‘উচ্চ ঝুঁকি’তে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, সামরিক শক্তি বাড়াবে বেইজিং

ছবি:এপি

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক উচ্চ ঝুঁকির সময় পার করছে। এমনটাই জানিয়েছেন চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওয়েই ফেঙহে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, দুই ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) এর বৈঠকে এনিয়ে আলোচনা হয়।

এনপিসির এক বৈঠকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের সামরিক শক্তি বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন দেশটির শীর্ষ নেতারা।

সেসময় ওয়েই ফেঙহে বলেন, ‘চীনের লড়াকু মনোভাব আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দমন ও নিয়ন্ত্রণের মনোভাব আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। চীন-মার্কিন কৌশলগত দ্বন্দ্ব এখন উচ্চ ঝুঁকির দিকে প্রবেশ করেছে।’

বৈঠকে অন্যান্য সামরিক নেতারা জানান, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে প্রযুক্তির উন্নয়নে চীনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

সেসময় পিএলএ বিমান বাহিনীর অস্ত্র বিভাগের প্রধান ঝু চেং জানান, সাইবার, মহাকাশ, গভীর সমুদ্র এবং জৈবিক ক্ষেত্রগুলিতে চীন ও পশ্চিমের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘নিজেদের উদ্ভাবনী ও বিপ্লবী প্রযুক্তির দ্রুত প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পরামর্শ দিচ্ছি।’

করোনাভাইরাস নিয়ে শুরু থেকেই একে অপরকে দুষছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের শুরু থেকে এই দুই পরাশক্তির মধ্যকার সম্পর্কে নাটকীয়ভাবে অবনতি ঘটেছে।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘নতুন করোনাভাইরাস চীনের তৈরি’ এমন মন্তব্য করে চলছেন। জবাবে পাল্টা আক্রমণ করছে বেইজিং। এমনকি, চীনা গণমাধ্যমে মার্কিন নেতাদের ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি আক্রমণও করা হয়েছে। অন্যদিকে, চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অনুদান বন্ধের নির্দেশ দেন ট্রাম্প।

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আশঙ্কা

এ বছরের শুরুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি সই করেছিল বিশ্ব অর্থনীতির দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

চুক্তির মূল শর্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে চীন আগামী দুই বছরে বর্তমানের চেয়ে ২০০ বিলিয়ন ডলার বেশি মূল্যমানের পণ্য ও সেবা কিনবে এবং মেধাস্বত্ব আইন আরও শক্তিশালী করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়ন না হলে চীনের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে, করোনাভাইরাস মহামারিতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই থমকে গেছে। গত চার মাসে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে চীন।

সামরিক চাপ বৃদ্ধি

করোনাভাইরাস নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপের মধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা বেড়েছে। চীনের ওপর সামরিক চাপ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।        

সিএনএন জানায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও বিমান বাহিনীর বোমারু বিমানগুলো নতুন মিশন হাতে নিয়েছে। তারা ওই অঞ্চলের মিত্র দেশগুলোর পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে সংকেত পাঠিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স গ্লোবাল স্ট্রাইক কমান্ডার জেনারেল তিমোথি রে বলেন, ‘যে কোনো বড় পরিসরে আঘাত করার ক্ষমতা আমাদের আছে। মহামারির মধ্যেও যে কোনো সময়ই অপ্রতিরোধ্য ক্ষেপণাস্ত্র চালানোর মতো সক্ষমতা আমাদের আছে।’

সম্প্রতি গুয়াম প্যাসিফিক আইল্যান্ডে আবারও বোমারু বিমান পাঠাতে শুরু করেছে মার্কিন বিমান বাহিনী।

চীনের নতুন দুই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে চীনা প্রশাসন।

সম্প্রতি চীনের নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের দুই মিসাইল-সাবমেরিন। গবেষকরা বলছেন, জেএল-থ্রি সাবমেরিন দুটি চীনের শীর্ষ আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার নির্দশন। এই দুই সাবমেরিন টাইপ-০৯৪ শ্রেণির।

দেশটির পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) রকেট ফোর্স তৃতীয় প্রজন্মের এসএলবিএমকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। নতুন মিসাইল দুইটি ১২ হাজার কিলোমিটার (সাত হাজার ৪৫০ মাইল) পরিসীমা পর্যন্ত আঘাত করতে সক্ষম। অর্থাৎ চীনা উপকূল থেকে ছোঁড়া হলে এটি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে পারবে।

তাইওয়ান ও হংকং ইস্যুতে নতুন বিবাদ

তাইওয়ান প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি বাড়ছে। অন্যদিকে, তাইওয়ানকে ১৮০ মিলিয়ন ডলারের টর্পেডো (যুদ্ধাস্ত্র) দেওয়ায় ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়েছে বেইজিং।

এদিকে, হংকংয়ের ‘জাতীয় নিরাপত্তা আইন’ চালুর চেষ্টায় বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন।

সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, চীনের জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের অভ্যন্তরীন বিষয়ের ক্ষেত্রে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ মানা হবে না। এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেইজিং কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে সতর্ক করেন লিজিয়ান।

 

Comments

The Daily Star  | English

Large-scale Chinese investment can be game changer for Bangladesh: Yunus

The daylong conference is jointly organised by Bangladesh Economic Zones Authority and Bangladesh Investment Development Authority

2h ago