিবেশীদের জানালে তারাও এর অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেন, ‘লাশবাহী গাড়িচালক অপরিচিত। তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। ভাবিনি তিনি আমার মেয়েকে দাফন না করে তিস্তা নদীতে ভাসিয়ে দিবেন। পুলিশ আমার ভুল ভেঙ্গে দিয়েছে। তাই স্থানীয়দের হুমকি উপেক্ষা করে মেয়ের মরদেহ নিয়ে যাই এবং পুলিশের সহযোগিতায় গ্রামেই দাফন করি।’

লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঈদের দিনেও পুলিশকে মরদেহটি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। বৃষ্টিতে ভিজে মরদেহটি উদ্ধার, জানাজা ও দাফন সবকিছুই পুলিশকে করতে হয়েছে। আদিতমারী থানা পুলিশ পালন করেছে মানবিক ভূমিকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মেয়ের বাবা ও পরিবারকে আশ্বস্ত করেছি সকল ধরনের আইনি সহযোগিতা দেওয়ার। গ্রামে কেউ যেন তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে না পারে সেজন্য পুলিশ স্থানীয়দের সচেতন ও সতর্ক করেছে।’

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

1h ago