বরগুনার স্কুলছাত্র হত্যাকাণ্ডে ২০ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ৭
বরগুনার হৃদয় (১৫) হত্যাকাণ্ডে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে বরগুনা সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহত হৃদয়ের মা মোসা. ফিরোজা বেগম। মামলা দায়েরের পর রাত এগারোটায় বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন।
নিহত হৃদয় বরগুনা শহরের চরকলোনি এলাকার চাঁদশী সড়কের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। সে বরগুনা সরকারি টেক্সটাইল ও ভোকেশনালে ইনস্টিটিউটে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
শাহজাহান হোসেন বলেন, নিহত হৃদয়ের ওপর হামলার ঘটনার পরই আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাত জনকে আটক করি। এরপর মঙ্গলবার রাতে নিহত হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আটক সাত জনসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করেন তিনি। আটককৃত সাত জনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়াও এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আসামি করা হয়েছে আরও অজ্ঞাত ১৪-১৫ জনকে।
তিনি আরও বলেন, মামলায় অভিযুক্ত বাকীদেরও গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। যেহেতু এ মামলায় সকল অভিযুক্তদের আমরা এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি, তাই মামলার স্বার্থে তাদের নাম এখনই প্রকাশ করছি না।
গ্রেপ্তার হওয়া সাতজন হলেন- মামলার এক নম্বর আসামি নোমান কাজি (১৮), দুই নম্বর আসামি হেলাল মৃধা (২৬), ছয় নম্বর আসামি সাগর গাজি (১৬), সাত নম্বর আসামি ইমন হাওলাদার (১৮), আট নম্বর আসামি রানা আকন (১৬), ১২ নম্বর আসামি সফিকুল ইসলাম ঘরামি (১৫) ও ১৫ নম্বর আসামি হেলাল ফকির (২১)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী দুজন জানান, বরগুনা সদর উপজেলার গোলবুনিয়া এলাকায় পায়রা নদীর পাড়ে ঈদের দিন বিকেল ৫টার দিকে ঘুরতে যায় হৃদয়। স্থানীয় এক যুবকসহ ১০-১২ জন কিশোর হৃদয়কে লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দেয়। হৃদয় নদীর চর ধরে দৌড়ে পালাতে গিয়ে চোট লেগে পড়ে যায়। এরপর তার ওপর হামলে পড়ে ওই যুবকরা। তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। হৃদয় অচেতন হয়ে পড়লে হামলাকারীরা তাকে নদীর চরে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা হৃদয়কে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নিহার রঞ্জন বৈদ্য বলেন, হৃদয়ের মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা, বমি ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে সকাল ১০টায় তার মৃত্যু হয়।
এ হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, নদীর পাড়ে বেশ কিছু যুবক হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে সাদা পায়জামা ও নীল পাঞ্জাবি পরা এক কিশোরকে ধাওয়া করছে। একপর্যায়ে ধাওয়ার শিকার ওই কিশোর পা পিছলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধাওয়া করা কিশোরেরা চারদিক দিয়ে ঘিরে তার ওপর হামলে পড়ে। লাঠি দিয়ে তাকে উপর্যুপরি পেটাতে থাকে। এতে গুরুতর আহত কিশোর অচেতন পড়ে থাকলে তাকে ফেলে হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যায়।
Comments